ইনসাইড পলিটিক্স

জাতীয় সরকারের প্রধান জিএম কাদের: নতুন ফর্মুলায় চাঞ্চল্য


প্রকাশ: 29/09/2022


Thumbnail

নির্বাচনের সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার না আওয়ামী লীগ সরকারও নয়, বরং একটি জাতীয় সরকার গঠিত হবে যেই জাতীয় সরকারের এমন একজন ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী হবেন তিনি সংসদ সদস্য অথচ আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না। এরকম একটি ফর্মুলা এখন কূটনীতিকপাড়ায় ঘোরাফেরা করছে। আর এই ফরমুলায় জাতীয় সরকারের প্রধান হিসেবে জিএম কাদেরের নাম বলা হচ্ছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেড় বছরের কম সময় বাকি রয়েছে। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। কিন্তু বিএনপি'র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সাফ জানিয়ে দিয়েছে, সংবিধান অনুযায়ী আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে।

বিভিন্ন কূটনীতিক এবং দাতা দেশগুলো বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে ব্যাপক আগ্রহী। তবে তারা মনে করছে সংবিধানের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করা উচিত হবে না। তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়, বরং একটি অবাধ সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাপারেই জোর দিচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই নির্বাচন যেন শান্তিপূর্ণ হয় সে ব্যাপারেও কথা বলছে। এরকম বাস্তবতায় কূটনৈতিক মহলের কাছে একটি আপোষ প্রস্তাব পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। কারা কিভাবে এই আপোষ প্রস্তাব দিয়েছে সে ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে এই প্রস্তাবে বলা হয়েছে যে, নির্বাচনে একটি জাতীয় সরকার গঠিত হবে, যে সরকারে ১০ জন সদস্য থাকবেন যাদের কেউই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না। বরং তাঁরা একটি নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে শুধুমাত্র নির্বাচন পরিচালনা করবেন। জাতীয় সরকারে আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি অন্তর্ভুক্ত থাকবে, কোনো নির্দলীয় ব্যক্তি থাকবেন না।

জাতীয় সরকারের প্রধান হিসেবে জিএম কাদেরের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। জিএম কাদের এখন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। তিনি সংসদে বিরোধী দলের নেতা হওয়ার জন্য নোটিশ দিয়েছেন। জাতীয় পার্টির মধ্যে তিনি কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছেন। ইতোমধ্যে রওশন এরশাদ কাউন্সিলের জন্য দিন তারিখ ঘোষণা করেছেন। এ নিয়ে জাতীয় পার্টি এখন বিভক্তির দ্বারপ্রান্তে। তবে জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ অবস্থা যাই হোক না কেন, দেশের সুশীল সমাজ এবং কূটনীতিকদের কাছে জিএম কাদের যথেষ্ট আস্থাভাজন ব্যক্তি। সুশীল সমাজ এবং কূটনীতিকরা মনে করেন যে, জিএম কাদেরের মত ব্যক্তিদের রাজনীতিতে আরও বেশি অংশগ্রহণ করা উচিত। এতে আপ্লুত জিএম কাদেরও এখন সরকারবিরোধী বক্তব্যের সোচ্চার হয়েছেন। তিনি সব বিষয়ে এখন সরকারের কঠোর সমালোচনা করছেন, কোনো কোনো ক্ষেত্রে এসব সমালোচনার মাত্রা বিএনপিকেও হার মানাচ্ছে। জিএম কাদেরের সঙ্গে সুশীলদের এখন ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে এমন খবরও বাজারে চাউর আছে।

বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য, হোসেন জিল্লুর রহমানসহ বিভিন্ন সুশীলদের সঙ্গে জিএম কাদেরের আগের চেয়ে অনেক বেশী সখ্যতা তৈরি হয়েছে। বিএনপিও জাতীয় পার্টির ব্যাপারে অনেক বেশি নমনীয়। এমনকি জিএম কাদেরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টিকে ঘিরে বিএনপিরও একটি আন্দোলনের পরিকল্পনা রয়েছে। যদিও জাতীয় পার্টি সরকারবিরোধী আন্দোলন নয় বরং বিভিন্ন রকম সমালোচনামূলক বক্তব্য দিয়েই রাজনীতির মাঠে থাকতে চাইছে। এরকম পরিস্থিতিতে জাতীয় সরকারের যে নতুন ফর্মুলা দেওয়া হয়েছে সেই ফর্মুলা কি উদ্দেশ্যে, এনিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বাংলাদেশে সুশীল সমাজ দীর্ঘদিন ধরেই বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়ায় আগ্রহী এবং রাজনীতিতে একটি স্রোত তৈরি করতে চায়। তৃতীয় স্রোত তৈরি করার জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল কিন্তু সবগুলো উদ্যোগই ভেস্তে গেছে। এখন জিএম কাদেরকে দিয়ে আবার নতুন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কিনা, এ নিয়ে রাজনীতির পাড়ায় নানারকম গুঞ্জন আছে। এখন এই নতুন ফর্মুলা নিয়েও সৃষ্টি হয়েছে চাঞ্চল্য। জিএম কাদের কি তাহলে বিরাজনীতিকরণের তুরুপের তাস হচ্ছেন? এই প্রশ্নই এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে ঘুরপাক খাচ্ছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭