ইনসাইড আর্টিকেল

এলিট সমাজের প্রবীণ জনগোষ্ঠী, ন্যায়ানুগ দৃষ্টি আছে কি?


প্রকাশ: 01/10/2022


Thumbnail

সমাজে একক পরিবার বাড়ছে। অনেক সময়ই আমরা দেখি কাজের সূত্রে আমরা শহরে পাড়ি জমালেও বাবা মা থেকে যাচ্ছেন গ্রামেই। আবার কখনো কখনো যদিও বা তারা আমাদের সাথেই থেকে যান, কাজের চাপে, প্রতিদিনের কর্মব্যস্ততায় আমরা ভুলে যাই আমাদের পাশের ঘরে থাকা প্রবীণ ব্যক্তিটির কথা। তারাও যে আমাদের কাছে সময় চান, একটু কথা বলার সঙ্গী চান, আমরা ভুলে যাই।

আজ বিশ্ব প্রবীণ দিবস। সার্চ ইঞ্জিনে পাওয়া তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশের ৬০ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সীর সংখ্যা সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১ কোটি ৫৩ লাখ ২৬ হাজার ৭১৯ জন, যা বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৯ দশমিক ২৮ শতাংশ। প্রতিবছর বাংলাদেশের জনসংখ্যায় নতুন করে যোগ হচ্ছেন ৮৫ হাজার নতুন প্রবীণ ব্যক্তি। ধারণা করা হয় যে, এক সময় বাংলাদেশে একদিন শিশুর থেকে প্রবীণদের সংখ্যাই বৃদ্ধি পাবে। ২০৫০ সাল নাগাদ দেশে প্রবীণের সংখ্যা পৌঁছাবে ৪ কোটিতে। এ তো গেল প্রবীণ জনসংখ্যার হিসাব, এখন বলি একক পরিবারের হিসাব। চলতি বছরের বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এর তথ্য মতে বাংলাদেশে পরিবারের সংখ্যা ৪ কোটি ১০ লাখ ১০ হাজার ৫১ জন এবং পরিবারের গড় আকার চার জন। এতেই বোঝা যায় বাংলাদেশে পরিবারের আকার ছোট হচ্ছে। একই চিত্র রাজধানীর বাইরের শহরগুলোতেও, রাজশাহীতে পরিবারের আকার ৩ দশমিক ০৮ জন, রংপুরে ৩ দশমিক ০৯, খুলনায় ৩ দশমিক ০৯, বরিশালে ৪ দশমিক ০১, চট্টগ্রামে ৪ দশমিক ০৪, এবং ময়মনসিংহে এর আকার ৪ জন।

উপরের পরিসংখ্যান দেখে এটা স্পষ্টতই যে বাংলাদেশে একক পরিবার বাড়ছে। আর এই একক পরিবারগুলোতে কতজন প্রবীণ বসবাস করে কিংবা আদৌ তারা থাকে কিনা তা বোঝার উপায় খুব কম। আর তথ্য মতে সরকারি বেসরকারি মিলে বাংলাদেশে বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা রয়েছে ৩২ টির মত। আর এই বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা দেখেই অনুমান করা যায় এদেশের একক পরিবার চিত্রে আসলেই প্রবীণ ব্যক্তিরা স্থান পান কিনা।

প্রবীণদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কখনোই ন্যায়ানুগ নয়। তাই এখনো টিভি বা পত্রিকা খুললে দেখা যায় রাস্তার পাশে নিজ সন্তান তার প্রবীণ পিতাকে কিংবা মাতাকে ফেলে রেখে গেছেন। এই তো চলতি মাসের ৪ই সেপ্টেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক একেএম গালিভ খাঁন সন্তানের ফেলে যাওয়া বৃদ্ধ মাকে সাহায্য করতে গিয়ে পত্রিকার শিরোনাম হলেন, উল্লেখ্য তার কিছুদিন আগেই ছেলের বউয়ের সাথে বনিবনা না হওয়ায় মা মর্জিয়া বেগমকে রাস্তার পাশের একটি পরিত্যক্ত জায়গায় ফেলে গেলে এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে। এ তো শুধু মর্জিয়া বেগমের ছোট্ট একটি গল্প, এমন গল্পে ভরে আছে আমাদের চারপাশ।

কথায় আছে মানুষ প্রবীণ হলে শিশুর মত হয়। আসলেই তা ঘটেও। তাই প্রবীণ ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য ও উদাসীন দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের বদল করা উচিৎ। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হওয়া উচিৎ সেবা পরিচর্যার। পরিবারের প্রবীণ সদস্যকে অক্ষম, অসুস্থ, দুর্বল, পরনির্ভরশীল, বোঝা, উটকো ঝামেলা, বাচাল,না ভেবে আমাদের সকলের উচিৎ তাদের প্রতি আলাদা সেবার দৃষ্টি দেয়া। যারা আমাদের ছোট শিশু থেকে লালন পালন করল আমাদের উচিৎ তাদের শেষ বয়সে শিশুর মত করেই পালন করা। প্রশাসনেরও উচিৎ এদেশকে প্রবীণবান্ধব করে তোলা৷ তাদের জন্য সেবা, নজরদারী,পরিচর্যা এবং নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা।এছাড়া শক্তিশালী করতে হবে সামাজিক বেষ্টনী । এবং ভাবতে হবে প্রবীণ বয়সের স্বয়ংসম্পূর্ণতার কথা।

প্রবীণ জনগোষ্ঠীর কথা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও চিন্তা করেছিলেন। তাইতো তিনি প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সামাজিক নিরাপত্তার লক্ষ্যে সংবিধানে ১৫ (ঘ) ধারা সংযুক্ত করেন (সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার, অর্থাৎ বেকারত্ব, ব্যাধি বা পঙ্গুত্বজনিত কিংবা বৈধব্য, মাতাপিতৃহীনতা বা বার্ধক্যজনিত কিংবা অনুরূপ অন্যান্য পরিস্থিতিজনিত কারণে অভাবগ্রস্ততার ক্ষেত্রে সরকারি সাহায্য লাভের অধিকার)। জাতির পিতার এই চিন্তাকে ত্বরান্বিত করতে ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে তৎকালীন সরকার বয়স্ক ভাতা কর্মসূচি প্রবর্তন করেন।  এছাড়া বয়স্কদের জন্য পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইন, বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, শান্তিনিবাস স্থাপন, জাতীয় প্রবীণ কমিটি গঠন, চাকরিজীবী প্রবীণদের জন্য ভবিষ্যৎ তহবিল, গ্রাচ্যুইটি, কল্যাণ তহবিল, যৌথ বিমার সুবিধাসহ বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়। আওয়ামী লীগ সরকারের এই উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয় তবে খেয়াল রাখতে হবে এই উদ্যোগগুলোরও যাতে যথোপযুক্ত তদারকি ও প্রয়োগের প্রতি লক্ষ্য রাখা হয়। আজ বিশ্ব প্রবীণ দিবসে তাই এতটুকুই কাম্য রইল।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭