এডিটর’স মাইন্ড

এবার কি জাতীয় সংসদও দখল করতে চান আমলারা?


প্রকাশ: 09/09/2022


Thumbnail

জাতীয় সংসদের আগামী নির্বাচন হতে আরও দেড় বছর বাকি আছে। কিন্তু ইতিমধ্যে নির্বাচনের ব্যাপারে নানা রকম উদ্যোগ শুরু হয়ে গেছে। যারা প্রার্থী হতে আগ্রহী তারা এলাকায় জনসংযোগ বাড়িয়েছেন এবং বিভিন্ন রকম কর্মকাণ্ডের মধ্যে প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে নিজেদেরকে জানান দিচ্ছেন। আগামী নির্বাচনে ব্যবসায়ী রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি একটি বড় আমলাগ্রুপ অংশগ্রহণে আগ্রহী এবং এজন্য বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় তাদের তৎপরতাও দৃশ্যমান হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, আগামী নির্বাচনে শতাধিক আমলা আওয়ামী লীগের টিকিটে চান। আর এদের মধ্যে বেশিরভাগই অবসরে গেছেন। কয়েকজন এখনো অবসরে যাননি কিন্তু তারা তাদের নির্বাচনী এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। আগামী নির্বাচন যেন তারা করতে পারেন সেজন্য তারা বিভিন্ন রকম দেন-দরবার তদবির করছেন, এলাকাতেও কাজ করার চেষ্টা করছেন। প্রশ্ন উঠেছে যে, আমলারা আস্তে আস্তে রাষ্ট্রের সবগুলো প্রতিষ্ঠান যেভাবে দখল করেছেন আগামীতে কি তারা জাতীয় সংসদও দখল করে নিবেন?

সম্প্রতি জনপ্রতিনিধি আদেশ চ্যালেঞ্জ করে একটি রিট পিটিশন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে। ওই রিট পিটিশনটি হাইকোর্ট এই বলে স্থগিত রেখেছে যে, সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিকে আবেদন করতে হবে। কাজেই, ধরে নেওয়া হচ্ছে যে আরপিও চ্যালেঞ্জ করে ভবিষ্যতে আমলারা একটি সংঘবদ্ধ ভবিষ্যতে আমলারা সংঘবদ্ধভাবে রিট পিটিশন করবে। আরপিওতে ২০০৭ সালে সংশোধনী আনা হয়। তাতে বলা হয় যে, একজন আমলা চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের তিন বছরের মধ্যে নির্বাচন করতে পারবে না। আমলারা যারা নির্বাচনে আগ্রহী তারা বলছেন যে, এটি সংবিধানের মৌলিক অধিকারের সাথে সাংঘর্ষিক। যেদিন থেকে তার অবসরকালীন ছুটি শেষ হয়ে যাবে সেদিন থেকে তিনি একজন সাধারণ নাগরিক। কাজেই, তার নির্বাচন করতে বাধা নেই। এই চিন্তা থেকেই তারা মনে করছেন যে, হাইকোর্টে এই রিট পিটিশনে তারা জয়ী হবেন। এই রিট পিটিশনে জয়ী হোক আর না হোক, অন্তত ১০০ জন আমলা এখন নির্বাচনের মাঠে দৃশ্যমান রয়েছেন।

এদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদ জামালপুর থেকে নির্বাচনের জন্য আগ্রহী বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রীর সাবেক সচিব সাজ্জাদ হোসেনও নির্বাচনের ব্যাপারে তার নির্বাচনী এলাকায় কাজ করছেন। সদ্য অবসরে যাওয়া স্থানীয় সরকার সচিব হেলালুদ্দীন তার নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন বলেও জানা গেছে। এছাড়াও সাবেক সচিব জিল্লার রহমানও নির্বাচন করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। সচিব থেকে সদ্য অবসরে যাওয়া সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিনও নির্বাচনে আগ্রহী এবং তার নির্বাচনী এলাকায় তিনি ঘনঘন যাচ্ছেন। বর্তমানে সংসদ সদস্য এবং অবসরপ্রাপ্ত সচিব মনজুর আহমেদ ফরিদপুর আসনে আবার মনোনয়ন পাওয়ার জন্য চেষ্টা তদবির অব্যাহত রেখেছেন। শেষ পর্যন্ত তিনি মনোনয়ন পাবেন কিনা সেটা যদিও নিশ্চিত নয় কিন্তু নির্বাচনের মাঠে তিনি বেশ ভালোভাবেই রয়েছেন। এছাড়াও সাবেক সচিব মো. আবদুল মান্নান তার কিশোরগঞ্জের নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচন করতে আগ্রহী এবং তিনি এ নিয়ে তার এলাকায় ঘনঘন যাচ্ছেন এবং বিভিন্ন রকম কর্মকাণ্ডে নিজেকে ব্যস্ত রাখছেন।

যারা এখনো অবসরে যান নাই তাদের মধ্যে অনেকে নির্বাচনে তাদের এলাকায় একটি প্রভাববলয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। বিশেষ করে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার তার সিরাজগঞ্জ নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবেই পরিচিত হয়েছেন। তিনি এলাকায় যান। সেখানকার আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ইত্যাদির মধ্যে তার বিশাল কর্মীবাহিনী গড়ে তুলেছেন এবং তিনি অদূর ভবিষ্যতে যে নির্বাচন করবেন এ নিয়ে কারোরই কোনো সন্দেহ নেই। এরকম ভাবে যুবক্রীড়া সচিব মেজবাহউদ্দিনও তার নির্বাচনী এলাকায় যোগাযোগ রাখছেন এবং তিনিও আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে আগ্রহী বলে অনেকেই ধারণা করছেন। চাকরিতে থাকা এবং চাকরি থেকে অবসরের যাওয়া যে সমস্ত সচিবরা নির্বাচনে আগ্রহী তাদের প্রায় ৯০ শতাংশই আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিট চায়। এদের সংখ্যা এখন পর্যন্ত একশোর উপরে। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, বিএনপিপন্থী আমলারাও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সবকিছু দেখে শুনে মনে হচ্ছে যে, যেভাবে আমলারা রাজনীতির মাঠে নামছেন তাতে আগামী জাতীয় সংসদও কি আমলাদের দখলে চলে যাবে?


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭