ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপি বৈঠক করছে আণুবীক্ষণিক দলগুলোর সাথে: তথ্যমন্ত্রী


প্রকাশ: 03/10/2022


Thumbnail

‘সংলাপের নামে বিএনপি আণুবীক্ষণিক দলগুলোর সাথে বৈঠক করছে’ বলেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

সোমবার (৩ অক্টোবর) দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিমের নিকট থেকে কাউন্সিলের বার্ষিক প্রতিবেদন ২০২১ গ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। প্রেস কাউন্সিলের সদস্যদের মধ্যে শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এমপি, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, দি ডেইলি অবজারভার সম্পাদক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম, দৈনিক জাতীয় অর্থনীতি সম্পাদক এম. জি কিবরিয়া চৌধুরী, বিএফইউজের দপ্তর সম্পাদক সেবিকা রাণী, প্রেস কাউন্সিল সচিব শাহ আলম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

ড. হাছান বলেন, ‘বিএনপি ২০১৮ সালেও ডানপন্থী-বামপন্থী, অতি ডান-অতি বাম সমস্ত দলের সাথে সংলাপ করে একটি বড় ঐক্য করেছিল এবং সেই ঐক্যের ফল হচ্ছে বিএনপির মাত্র পাঁচটি আসন। গতকাল তারা বৈঠক করেছে কল্যাণ পার্টির সাথে। এমন আণুবীক্ষণিক দলের সাথে বৈঠক করে যখন তারা বৃহত্তর ঐক্য গঠন করবে বলে, তখন মানুষ হাসে। কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান আছে, মহাসচিব যে কে আমি জানি না, মির্জা ফখরুল সাহেবও জানেন কি না জানি না। এ ধরণের দলের সাথে বৈঠক কিছু সংবাদ পরিবেশনের জন্য ছাড়া অন্য কিছু নয়।’

সাংবাদিকরা ‘বিএনপির মিছিল সমাবেশ মারমুখী বলে প্রতীয়মান’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির উদ্দেশ্য একটি সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি করা। তারা ২০১৩-১৪-১৫ সালে, ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগে সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি করেছিল, এখনও চেষ্টা করছে। তারা উস্কানিমূলকভাবে তাদের কর্মীদের লেলিয়ে দিচ্ছে পুলিশ এবং জনগণের ওপর। দেখা যাচ্ছে যে, তাদেরই ইটের আঘাতে তাদের বেশ কয়েকজন কর্মী আহত হয়েছে, মৃত্যুবরণও করেছে। তারা এ ধরণের ঘটনা ঘটাবে, নিজেরা নিজেদের কর্মীদের মারবে, মেরে পুলিশের ওপর, সরকারের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করবে।’

‘আমরা আমাদের দলকে সংযতভাবে সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছি, পুলিশও বিএনপির যুদ্ধংদেহী মনোভাব, সংঘাতের অপচেষ্টাকে অত্যন্ত সংযতভাবে মোকাবিলা করছে, কিন্তু তারা যদি এটি অব্যাহত রাখে, জনগণ তাদেরকে আবারও আগে যেভাবে প্রতিহত করেছিল তাই করবে’ বলেন তিনি।

নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূতের মন্তব্য নিয়ে প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘এটি তো নতুন নয়, যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য যারা রাষ্ট্রদূত ছিল তারাও এবং অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রদূতরাও এ নিয়ে কথা বলে। আমরা তাদের সাথে একমত। আমরা স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন চাই এবং এটি শুধুমাত্র সরকারি দলের দায়িত্ব না, এ দায়িত্ব সব দলের। যারা এ নিয়ে বক্তব্য রাখছেন, আশা করি তাদের সেই বক্তব্য বিএনপিসহ যারা সংঘাতময় পরিস্থিতির 'চেষ্টা চালায় তাদের কানে পৌঁছুবে এবং নির্বাচন কমিশনের অধীনে একটি অংশগ্রহণমূলক স্বচ্ছ নির্বাচন করার ক্ষেত্রে তারা সহায়তা করবে। বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা নির্বাচন নিয়ে পরামর্শ দিতে পারেন, সেটি যেন অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের মতো না হয় একইসাথে কূটনৈতিক শালীনতাও যেন লঙ্ঘন না হয়।’

এর আগে প্রেস কাউন্সিল প্রসঙ্গে ড. হাছান বলেন, বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই প্রেস কাউন্সিল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এটির উদ্দেশ্য ছিল পাঠক এবং সংবাদপত্রের মধ্যে যদি কোনো বিরোধ তৈরি হয় সেটি নিষ্পত্তি করা। কোয়াসি-জুডিশিয়াল বডি হিসেবে এটিকে গঠন করা হয়েছিল। সেই ক্ষেত্রে প্রেস কাউন্সিল অনেক গুরুত্বপূর্ণ  ভূমিকা রেখেছে। পাশাপাশি, পঞ্চাশ বছর আগের এ প্রেস কাউন্সিল আইনটিকে যুগোপযোগীভাবে কার্যকর করার জন্য সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন এবং অন্যান্য অংশীজনদের সাথে দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে আলোচনা করে প্রেস কাউন্সিল একটি খসড়া প্রস্তাব দিয়েছে, সেটি মন্ত্রিসভা হয়ে ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে গেছে। এরপর আবারও ভেটিং হবে।

গত ১৩-১৪ বছরে বাংলাদেশে গণমাধ্যমের ব্যাপক বিকাশ ঘটেছে, সেটির সাথে নানাবিধ সমস্যা, জটিলতাও তৈরি হয়েছে, বলেন তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘নিবন্ধন নেই এমন অনলাইন পত্রিকাকে সাংবাদিক নামে পরিচয়পত্র দিতে দেখা যায়, অনেক পত্রপত্রিকা আছে যেগুলো বের হয় না, সাংবাদিকদের নিয়োগ দেয় কিন্তু বেতন দেয় না, সেগুলো আমরা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা শুরু করেছি। অংশীজনদের সাথে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে সাংবাদিকদের একটা ডাটাবেজ তৈরি করার জন্য প্রেস কাউন্সিলকে আমরা অনুরোধ জানিয়েছিলাম। কিসের ভিত্তিতে এই তালিকা হবে তার নীতিমালার খসড়া তৈরি হয়েছে। এই উদ্যোগ আমরা সরকারের পক্ষ থেকে নেইনি। বিভিন্ন সাংবাদিকদের প্রতিষ্ঠান, সমিতি, সংগঠনই এ দাবি উপস্থাপন করেছে। কারণ কিছু মানুষ সাংবাদিক নাম নিয়ে মানুষকে হয়রানি করা ধরণের কাজের সাথে লিপ্ত হয়, আর দোষটা পুরো সাংবাদিক সমাজের ওপর বর্তায়, যেটি ঠিক নয়, সমীচীন নয়।’



এর পরপরই জাতীয় প্রেসক্লাবে সদ্যপ্রয়াত বরেণ্য সাংবাদিক তোয়াব খানের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী। 

এসময় সাংবাদিকদেরকে মন্ত্রী হাছান বলেন, ‘তোয়াব খান বাংলাদেশের ইতিহাসের একজন কিংবদন্তি সাংবাদিক। তার হাত ধরে দেশের বহু প্রথিতযশা সাংবাদিকের জন্ম হয়েছে। তার লেখনী আমাদের দেশ ও জাতিকে উপকৃত করেছে। তার মৃত্যু শুধু সাংবাদিক জগত নয়, পুরো জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। আমরা তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।’

মন্ত্রী বলেন, তোয়াব খান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে চাকরি হারিয়েছেন কিন্তু আপোষ করেননি। মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রে কাজ করেছেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর প্রেস সচিব ছিলেন, প্রধান তথ্য অফিসার ও প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ছিলেন। তার হাতেই পাকিস্তান পরবর্তী দৈনিক বাংলার যাত্রা শুরু। আজ দৈনিক বাংলা সাংবাদিকতায় ‘তোয়াব খান স্মৃতি পদক’ চালু করবে বলে জানিয়েছে, যা তার প্রতি সম্মানের নিদর্শন।'


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭