ইনসাইড বাংলাদেশ

মার্কিন রাষ্ট্রদূতের খবরদারি কেন সরকার হজম করছে?


প্রকাশ: 30/09/2022


Thumbnail

মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস একের পর এক বাংলাদেশের বিষয় নিয়ে বক্তব্য রেখে চলেছেন। গত বুধবার আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের (অ্যামচেম) বৈঠকে বাংলাদেশের নির্বাচন, সুশাসন, গণতন্ত্র নিয়ে কথা বলার পর গতকাল তিনি আবার কথা বলেছেন। ‘মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর’ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে তিনি বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘন, র‍্যাব ইত্যাদি নিয়ে বিভিন্ন রকম কথা বলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে ‘মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এখানে পিটার ডি হাস বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অনেক মন্তব্য করেন। বাংলাদেশে বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) এবং জার্মান গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফ্রেডরিক-এবার্ট-স্টিফটুং এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এই অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে তিনি যেভাবে খবরদারি করেছেন তাতে অনেকেই বিস্মিত।

আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক শুধু বলেছেন যে, বাংলাদেশের ব্যাপারে জেনে বুঝে তথ্য নিয়ে কথা বলা উচিত। আইনমন্ত্রী এটিও বলেছেন যে, তিনি যে সমস্ত বক্তব্যগুলো রাখছেন তা সঠিক নয়। অন্যদিকে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক সম্প্রতি বলেছেন যে, সব রাষ্ট্রদূত মিলে তত্ত্বাবধায়কের দাবি করলেও এ দাবি মেনে নেয়া হবে না।  কিন্তু কতগুলো মৌলিক প্রশ্ন সরকার এড়িয়ে যাচ্ছে। একজন রাষ্ট্রদূত একজন যুগ্ম-সচিব পদমর্যাদার পদ। একজন রাষ্ট্রদূত এসে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে এ ধরনের কথাবার্তা বলতে পারেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বাংলাদেশে ২০০৮ সালের আগে মার্কিন রাষ্ট্রদূতদের এরকম খবরদারি দৃশ্যমান ছিল। বিশেষ করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার নিয়ে তারা সরাসরি খোলামেলা কথাবার্তা বলতেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনীতিবিদদের সঙ্গে তারা দেখা-সাক্ষাৎ করতেন এবং রাজনীতিবিদরা মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাথে দেখা করতে গিয়ে ধন্য হয়ে যেতেন। মার্কিন রাষ্ট্রদূত যেন সরকারের ওপর সরকার। তার সঙ্গে সাক্ষাৎ পাওয়াটাই যেন অনেকের কাছে সৌভাগ্যের ব্যাপার প্রতিপন্ন হত। কিন্তু ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর আস্তে আস্তে দেশকে আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তুলেন এবং পাশাপাশি বিদেশিদের খবরদারি বন্ধের জন্য লাগাম টেনে ধরেন। আর তার এই দক্ষ কূটনীতির কারণেই মার্কিন রাষ্ট্রদূতদের বেপরোয়া কথাবার্তা খানিকটা বন্ধ হয়। এই সময় যে সমস্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতরা এসেছিলেন তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে বেশি কথা বলতেন না। এই ধারা চলমান ছিল রবার্ট মিলার পর্যন্ত। কিন্তু মিলারের পর পিটার ডি হাস এসেই যেন কথার বাঁধ ভাঙা জোয়ার শুরু করেছেন। বাংলাদেশের প্রতিটি বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলছেন। জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী একজন রাষ্ট্রদূতের সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়মকানুন এবং শিষ্টাচারের মধ্যে চলতে হয়। কিন্তু পিটার ডি হাস প্রায় ক্ষেত্রেই শিষ্টাচার লঙ্ঘন করছেন বলে অনেকে মনে করছেন। প্রশ্ন উঠেছে যে, মার্কিন রাষ্ট্রদূতের এই ভূমিকা নিয়ে কেন সরকার আপত্তি করছে না? অন্য কোনো দেশের রাষ্ট্রদূতরা সামান্য কিছু করলে তাদেরকে পররাষ্ট্র দপ্তরে তলব করা হয় এবং নানা রকম বিষয়ে সতর্ক করা হয়। কিন্তু মার্কিন রাষ্ট্রদূতের ক্ষেত্রে এটা করা হচ্ছে না কেন?

কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, বিশ্ব বাস্তবতার কারণে এটা সম্ভব হচ্ছে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের প্রধান দাতা না হলেও অনেক কিছুর জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর বাংলাদেশ নির্ভরশীল। সাম্প্রতিক সময়ে র‍্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে যদি তলব করা হয় বা তাকে যদি সতর্ক করা হয় তাহলে ভবিষ্যতে হয়তো এই সমস্ত প্রতিহিংসামূলক ব্যবস্থাগুলো আরও বাড়বে। তাছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব রাজনীতির অন্যতম নিয়ন্ত্রণ সংস্থা। এরকম কোনো পদক্ষেপ নিলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি পাল্টা ব্যবস্থা নেয়, সেটা বাংলাদেশের জন্য বিপদজনক হতে পারে। তাছাড়া রপ্তানি বাণিজ্য বিশ্ব ব্যাংক আইএমএফ এর ওপর নির্ভরশীলতা এবং জাতিসংঘের শান্তি মিশনে সবকিছুর জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর বাংলাদেশ কিছুটা হলেও নির্ভরশীল। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ কোনো আগ্রাসী কূটনীতিতে যেতে চায় না। বরং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই বক্তব্যগুলো হজম করে কৌশলে যুক্তরাষ্ট্রকে সীমারেখার মধ্যে থাকার নীতি নেই সরকার এগুচ্ছে বলে সরকারি সূত্রগুলো বলছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭