ইনসাইড পলিটিক্স

কর্মীদের প্রশ্ন, বিএনপি নেতাদের মামলা থেমে আছে কেন?


প্রকাশ: 30/09/2022


Thumbnail

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার বিরুদ্ধে ৭৭টি মামলা রয়েছে। সবগুলো মামলায় তিনি জামিনে রয়েছেন। কোনো মামলার কার্যক্রমে এগোয় না। তিন মাস, ছয় মাসে তিনি একবার কোর্টে যান, হাজিরা দেন। তার জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়। তিনি আবার ফিরে আসেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের তিনটি মামলা রয়েছে। দুটি মামলায় চার্জশিট হয়েছে। সবগুলো মামলা ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় করা। কিন্তু একটি মামলায়ও এখন পর্যন্ত রায় হয়নি। মামলাগুলো এখন হিমাগারে রয়েছে। বিএনপির আরেক নেতা মির্জা আব্বাস। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলা চলমান। সেই মামলাগুলোতে তিনি জামিন নিয়ে আছেন। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে আরও ৩৭টি বিভিন্ন রকম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মামলা রয়েছে। সেই মামলাগুলোর কোনো হদিস নেই। এই যখন বিএনপি নেতাদের অবস্থা তখন কর্মীদের অবস্থান সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিএনপির কর্মীরা এখন ঘরে থাকতে পারছেন না। প্রতিদিন কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশি হচ্ছে। গত এক মাসে ঢাকা মহানগরীতে বিএনপির অন্তত ৩০০ জন কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে ঢাকা মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণের নেতারা দাবি করেছেন। বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ এবং মিছিল করার প্রেক্ষিতে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ অ্যাকশন নিচ্ছে। বিএনপির একজন কর্মী বলেছেন, বাড়িতে বাড়িতে পুলিশ তল্লাশি করছে, পুরনো মামলা ধরে তাদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে পুলিশ বিএনপি কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা সচল করেছে, কোথাও কোথাও চার্জশিট দেওয়া হচ্ছে। ঢাকা শহরে বিএনপির অন্তত দুই হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে নানারকম গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ঝুলছে এবং তাদেরকে পুলিশ খুঁজছে।

বিএনপি কর্মীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, নেতাদের মামলা থমকে আছে কেন আর কর্মীদের মামলাগুলো কেন চলমান? তাহলে কি নেতারা সরকারের সাথে আপোষ করেছে? বিএনপি যতই সরকারবিরোধী আন্দোলন করছে তাতেই এই প্রশ্নগুলো বিএনপির কর্মীদের সামনে এসে বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে। বিএনপির কর্মীরা বলছেন নেতারা প্রকাশ্যে আন্দোলন করছে বটে কিন্তু গোপনে তারা সরকারের সঙ্গে এক ধরনের আঁতাত করছে। সরকারের সমঝোতার কারণেই বিএনপি নেতাদের কোনো হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে না, তারা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন, গায়ে বাতাস লাগিয়ে চলছেন এবং প্রকাশ্যে সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করছেন। খুব গোপনে সরকারের সঙ্গে দরকষাকষি করছেন। বিএনপিতে এই বিষয়টি ক্রমশ এখন বড় আকার ধারণ করেছে। বিএনপির কর্মীরা মনে করছেন যে, নেতারা যেকোনো সময়ে সরকারের সাথে সমঝোতা করতে পারে, আন্দোলনের পিঠে ছুরিকাঘাত করতে পারে। কর্মীরাই এখন নেতাদেরকে বিশ্বাস করছেন না। একমাত্র বেগম খালেদা জিয়া দুটি মামলায় দণ্ডিত হয়েছেন। খালেদা জিয়া সরকারের সাথে আপোষ করেননি জন্য মামলায় দণ্ডিত হয়েছেন বলে মনে করেন প্রায় সব বিএনপির কর্মীরা। অন্যদিকে কর্মীদেরকে ধরপাকড় করা হলেও নেতারা এ ব্যাপারে মুখ খুলছেন। না সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি যে সমস্ত সমাবেশগুলো করছে সেখানে শুধুমাত্র বিভিন্ন ঘটনায় যারা নিহত হয়েছেন তাদের কথা বলা হয়। বিএনপির যে সমস্ত কর্মীরা গ্রেপ্তার হচ্ছেন বা পুলিশের হয়রানির শিকার হচ্ছেন তাদের কথা বলা হচ্ছে না। বিএনপির কর্মীরা প্রশ্ন করছেন যে, নেতারা এত বড় বড় কথা বলেও কিভাবে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন? তাহলে সরকার বিএনপির আন্দোলনে বাধা দিচ্ছে বলে যে বক্তব্য প্রচার করা হচ্ছে তা সত্য নয় অথবা সরকারের সঙ্গে এই সমস্ত নেতাদের এক ধরনের রহস্যময় সম্পর্ক রয়েছে।

বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে সরকারের গোপন যোগাযোগের কথা বিএনপিতে খোলামেলাই আলোচনা হয়। একাধিক বিএনপির কর্মীরা মনে করেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অবিশ্বস্ত লোক, আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগের একাধিক মন্ত্রীর সঙ্গে তার নিয়মিত কথাবার্তা হয়, আলাপ-আলোচনা হয়। বিএনপির মির্জা আব্বাস একাধিক ব্যবসা পরিচালনা করছেন এবং সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে তার ওঠাবসা রয়েছে, ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। আবার বিএনপির আরেক নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু সরকারের অনেক মন্ত্রীর অন্দরমহলে যাতায়াত করেন। সবকিছু মিলিয়ে বিএনপির অন্তত ৫ জন নেতা রয়েছেন যাদের ব্যাপারে ক্রমশ বাড়ছে বিএনপি কর্মীদের। আন্দোলন যত ঘনীভূত হবে ততই সন্দেহ বাড়বে এবং বিএনপি কর্মীরা মনে করছেন, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের মতো এই সমস্ত নেতারাই আবার বিভ্রান্তির চোরাগলিতে নিয়ে যাবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭