ইনসাইড পলিটিক্স

টালমাটাল জাতীয় পার্টি: আওয়ামী লীগে স্বস্তি, বিএনপিতে হতাশা


প্রকাশ: 23/09/2022


Thumbnail

জাতীয় পার্টির উত্তাপ থামছেই না। বরং ক্রমশ দলটি টালমাটাল হয়ে পড়েছে। সুস্পষ্টভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছে রাজনৈতিক দলটি। মশিউর রহমান রাঙ্গাকে অব্যাহতি দেওয়ার পর ধারণা করা হয়েছিল যে জাতীয় পার্টিতে জিএম কাদেরের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু উল্টো মশিউর রহমান রাঙ্গা সমর্থকরা দলে শক্তিশালীভাবে অবস্থান করছেন বলেই এখন পর্যন্ত প্রতীয়মান হচ্ছে। যার ফলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান যিনি সুশীল সমাজের অত্যন্ত প্রিয়পাত্র জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। অন্তত তিনজন নারী এমপিকে ১৮ কোটি টাকা দিয়ে তিনি জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছেন। এই অভিযোগের পর জাতীয় পার্টিতে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। যদিও জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন যে, এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, মিথ্যা এবং এর পেছনে কোনো তথ্য-প্রমাণ নেই। তবে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে জাতীয় পার্টিতে উত্তরাধিকারের রাজনীতিতে একটি বড় প্রশ্ন সামনে এসেছে। এখন সাদ এরশাদ এবং এরিক এরশাদ দুজনই জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন এবং এই দুইজনের অবস্থানের কারণে জিএম কাদের এবং মুজিবুল হক চুন্নুরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। মজার ব্যাপার হলো, রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির যে কাউন্সিল আহ্বান করেছেন তাকে নেপথ্যে সমর্থন জানাচ্ছেন এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা এরশাদও। রওশন এরশাদ, বিদিশা এরশাদ, সাদ এরশাদ এবং এরিক এরশাদের এই চতুর্ভুজ ঐক্য জিএম কাদেরকে রীতিমতো কোণঠাসা করে ফেলেছে। কারণ, জাতীয় পার্টির কর্মী যারা এরশাদের সমর্থক তারা মনে করছেন যে এরশাদের উত্তরাধিকাররাই যখন জিএম কাদেরকে চান না তখন জিএম কাদের থাকেন কিভাবে। এই সমস্ত ঘটনাগুলো জাতীয় পার্টিকে বিভক্তির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টির বিভক্ত হবে না বরং জিএম কাদেরই আত্মসমর্পণ করবেন।

জাতীয় পার্টির সাম্প্রতিক ঘটনায় আওয়ামী লীগের মধ্যে উৎসাহ সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগ এই ঘটনাকে গভীরে পর্যবেক্ষণ করছে এবং জাতীয় পার্টির মধ্যে যারা আওয়ামী লীগের সমর্থক রয়েছেন তারা প্রতিনিয়ত আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দকে পরিস্থিতি সম্পর্কে আপডেট করছেন। জাতীয় পার্টির পুরোটাই যদি জিএম কাদের নেতৃত্বে থাকত এবং তারা যদি আগামী নির্বাচনে বিএনপির পথ অনুসরণ করে নির্বাচন বর্জনের পথে হাঁটত সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের জন্য একটি বড় বিপদের কারণ হত। তাই আওয়ামী লীগ এখন স্বস্তি পাচ্ছে। আর যাই হোক জাতীয় পার্টিতে জিএম কাদেরের একক কর্তৃত্ব নেই এবং আগামী নির্বাচন থেকে দূরে রাখার মতো পদক্ষেপও জাতীয় পার্টি গ্রহণ করতে পারবে না বলে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করছেন। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে বিএনপির মধ্যে এক ধরনের হতাশা তৈরি হয়েছে। বিএনপির নেতৃবৃন্দ আশা করেছিলেন যে, জাতীয় পার্টিকে যদি নির্বাচন থেকে দূরে রাখা যায় তাহলে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করা সহজ হবে। অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আন্তর্জাতিক মহলের চাপ আওয়ামী লীগ সামাল দিতে পারবে না। সেই বিবেচনা থেকেই জাতীয় পার্টির সঙ্গে একটি গোপন যোগাযোগ রেখেছিল। বিএনপির প্রধান লক্ষ্য হলো আগামী নির্বাচনকে বানচাল করা। সেক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি তাদের জন্য একটি বড় অস্ত্র। সেই অস্ত্রই যখন এখন ভোতা হয়ে গেছে তখন বিএনপির মধ্যে এক ধরনের নৈরাশ্য কাজ করছে। বিএনপি নেতারা মনে করছেন যে, সরকার জাতীয় পার্টি নিয়ে খেলছে। তবে সরকারের একাধিক মন্ত্রী বলছেন যে, জাতীয় পার্টি নিয়ে খেলার কিছু নেই। জাতীয় পার্টি একটি পৃথক রাজনৈতিক দল এবং সেই দলের নেতাকর্মীরাই জাতীয় পার্টির গতিপথ চূড়ান্ত করবে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭