তালের ডোঙ্গা, এক সময় সর্বত্র চোখে পড়ত বরিশাল সহ বিভিন্ন জেলাতে। তাল গাছ দিয়ে তৈরি এই ডোঙ্গা হল বিশেষ ধরণের একটি নৌকা। তবে এখন আর ডোঙ্গা তেমন দেখা যায় না।
একসময় তালের এই বিশেষ নৌকা ছিল গ্রামের লোকজনের যাতায়াতের অন্যতম বাহন। কিন্তু এখন যুগের সাথে তাল মিলিয়ে, নৌকার ভীড়ে হারিয়ে গেছে এই তালের নৌকা। এক সময় প্রত্যকে জেলা উপজেলায় প্রচুর তাল গাছ দেখা যেত, ফলে সেই সময় ডোঙ্গাও তৈরি হতো প্রচুর।
১৫ থেকে ২০ বছর বয়সী একটি তাল গাছ থেকে দুটি ডোঙ্গা তৈরি করা যায়। ডোঙ্গার মাথায় বিভিন্ন নকশাও তৈরি করা হয় । ভালো গাছের ডোঙ্গা ৮-১০ বছর ব্যবহার করা যায় এবং বর্ষা চলে গেলে ডোঙ্গা পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হয়। শ্রাবণ থেকে আশ্বিন মাসে ডোঙ্গা বেশি বিক্রি হতে দেখা যায়।
বরিশালে উজিরপুর উপজেলায় ডোঙ্গা তৈরির কারিগর গোপাল সরকার জানান, তাল গাছের আধিক্যের কারণেই এই অঞ্চলে এক সময় প্রচুর ডোঙ্গা তৈরি হতো। ডোঙ্গা তেরি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন অনেক লোকজন। ডোঙ্গা তৈরি করতে কেউ কারিগর নিয়ে বাড়িতেই তৈরি করে নিতেন তালের ডোঙ্গা।
বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের সাপানি এলাকার আব্দুল লতিফ জানায়, বর্ষার মৌসুমে থেকে শুরু হয়ে প্রায় সারা বছর বিলে ঝিলে পানি থাকত। বাড়ি থেকে হাট বাজারসহ বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াতের প্রধান বাহন ছিল তালের ডোঙ্গা। তিনি আরো বলেন, এ ছাড়াও দুই তিনজনের পারাপার, মাছ ধরা, ধান কাটা, শাপলা তোলা, শামুক সংগ্রহ, বিল বাঁওড় পুকুরে মাছের ঘেরে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হতো তালের ডোঙ্গা। বরিশাল সহ বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল,বিল এলাকায় এখনো খুব অল্প বিস্তর দেখা মেলে ডোঙ্গার। আগেকার দিনে এর ব্যবহার অনেক বেশি চোখে পড়লেও এখন সর্বত্র হারিয়ে গেছে এই ঐতিহ্যেবাহি তালের ডোঙ্গা।
যেমন হারিয়ে গেছে তালের ডোঙ্গা তেমনি পৃথিবী থেকে চলে গেছেন এর মূল কারিগররাও। এটি পরিবেশ বান্ধব ঐতিহ্যবাহী এবং সহজ নৌযান। এ ধরনের নৌযান টিকিয়ে রাখার জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন।