লিভিং ইনসাইড

খাদ্যের বিষক্রিয়া থেকে রক্ষা পেতে অর্গানিক খাবার


প্রকাশ: 12/11/2022


Thumbnail

সুস্বাস্থ্যের প্রাথমিক ও প্রধান শর্ত হলো সঠিক খাদ্যাভাস ও পুষ্টিকর খাবার। কিন্তু বর্তমান সময়ে গ্রাম থেকে শহর সবজায়গায় ই মিলছে ভেজাল মিশ্রিত খাবার। শাক-সবজি, মাংস, দুধ, প্যাকেট জাত খাবার, এমনকি ফল, তেল, ডিম সব কিছুতেই মিলছে ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ। গত দুই নভেম্বর যুক্তরাজ্যভিত্তিক দি ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) ‘গ্লোবাল ফুড সিকিউরিটি ইনডেক্স ২০২২’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের সর্বোত্রই ভেজাল খাবার এই চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয় ভেজাল খাদ্যের তালিকায় বিশ্বের ১১৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮০তম।  স্বাস্থ্যকর খাদ্যের খোঁজ পাওয়া যখন প্রায় মুশকিল একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেখানে অরগ্যানিক খাবার হতে পারে বিকল্প। তবে খাদ্যে বিষক্রিয়ার এই যুগে এসে বাজারে প্রাপ্ত অরগ্যানিক খাবারগুলো কি আদৌ বিষক্রিয়া মুক্ত কি না এই বিষয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক অরগ্যানিক খাবার মূলত কী? এর সুবিধা ও অসুবিধা গুলো এবং কীভাবে বুঝবেন অরগ্যানিক খাবার কোনগুলো-  

অরগানিক খাবার কি? 

অর্গানিক খাবার হলো সেইসকল খাদ্য যা কোনোরকম রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ছাড়া সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে উৎপাদিত হয়। এমনকি এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণেও কোন কৃত্রিমতা থাকে না। পাশাপাশি পরিবেশ-বান্ধব এই চাষে ফসল পরিবর্তন, জৈব পেস্ট ইত্যাদির উপর নজর দেওয়া হয়। কৃষি-বাস্তুসংস্থান গত নীতি অনুসারে এই উৎপাদন আমাদের জীববৈচিত্র ও সুন্দর ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্য সুনিশ্চিত করে। ২০১৪ সালে নিউ ক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক প্রমাণ করেন অর্গানিক ফুডের উপকারিতা। তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, সাধারণ সার মিশ্রিত ফসলের চেয়ে অর্গানিক ফসলে কীটনাশকের পরিমাণ এক চতুর্থাংশের চেয়েও কম। বিষাক্ত ধাতব উপাদানও কম। তাই এতে ক্যান্সার প্রতিরোধী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট অনেক বেশি মাত্রায় থাকে। যার ফলে লাভ করা যায় দীর্ঘায়ু। এছাড়া রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার না করার কারণে জমির উর্বরতা ও বজায় থাকে। ফলে ফলন বেশি দিন পর্যন্ত পাওয়া যায়।

কিভাবে বুঝবেন কোন খাবারগুলো অরগানিক? 

কেন্দ্রীয় সরকারের ন্যাশনাল প্রোগ্রাম ফর অরগানিক প্রোডাকশন (NPOP) এর স্বীকৃত কোনো সংস্থার দ্বারা পরীক্ষা করার পর প্রশংসাপত্র সার্টিফিকেট পেয়েছে কি না তা দেখতে হবে। সার্টিফিকেট থাকলে প্যাকেটে ইন্ডিয়া অর্গানিক (INDIA organic) বা USDA organic লোগো থাকবে। অথবা যে সংস্থা সার্টিফিকেট দিয়েছে তার লোগো থাকবে। এছাড়াও রাখতে হবে বাড়তি সতর্কতা, যেমন- 

খাবারের চেহারা: অর্গানিক ফুড এবং রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত খাবার কখনোই দেখতে এক রকমের হবে না। অর্গানিক ফুডে রঙ খুব বেশি গাঢ় হয় না। এটা দেখতে একেবারেই প্রাকৃতিক এবং সতেজ। কিছু কিছু সময় এ ধরনের খাবার হাতে নিলেই এর পরিচিতি পাওয়া যায়।

আকৃতি: হাইব্রিড ফসলগুলো সাধারণত বৃহৎ আকৃতির হয়ে থাকে। তবে অর্গানিক পদ্ধতিতে উৎপাদিত ফলমূল, শাকসবজি এবং অন্যান্য শস্য আকারে বিশাল হবে না। এর স্বাভাবিক হয়ে থাকে এবং ভেতরে পোকার উপদ্রপ থাকে না বললেই চলে।

খাবারের স্বাদ: অর্গানিক ফুডের স্বাদ যে অতুলনীয় হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। যখন আপনি অর্গানিক শাকসবজি রান্না করবেন, আপনি মশলার প্রয়োজনীয়তা কম অনুভব করবেন। কারণ প্রাকৃতিকভাবেই এ ধরনের খাবারের স্বাদ বেশি হয়ে থাকে।

দ্রুত রান্না হয়: কীটনাশকযুক্ত খাবার দীর্ঘ সময় ধরে রান্না করার প্রয়োজন পরে। অপরদিকে অর্গানিক ফুড রান্না করতে তুলনামূলক কম সময় লাগে।

গন্ধ: যেহেতু অর্গানিক ফুড মসলা ও তেল বর্জিত প্রাকৃতিক খাবার, এর গন্ধ সম্পূর্ণই আলাদা ও শক্তিশালী হয়ে থাকে। অপরদিকে অজৈব খাবারে মশলায় তেল ও মসলার প্রচণ্ড ব্যবহারের ফলে একটা পর্যায়ে এর থেকে গন্ধ বের হতে থাকে।

স্বাস্থ্যকর: অর্গানিক খাবার স্বাস্থ্যকর হওয়ায় আপনার হজম প্রক্রিয়াকে আরো সহজ ও দ্রুত করে তোলে। এর ফলে আপনি অ্যাসিডিটি এবং গ্যাস সম্পর্কিত সকল সমস্যা থেকে মুক্তি পান।

চলুন নেওয়া যাক অরগানিক খাবারের কিছু সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে, যা আপনাকে সাহায্য করবে খাদ্য তালিকায় অর্গানিক খাবার যুক্ত করবেন কি না এই সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিতে! প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক অরগানিক খাবারের সুবিধা সম্পর্কে-

অরগানিক খাবারের কোনো ধরনের ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি থাকেনা, যা আপনার শরীরের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন প্রাণীজ খাদ্য যেমন মাছ ও মাংসে দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ মাত্রার এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের ফলে মানুষের শরীরে তা দীর্ঘস্থায়ী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করে। এর ফলে হৃদযন্ত্র, কিডনির কার্যক্রম ও স্নায়ু চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অরগানিক খাবার এইসকল উচ্চ এন্টিবায়োটিক মুক্ত অরগানিক খাবার চাষ করা বেশ পরিবেশবান্ধব। এটি শুধু মানব স্বাস্থ্যের জন্যই না, পরিবেশের জন্যও ইতিবাচক। খাবারের জৈব চাষের প্রবণতা পরিবেশ দূষণ হ্রাস করতে পারে, পানি সংরক্ষণ করতে পারে, মাটির ক্ষয় হ্রাস করতে পারে এবং মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করতে পারে।

খাবার গুলোতে উচ্চ পুষ্টিমান নিশ্চিত হয়  

স্বাদের মান বজায় থাকে 

হৃদরোগের ঝুঁকি কমে কেননা এতে হাইড্রোজেনেটেড চর্বির পরিমাণ প্রায় শূন্য 

এমনকি নবজাতকদের জন্য ও অরগানিক খাবার বেশ স্বাস্থ্যকর

সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে অরগানিক খাবার পছন্দের তালিকায় প্রথমদিকে থাকলেও এর কিছু অসুবিধা ও রয়েছে। বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশে অর্গানিক ফুডের উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্নও উঠছে। বর্তমানে অর্গানিক ফুড সোনার হরিণ। যা বেশিরভাগ সাধারণ মানুষের আয়ত্তের বাইরে। সাধারণ খাবার কিনতেই যেখানে নিম্নবিত্তদের নাভিশ্বাস উঠছে, সেখানে চড়া দামে খাদ্যদ্রব্য কিনে খাওয়া দুঃসাধ্য বটে। তবু খেতে হবে অর্গানিক ফুড। এছাড়াও সব জায়গায় খুঁজে পাওয়া ও মুশকিল। এর মধ্যে বাজারে যে সকল অরগানিক খাবার পাওয়া যায় তা আদৌতে কতটা স্বাস্থ্যসম্মত কিংবা রাসায়নিক ভেজাল মুক্ত তা নিয়েও নিশ্চিন্ত থাকার নেই সুযোগ। এমনকি যেসব খাদ্য সামগ্রী প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে উৎপাদিত বা অর্গানিক বলে বিক্রি হচ্ছে সেগুলো ও ঠিকমত পরীক্ষা করা হয়না খাদ্যের মান পরীক্ষা করার সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন বা বিএসটিআই থেকে। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭