ইনসাইড পলিটিক্স

তারেক-ইউনূস সমঝোতা: দ্বিকক্ষ পার্লামেন্টের ফর্মুলা!


প্রকাশ: 03/10/2022


Thumbnail

লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার সঙ্গে শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের যোগাযোগ হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এই যোগাযোগের মাধ্যমেই নতুন সংবিধান প্রণয়ন, সংবিধান সংশোধন এবং সংশোধিত সংবিধানে কি কি বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে সে সম্পর্কে ড. ইউনূস সুস্পষ্ট পরামর্শ দিয়েছেন। ইউনূস বিএনপির পাশে আছেন, এমন আশাবাদও জানিয়েছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। তারেক জিয়া এবং ড. ইউনূসের এই সমঝোতার ভিত্তিতেই বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক ড. আসিফ নজরুল সংবিধান নিয়ে নতুন একটি ফর্মুলা উপস্থাপন করেছেন, যে ফর্মুলার সূত্র ধরে এখন বিএনপি নেতারা কথা বলছেন।

ড. আসিফ নজরুল সাম্প্রতিক সময়ে একটি সেমিনারে বর্তমান সংবিধান বাতিল করে নতুন একটি সংবিধান প্রণয়নের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। ওই সেমিনারে তিনি দাবি করেন যে, পৃথিবীতে কোনো সংবিধানের আয়ু ২০ বছরের বেশি নাই। কাজেই বাংলাদেশে এখন একটা নতুন সংবিধান প্রণয়নের যৌক্তিকতা রয়েছে এবং এটি সময়ের দাবি। এই বক্তব্য রাখার পর তিনি আগামী সংবিধানের কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্য সেমিনারে উল্লেখ করেন। এর মধ্যে তিনি বলেছিলেন যে, রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি করতে হবে, সংসদ হতে হবে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট। নিম্নকক্ষে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা থাকবেন এবং উচ্চকক্ষের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষেরা অবস্থান করবেন। আসিফ নজরুলের এই বক্তব্যটি তার একক বক্তব্য ছিল না, বরং এটি সুশীল সমাজের একটি প্রেসক্রিপশন হিসেবে বিবেচিত হয়। সুশীল সমাজে সদস্যরা মিলে ক্ষমতায় তাদের হিস্যা নিশ্চিত করার জন্য এরকম একটি ফর্মুলা দিয়েছে। এমন একটি সংবিধান তৈরি করতে চায় যেই সংবিধানে তারা এমন একটি সরকার কাঠামো রাখতে চায় যেখানে সুশীলদের ক্ষমতার অংশীদারিত্ব থাকবে স্থায়ীভাবে। আর এ কারণেই দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের ভূমিকা দেওয়া হয়েছে। বর্তমান সময়ে বিএনপির যে আন্দোলন সেই আন্দোলনের পেছনে সুশীলদের একটা বড়ই ইন্ধন রয়েছে। আর এই ইন্ধনের কারণ হলো, সুশীলরা মনে করে যে আওয়ামী লীগকে হটাতে পারলে সাময়িক সময়ের জন্য সুশীলদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে সরকারে। এরপর সুশীলরা বিএনপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে দিয়ে সব ক্ষমতার ভাগবাটোয়ারায় তারা তাদের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নিশ্চিত করতে চায়।

আসিফ নজরুলের এই বক্তব্যের পর বিএনপির অন্তত তিনজন নেতা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের কথা বলেছেন। এদের মধ্যে সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা, যিনি তারেক জিয়ার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত তিনি আগামী সংসদ দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট হবে বলে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছেন। বিএনপির আরেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বক্তৃতায় তায় বলেছেন, তারা ক্ষমতায় এলে প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য করবেন। এই ফর্মুলাগুলো যে সুশীল সমাজের তা নিয়ে আর সন্দেহের কোনো অবকাশই নেই। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এই ফর্মুলাই সুশীল সমাজ বিএনপিকে দিয়েছে, বিএনপি এখন সেই ফর্মুলাই বাজারজাত করছে । এর মধ্য দিয়ে সুশীল সমাজের দীর্ঘদিনের মনোবাসনা পূর্ণ হবে।

বর্তমানে বাংলাদেশের সুশীল সমাজের একটি বড় অংশ ব্যাপক সরকারবিরোধী অবস্থানে চলে গেছে। তারা সরকারের বিভিন্ন রকম সমালোচনা করছেন এবং আগামী নির্বাচন নিয়েও তাদের উৎকণ্ঠার অন্ত নেই। শুধু যে সরকারের সমালোচনা করে তারা ক্ষান্ত হচ্ছেন তাই নয়, তারা পাশাপাশি বিএনপিকেও রাজপথে নামানোর ক্ষেত্রে উদ্বুদ্ধ করছেন এবং বিএনপির হাতে বিভিন্ন সমালোচনারও উপকরণ তুলে দিচ্ছেন। এর পেছনে প্রধান কারণ হলো, আরেকটি ওয়ান-ইলেভেনের মতো পরিস্থিতি তৈরি করা। কিন্তু ওয়ান-ইলেভেনের মতো পরিস্থিতি তৈরি করে বেশিদিন ক্ষমতায় থাকা যাবে না, এইজন্যই সুশীলদের এখন নজর সংবিধানের দিকে। বর্তমান সংবিধানকে বন্ধ করে নতুন একটি সংবিধান তৈরি করা এবং সেই সংবিধানে সুশীলদের ক্ষমতার হিস্যা নিশ্চিত করার জন্যই এখন সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব মাঠে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭