ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাপানিজ স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত বলেছেন, কেউ যখন লোন করেন তিনি বিপদে আছেন বলেই লোন করেন। ধরুন আপনি বিপদে পড়েছেন এবং আমার কাছে ঋণের জন্য আসলেন। আমার কাছে আসলেন কারণ আমি মহাজন। এবার আমি কি করবো, আমি আপনাকে বলবো যে, বাজারে তো এখন ১০ থেকে ১২ শতাংশ সুদের হার কিন্তু আপনি আমাকে ৩০ শতাংশ সুদ না দিলে আমি দিবো না। আপনি যদি খুব সমস্যা থাকেন তাহলে আপনি হয়তো বলবেন, ভাই আমি খুব সমস্যায় আছি, আপনি যা চান আমি তাই আপনাকে দিবো।
আইএমএফ এর কাছে ঋণ সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ। সে কার্যক্রম এগিয়ে নিতে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে সফর করছে আইএমএফ এর একটি প্রতিনিধি দল। ইতোমধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। আর্থিক নীতি বিষয়ক একাধিক শর্ত এবং প্রস্তাব দিয়েছে। এ সমস্ত শর্ত এবং প্রস্তাব কতটা যুক্তিসঙ্গত তা নিয়ে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত এসব কথা বলেছেন। পাঠকদের জন্য অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক শান্ত সিংহ।
অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত বলেন, আইএমএফ বা বিশ্ব ব্যাংক যার কথাই বলি না কেন, আমি সেই ঋণের পক্ষে না যে ঋণ আমার আর্থিক নীতি এবং মুদ্রানীতিতে হাত দিবে। আমার আর্থিক নীতি এবং মুদ্রানীতিতে কেউ হাত দিলে আমি ঋণ নিতে চাইবো না এবং নিবোও না। তার কারণ আর্থিক নীতি এবং মুদ্রানীতি আমার সার্বভৌমত্বের প্রতীক। সুতরাং আমার সার্বভৌমত্বে যদি কেউ হাত দেয় আমি তার সাথে লেনদেন করবো না। কিন্তু যদি আমি খুব বিপদে পড়ি হয়তো বা আলোচনা ওই পর্যায় রাখবো যে পর্যায় গেলে আমার সার্বভৌমত্ব নিয়ে কোনো রকম হস্তক্ষেপ করা হবে না।
তিনি বলেন, আইএমএফ ইতোমধ্যে বেশ কিছু শর্ত দিয়েছে। যেমন, ফরেন কারেন্সিসহ সব কিছু বাজারের হাতে ছেড়ে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছে আইএমএফ। সুদের হারও বাজারের হাতে ছেড়ে দিতে বলেছে। বাজার যদি এতো ভালো জিনিস হয় তাহরে বাজার বিকৃতি কেন হয়। আর বাজার যখন বিকৃতি হয় তখন কিন্তু রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হয়। রাষ্ট্র তো একটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা। কিন্তু আপনি সব কিছু যদি বাজারের ওপর ছেড়ে দেন তাহলে রাষ্ট্র তো আর নিয়ন্ত্রক থাকলো না। সেজন্য আমি বাজরের হাতে ছেড়ে দেয়া পক্ষে নই। কারণ বাজরের হাতে ছেড়ে দিলে রাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা থাকবে না। যখন রাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা থাকবে না তখন স্বাভাবিকভাবে সরকারের কোনো ভূমিকা থাকবে না। যা আমার সার্বভৌমত্ব অনুসারে ঠিক নয়। সুতরাং আমি আইএমএফ এর সব কথা শুনতে রাজি আছি কিন্তু আর্থিক নীতি এবং মুদ্রানীতির ওপর হাত দিবে সেটা হতে পারে না। যা আইএমএফ করছে। আমার আর্থিক নীতি এবং মুদ্রানীতির ওপর হাত দেয়া মানে আমার সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত করার সামিল।