ইনসাইডার এক্সক্লুসিভ

জামায়াত থেকে বিএনপি নিয়েছে ৩০০ কোটি টাকা


প্রকাশ: 03/10/2022


Thumbnail

সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি জোটগতভাবে আন্দোলন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই লক্ষ্যে ২২টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছে। প্রথম দফায় সংলাপে যারা যুগপৎ আন্দোলন করতে রাজি হয়েছে তাদের সঙ্গে এখন কর্মসূচি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছে। কিন্তু এই ২২টি রাজনৈতিক দলের তালিকায় বিএনপি জামায়াতকে রাখেনি। এমনকি ২০ দলীয় জোটেও এখন জামায়াত অনুপস্থিত বলে জানানো হয়েছে। গত কিছুদিন ধরে বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্কের মধ্যে টানাপড়েন চলছে। আর এই টানাপোড়েনের মধ্যেই জামায়াতের নেতারা বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। জামায়াতের দুইজন নেতা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছেন যে, বিএনপি বিভিন্ন আন্দোলনের বাহানায় জামায়াতের কাছ থেকে ৩০০ কোটি টাকা নিয়েছে। এই ৩০০ কোটি টাকার মধ্যে ১০০ কোটি টাকা সৌদি প্রবাসী যারা জামায়াত সমর্থক তারা দিয়েছেন, ১০০ কোটি টাকা বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান মাধ্যমে বিএনপিকে দেওয়া হয়েছে, আর ১০০ কোটি টাকা লন্ডনে যে সমস্ত জামাতে নেতাকর্মীরা রয়েছেন তারা তারেক জিয়াকে দিয়েছেন। এই ৩০০ কোটি টাকার হিসেব, কিভাবে টাকা দেওয়া হয়েছে, কার মাধ্যমে টাকা দেওয়া হয়েছে ইত্যাদি বিস্তারিত তথ্য জামায়াত প্রকাশ করবে বলে জানা গেছে। বাংলা ইনসাইডার এ নিয়ে জামায়াতের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন এবং এ ব্যাপারে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন।

সৌদি আরবে জামায়াতের বেশকিছু অর্থদাতা রয়েছেন যাদের যাদের বেশিরভাগই সৌদি নাগরিক এবং সেখানকার প্রভাবশালী ব্যক্তি। এরা বিভিন্ন সংগঠনের নামে প্রতি বছরই জামায়াতকে নিয়মিত অর্থায়ন করে থাকে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের সময় সৌদি আরবে জামায়াতের শুভাকাঙ্ক্ষীরা প্রায় ১৫০ কোটি টাকার তহবিল জোগাড় করেছিল যেন নির্বাচনে চারদলীয় জোট অর্থাৎ বিএনপি-জামায়াত জোট ভালো করে। এই তহবিল থেকে বিএনপিকে ১০০ কোটি টাকা দেওয়া হয় জামায়াতের তৎকালীন আমিরের নির্দেশে। এই টাকা বেগম খালেদা জিয়ার একজন ঘনিষ্ঠ নেতা যিনি সৌদি আরবে ব্যবসা করেন, এখন সৌদি আরবে পলাতক জীবনযাপন করছেন তার কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু এই টাকার প্রায় পুরোটাই বেগম খালেদা জিয়া তার ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন এবং বিদেশেই গচ্ছিত রাখেন। ফলে নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীরা ওই টাকা খরচ করতে পারেনি। ওই নির্বাচনে চারদলীয় জোটের ভরাডুবি হয়, আওয়ামী লীগ তিন-চতুর্থাংশ আসনে বিজয়ী হয়। এই পরাজয়ের পর জামায়াতের নেতা বেগম খালেদা জিয়ার কাছে ওই টাকার ব্যাপারে জানতে চান। তখন খালেদা জিয়া জামায়াতের নেতাকে ভৎসনা করেন বলেও জামায়াতের বর্তমান একাধিক নেতা দাবি করেছেন। এরপর আওয়ামী লীগ সরকার যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করে এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল গঠন করে তখন জামায়াত আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করে। এ নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন জামায়াতের নেতারা। ওই বৈঠকে বেগম জিয়া আশ্বস্ত করেন যে, যদি শেষ পর্যন্ত সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করে তাহলে বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলন করবে এবং যুদ্ধাপরাধের বিচার বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করবে। এই প্রতিশ্রুতির পর বিএনপিকে চার দফায় ১০০ কোটি টাকা দেওয়া হয় এবং এই টাকা পুরোটাই বেগম খালেদা জিয়া গ্রহণ করেন। তার মধ্যে প্রায় ৪০ কোটি টাকা তৎকালীন সময়ে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত বেগম খালেদা জিয়ার পুত্র আরাফাত রহমান কোকোর কাছে হস্তান্তর করা হয় এবং যুদ্ধাপরাধে দন্ডিত জামায়াতের নেতা মীর কাশেমের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় আরাফাত রহমান কোকোর কাছে এই টাকা পাঠানো হয়। এসময় জোবায়দা রহমানের কাছেও ৩২ কোটি টাকা পাঠানো হয় বলে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে যেই টাকাটা সেই সময় জামায়াতের নেতা ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক সরাসরি জোবাইদার কাছে হস্তান্তর করেছিলেন। বাকি টাকা বেগম খালেদা জিয়া আন্দোলনের জন্য রাখেন কিন্তু শেষপর্যন্ত জামায়াতের ভাষায় বিএনপি বেইমানি করে।

তৃতীয় দফায় যখন ২০১৮ সালে নির্বাচন হয় তখন জামায়াতের সঙ্গে তারেক জিয়া আবার যোগাযোগ করেন এবং জামায়াতকে ২০টি আসন দেয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেন। এর বিনিময়ে তিনি ১০০ কোটি টাকা দাবি করেন। জামায়াতের লন্ডনে একটি প্রভাবশালী মহল রয়েছে। তারা বিভিন্ন মসজিদভিত্তিক সংগঠন করে। তারা প্রতি রমজানে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করে জামায়াতের সংগঠনের জন্য দান করে। লন্ডনে জামায়াতের নেতা এবং থিংক-ট্যাংকরা তারেক জিয়ার কাছে ১০০ কোটি টাকা পৌঁছে দিয়েছিলেন নির্বাচনের আগে। সেই টাকার বিনিময়ে তারেক জিয়া জামাতের ২০ জনকে নির্বাচনে প্রার্থী করেন, কিন্তু এই প্রার্থীদের পিছনে বিএনপি নেতারা কোনো কাজ করেনি। ফলে জামায়াতের ওই নির্বাচনে ভরাডুবি ঘটে। জামায়াতের নেতারা দাবি করছেন যে, বিএনপির যখনই টাকার প্রয়োজন হয় তখনই জামায়াতের ওপর নির্ভরশীল হয়। বিএনপি জামায়াতকে আসলে আর টাকার ব্যাংক মনে করে এবং এ কারণেই জামায়াতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখেছিল। এখন যখন দেখছে যে, জামায়াতের আর্থিক অবস্থা সেরকম নেই এবং আগের মত অর্থ জামায়াত দিচ্ছে না তখনই জামায়াতের কাছ থেকে দূরে সরে গেছে। এর পেছনে অন্যান্য কারণ থাকলেও প্রধান কারণ হলো, জামায়াত আসলে বিএনপির চাহিদা মেটাতে পারছে না।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭