ইনসাইড বাংলাদেশ

কে হচ্ছেন মানবাধিকার কমিশনের নতুন চেয়ারম্যান?


প্রকাশ: 23/09/2022


Thumbnail

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের মেয়াদ গতকাল শেষ হয়েছে। শেষদিনে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম গণমাধ্যমের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন এবং মানবাধিকার নিয়ে কিছু সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দিয়েছেন। সরকার এখন পর্যন্ত নতুন মানবাধিকার কমিশন গঠন করেনি এবং এজন্য প্রক্রিয়াও শুরু করেনি। একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, আগামী সপ্তাহ থেকে সরকার নতুন মানবাধিকার কমিশন গঠনের লক্ষ্যে কাজ শুরু করবে। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান এবং একজন স্থায়ী সদস্য মনোনয়ন চূড়ান্ত করার জন্য স্পিকারের নেতৃত্বে একটি কমিটি করার বিধান রয়েছে। এই কমিটিতে আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি রয়েছেন। কবে এ বৈঠক হবে সে ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে রোববারের মধ্যে বৈঠকের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হবে। নতুন মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কে হচ্ছেন? এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে নতুন মানবাধিকার কমিশন গঠন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন কূটনৈতিক মহলও এই মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কে হচ্ছেন, সে ব্যাপারে আগ্রহী বলে জানা গেছে। সরকারের বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, জাতিসংঘ বাংলাদেশের গুমের বিষয়ে তদন্ত করার জন্য যে স্বাতন্ত্র্য কমিশন গঠন করার প্রস্তাব দিয়েছিলো সেই প্রস্তাবটি সরকার নতুন মানবাধিকার কমিশন গঠনের পরেই বিবেচনা করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মানবাধিকার কমিশনের প্রথম চেয়ারম্যান  হয়েছিলেন ড. মিজানুর রহমান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। তার নেতৃত্বে মানবাধিকার কমিশন শুরুতেই একটা পরিচিতি পেয়েছিল এবং বিভিন্ন মহলে প্রশংসিত হয়েছিল। কিন্তু তারপরই এই মানবাধিকার কমিশন চলে যায় আমলাদের হাতে। প্রথমে রিয়াজুল হক এবং তারপর নাছিমা বেগম মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এই সময় মানবাধিকার কমিশনটি একটি আমলাতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। তাই সরকার নতুন করে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানে কোনো আমলাকে দিবে কিনা এই নিয়ে নানামুখী আলোচনা রয়েছে। তবে সরকারের বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, নতুন মানবাধিকার কমিশনারের ব্যাপারে সরকারের তিনটি বিবেচনা রয়েছে।

প্রথমত, সরকার কোনো অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে এই পদে দিতে চান। বর্তমানে একাধিক আলোচিত এবং যোগ্য বিচারপতি রয়েছেন যারা অবসরে গেছেন এবং এধরনের দায়িত্ব গ্রহণ করতে সক্ষম। এর মধ্যে আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন মানিকের নাম ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। সদ্য অবসরে যাওয়া আপিল বিভাগের বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের নামও বিভিন্ন মহলে শোনা যাচ্ছে। তবে আপিল বিভাগের বিচারপতিকে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান করা হবে নাকি হাইকোর্টের কোনো অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে কমিশনের চেয়ারম্যান করা হবে এটি নিয়েও নানা রকম আলাপ আলোচনা চলছে।

মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দ্বিতীয় বিবেচনায় রাখা হচ্ছে, কোনো সক্রিয় মানবাধিকার কর্মী, শিক্ষক বা পণ্ডিত ব্যক্তি। এরকম ক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় বা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের যারা আইন বিভাগের শিক্ষকতা করছেন এবং মানবাধিকার নিয়ে কাজ করেন এরকম কারো কারো বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে অনেকেই মনে করছেন যে ড. মিজান যেভাবে মানবাধিকার কমিশনকে আলোকিত করেছিলেন, অন্য শিক্ষক যারা মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান হতে পারেন তারা সেভাবে পারবে কিনা- এ নিয়ে সরকারের মধ্যে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। তাছাড়া মানবাধিকার কমিশনের অনেকগুলা প্রশাসনিক কাজ থাকে। মানবাধিকার কমিশনকে সরকারের কাছে আর্থিকসহ নানা রকম বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হয়, এজন্য প্রশাসনিক কাজে দক্ষতা না থাকলে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনে কতটুকু সক্ষম হবে সেটি নিয়েও কারো কারো সংশয় রয়েছে।

দুই দফায় আমলারা ব্যর্থ হলেও মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান সার্বক্ষণিক সদস্য পদে এখন পর্যন্ত আমলারা আশা ছাড়েনি। বরং কয়েকজন আমলা এখনো মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান হতে আগ্রহী এবং আমলাদের মধ্যে একটি গ্রুপ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে সাবেক সচিবদের মধ্য থেকে কাউকে নেয়ার জন্যই আগ্রহী। এক্ষেত্রে অবসরপ্রাপ্ত সচিবদের মধ্যে একাধিক সচিবের নাম আলোচনায় আছে। তাদের মধ্যে সংসদীয় সচিবালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সচিব ড. জাফর আহমেদ খানের নাম অন্যতম আলোচিত। তবে শেষ পর্যন্ত মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কে হবেন, এটি চূড়ান্ত করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, আগামী ৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফেরার আগে এই কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে গঠিত হওয়ার সম্ভাবনা কম।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭