ইনসাইডার এক্সক্লুসিভ

এখনও নাটের গুরু কাইয়ুম: তারেকের ‘ডানহাত’


প্রকাশ: 14/11/2022


Thumbnail

২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ইতালি নাগরিক তাবেলা সিজারকে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডে নাম আসে ‘বড় ভাই’ হিসেবে পরিচিত কাইয়ুমের। পরে তদন্তে কাইয়ুমের সম্পৃক্ততা পায় পুলিশ। আলোচিত ইতালি নাগরিক তাবেলা সিজার হত্যাকাণ্ড মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রধান আসামী তিনি। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, মালয়েশিয়ায় বসেই তাবেলা সিজার এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন এম এ কাইয়ুম। তার দেওয়া নির্দেশমতো এম এ কাইয়ুমের ছোট ভাই এম এ মতিন পুরো কিলিং মিশনের সমন্বয় করেন। মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, একটি স্বার্থান্বেষী মহল অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে পূর্ব-পরিকল্পিতভাবে ইতালির নাগরিক তাবেলা সিজারকে হত্যা করে। এম এ মতিনকে অর্থের যোগানদাতা এবং এম এ কাইয়ুম হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য ব্যক্তি। পুলিশের খাতায় ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ বিএনপির এই নেতা এম এ কাইয়ুম। শুধু তাবেলা হত্যা নয়, জাপানি নাগরিক হত্যায়ও অর্থের জোগান দেন কাইয়ুম। এছাড়াও যাত্রাবাড়ীতে আলোচিত গাড়ি পোড়ানোর মামলাসহ আরও অর্ধশতাধিক মামলা রয়েছে তার নামে। এরপর কাইয়ুম দেশ থেকে পালিয়ে পরিবারসহ মালয়েশিয়ায় যান। সেখান তিনি লন্ডনে যান। সর্বশেষ কাইয়ুম লন্ডনে অবস্থান করছেন এবং বর্তমানে তারেক জিয়ার ‘ডানহাত’ হিসেবে কাজ করছেন। তবে লন্ডন থেকে নিয়মত মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দুবাই যাতায়ত করেন কাইয়ুম।

আশির দশকে তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের রাজনীতিতে যুক্ত হন এম এ কাইয়ুম। এরপর বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হন। পর্যায়ক্রমে বাড্ডা ওয়ার্ড ও গুলশান থানা হয়ে অবিভক্ত ঢাকা মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির জয়ের পর গুলশান, বাড্ডা এলাকায় জমি দখলসহ নানা অভিযোগ ওঠে কাইয়ুমের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলাও হয়েছে। ২০০৪ সালে কমিশনার হওয়ার পর দুই ডজনের বেশি মামলার আসামি এই নেতা বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে রাতারাতি আলোচনায় উঠে আসেন। বাড়তে থাকে তাঁর প্রভাব প্রতিপত্তি। ২০০৪ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ১০ বছর অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের কমিশনার ছিলেন। ওই সময় তিনি নিয়মিত হাওয়া ভবনে যেতেন এবং হাওয়া ভবনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের একটি অংশ ছিলেন তিনি। এরপর ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তাবেলা সিজার হত্যা মামলায় পালিয়ে বিদেশে যান এবং সেখান থেকেই দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া কেন্দ্রীয় ক্ষুদ্রঋণবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বেও রয়েছেন তিনি। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে গুলশান-বাড্ডা আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন কাইয়ুম। একাদশ সংসদ নির্বাচনে কাইয়ুমের আসনে মনোনয়ন দেয়া হয় তার স্ত্রী শামীম আরাকে। ‘নাভিদ উল ওয়ারস’ নামে একটি গার্মেন্টসের চেয়ারম্যান তাঁর স্ত্রী।


বিএনপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায়ই মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম বানিয়েছিলেন কাইয়ুম। আবাসন ব্যবসা ছাড়াও মালয়েশিয়ায় তার অঢেল অর্থকড়ি আছে। এম এ কাইয়ুম স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে হাত মিলিয়ে গড়ে তোলেন আবাসন প্রতিষ্ঠান স্বদেশ প্রোপার্টিজ। এই স্বদেশ প্রোপার্টিজের বেনামি ৪০ ভাগ শেয়ারের মালিক ছিলেন এম এ কাইয়ুম। স্বদেশ প্রোপার্টিজের শেয়ার মালিকানায় দেখা যায়, হত্যা মামলার আসামী বিদেশে পলাতক এম এ কাইয়ুম কারাগারে থাকা ‘গোল্ডেন মনির’ নামে পরিচিত মনির হোসেনের কাছে বেনামি এই শেয়ার বিক্রি করেছেন। আর এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন ওঠেছে, কিভাবে তিনি এই কাজ করেছেন? কারণ, এর মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কটকে ত্বরান্বিত করার একটি নীলনকশা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। জানা যায়, তারেক জিয়ার ‘ডানহাত’ এম এ কাইয়ুম বাংলাদেশের বিভিন্ন কোম্পানিতে ফোন করছেন এবং হুমকি-ধামকির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা বাংলাদেশ থেকে পাচার করে তারেক জিয়ার কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। বর্তমানে বিএনপি যে মহাসমাবেশ করছেন সেই সমাবেশে অর্থ যোগানোর নেপথ্যে নাটের গুরু হিসেবে কাজ করছেন হত্যা মামলার আসামী বিদেশে পলাতক এম এ কাইয়ুম।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭