ইনসাইড পলিটিক্স

২০০৯ সালের পর আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারীদের নিয়েই সন্দেহ


প্রকাশ: 22/09/2022


Thumbnail

একজন ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা, সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকায় বিভিন্ন সহিংসতায় তাকে দেখা গেছে। তাঁর উদ্যোগে আওয়ামী লীগের লোকজন জড়ো হয়েছে এবং বিএনপির দিকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেছে। বনানীতে এই নেতার উদ্যোগে বিএনপির মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচির আগে অবস্থান গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগের কিছু সংখ্যক কর্মী। প্রশ্ন উঠলো, ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা কে? কে তাকে বনানী এবং মিরপুরে বিএনপির কর্মসূচী পণ্ড করার দায়িত্ব দিয়েছিল? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা পেয়েছেন চাঞ্চল্যকর তথ্য। ২০১৪ সালের পর ওয়ার্ড পর্যায়ের এই নেতা আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। টাকা পয়সার জোরে তিনি এখন ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা হয়েছেন। এলাকায় তার প্রভাব প্রতিপত্তি প্রচুর। শুধু এলাকায় না, এলাকার বাইরে বিভিন্ন আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে তার খুব ভালো সখ্যতা গড়ে উঠেছে টাকার জন্য। ব্যবসা-বাণিজ্য করেন, তার বিরুদ্ধে আগেও ছিল নানা রকম চাঁদাবাজির অভিযোগ। তবে এই আওয়ামী লীগের নেতার অতীত পরিচয় চাঞ্চল্যকর। একসময় তিনি জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ২০০৩ সালে ছাত্রদলের নেতা হিসেবে যোগ দেন, তারপর গা ঢাকা দিয়েছিলেন। ২০১৪ সালে এসে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। শুধু এই নেতা একা না, এরকম অনেক আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারীরা এখন আওয়ামী লীগের জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। আওয়ামী লীগ এখন তাদেরকে নিয়ে ব্যতিব্যস্ত এবং সন্দেহের চোখে দেখছে।

সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি যখন রাজপথে আন্দোলন করতে চাইছে তখন বিএনপির সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা হলো আওয়ামী লীগ বাধা দিক, রাজপথ উত্তপ্ত হয়ে উঠুক এবং একটা সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হোক। বিএনপির নেতারাই স্বীকার করেছেন যে, রাজপথ সহিংস না হলে আন্দোলন উত্তপ্ত হবে না। আর আন্দোলন উত্তপ্ত না হলে সরকারও চাপে পড়বে না। এ কারণে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় গতকাল দলের কর্মীদেরকে লাঠিসোটা নিয়ে আসতে বলেছেন। আওয়ামী লীগের নেতারা ঢাকার গত কয়েকদিনে কর্মকাণ্ড গুলোকে বিশ্লেষণ করে দেখছেন যে, কিছু অতি উৎসাহী নেতা বিএনপির ফাঁদে পা দিচ্ছেন। প্রথমে মনে করা হচ্ছিল অতি উৎসাহী কারণে এই কাণ্ড গুলো তারা করছে। কিন্তু পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই সন্দেহ করেছেন এরা বিএনপি-জামায়াতের পৃষ্ঠপোষক। নানা রকম সুযোগ-সুবিধার জন্য বা আওয়ামী লীগকে বিপদে ফেলার জন্য আওয়ামী লীগে যোগদান করেছে। কিন্তু আসলে এরা বিএনপি-জামায়াতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। এই চক্র এখন সক্রিয় হয়েছে।

ঢাকার বিভিন্ন ওয়ার্ডে টাকা দিয়ে নেতা হওয়া যায়, এই কথা সর্বজনবিদিত। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম কিছুদিন আগে এই টাকা দিয়ে কমিটি বাণিজ্যের কথা নিজেই খোলামেলাভাবে বলেছিলেন। কিন্তু সেটির প্রতিরোধ সম্পূর্ণভাবে করা সম্ভব হয়নি। আর ওয়ার্ড কমিটিতে নাম থাকলেও আওয়ামী লীগে এখন ক্রমশ অনুপ্রবেশকারীরা প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার কিছুদিন পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত বেশ সক্রিয় ছিল। কিন্তু ২০১৪ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশের হিড়িক পড়তে থাকে। তবে আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেছেন, ২০০৯ সালেই বিএনপি-জামায়াত সংঘবদ্ধভাবে কিছু ব্যক্তিকে আওয়ামী লীগে প্রবেশ করায়। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, ছাত্রলীগসহ অন্যান্য অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোতেও এরকম অনুপ্রবেশকারীর রয়েছে। এই অনুপ্রবেশকারীরাই আস্তে আস্তে টাকা দিয়ে এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের নানা রকম প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন পদ দখল করে আছে। এই সমস্ত নেতারাই এখন আওয়ামী লীগের জন্য বড় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে আওয়ামী লীগের ত্যাগী, পরীক্ষিত এবং তৃণমূলের কর্মীরা মনে করছেন। এরা সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছেন এবং এদের প্রধান লক্ষ্য হলো বিএনপি যেন আন্দোলনের কর্মসূচি সফল হয় সেই এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা।

এখন প্রশ্ন উঠেছে যে, এই সমস্ত অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করা হবে কিভাবে? এর আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগে যারা অনুপ্রবেশকারী তাদের চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং এরকম একটি তালিকাও প্রণয়ন করা হয়েছিল। এই তালিকা অনুযায়ী ২০০৯ সালের পর বিএনপি-জামায়াত থেকে আওয়ামী লীগ এসেছে তাদেরকে পদ না দিতেও নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশ প্রতিফলিত হয়নি। এখন যখন বিএনপির আন্দোলনের চেষ্টা করছে তখন আওয়ামী লীগের ভেতরে অনুপ্রবেশকারীরা তাদের জন্য সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭