ইনসাইড থট

বঙ্গবন্ধুর লাশ সাগরে ফেলে দেওয়ার প্রস্তাব করেছিলো তাহের


প্রকাশ: 15/08/2022


Thumbnail

লে. কর্নেল আবু তাহের গোপনে গণবাহিনী গড়ে তুলছিলেন। ডালিম ও নুর তাঁর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন। তাহের ও ডালিমের চিন্তাধারা ছিল একই রকম। তাহের ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থানে সরাসরি অংশ নেননি। তবে ওই দিনই তিনি অভ্যুত্থানকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন।

লে. কর্নেল আবু তাহের মেজর রশিদের অনুরোধে সকাল নয়টায় ঢাকা বেতারকেন্দ্রে যান। সেখানে তিনি খন্দকার মোশতাক আহমদ, তাহেরউদ্দিন ঠাকুর, মেজর ডালিম ও মেজর জেনারেল খলিলুর রহমানকে দেখতে পান। অভ্যুত্থানকারীদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সশস্ত্র বাহিনীর তিন প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন তিনি। তিনি খন্দকার মোশতাককে পাঁচটি প্রস্তাব দেন। প্রস্তাবগুলো ছিল:

১. অবিলম্বে সংবিধান বাতিল করতে হবে;
২. সারা দেশে সামরিক আইন জারি এবং এর প্রয়োগ করতে হবে;
৩. দলনির্বিশেষে সব রাজনৈতিক বন্দীকে মুক্তি দিতে হবে;
৪. বাকশালকে বাদ দিয়ে একটি সর্বদলীয় জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে;
৫. অবিলম্বে একটি গণপরিষদ তথা পার্লামেন্টের জন্য সাধারণ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।

সামরিক শাসন জারির দাবি ছিল তাহেরের একান্ত নিজস্ব। এ বিষয়ে তিনি গণবাহিনীর কেন্দ্রীয় কমান্ড কিংবা জাসদের পার্টি ফোরামের সঙ্গে আলোচনা করেননি এবং এসব প্রস্তাব উত্থাপনের জন্য পার্টি তাকে কোনো ম্যান্ডেট দেয়নি। প্রকৃতপক্ষে এই প্রস্তাব ছিল জাসদের মূলনীতির সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক। বিশেষ করে, সামরিক আইন জারির প্রস্তাবটি বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মধ্য থেকে গড়ে ওঠা যেকোনো সুস্থ রাজনৈতিক দলের জন্যই অপমানজনক এবং প্রগতিশীল রাজনীতির চেতনাবিরোধী। তাহের সব সময় শেখ মুজিবের 'ফ্যাসিবাদী' রাজনীতির বিরোধী ছিলেন এবং তাঁর সরকারের উৎখাত চাইতেন। জাসদও একই দাবি করেছে। কিন্তু জাসদ কখনোই দেশে সামরিক শাসন চায়নি।

খন্দকার মোশতাক আহমদ বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। মেজর রশিদ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে তাহেরকে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করেছিলেন। তাহের যখন দুপুরে বঙ্গভবনে পৌঁছান, ততক্ষণে শপথ অনুষ্ঠান শেষ হয়ে গেছে। তাহের আগস্ট হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত মেজর রশিদসহ সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং সকালে খন্দকার মোশতাককে দেওয়া তাঁর প্রস্তাবগুলো আবার উল্লেখ করেন। আলোচনার একপর্যায়ে তিনি সেনাবাহিনীর উপপ্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমানকে ডেকে নেন। সবাই তাহেরের প্রস্তাবগুলো সময়োচিত বলে একমত হন। দুই দিন পর সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নঈম জাহাঙ্গীর নারায়ণগঞ্জে তাহেরের বাসায় যান পরিস্থিতি সম্পর্কে আঁচ করতে। ১৯৭১ সালে নঈম ১১ নম্বর সেক্টরে তাহেরের সহযোদ্ধা ছিলেন এবং প্রায়ই তাঁর সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ করতেন। তাহের আক্ষেপ করে নঈমকে বললেন, ওরা বড় রকমের একটা ভুল করেছে। শেখ মুজিবকে কবর দিতে অ্যালাও করা ঠিক হয়নি। এখন তো সেখানে মাজার হবে। উচিত ছিল লাশটা বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেওয়া।

১৫ আগস্টের পর গণবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি লিফলেট প্রচার করা হয়। লিফলেটের শিরোনাম ছিল, 'খুনি মুজিব খুন হয়েছে অত্যাচারীর পতন অনিবার্য।

[জাসদের উত্থান পতন: অস্থির সময়ের রাজনীতি]


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭