এডিটর’স মাইন্ড

নতুন রাষ্ট্রপতি: জটিল সমীকরণে আওয়ামী লীগ


প্রকাশ: 18/11/2022


Thumbnail

আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারকে নতুন রাষ্ট্রপতি চূড়ান্ত করতে হবে। নানা কারণেই নতুন রাষ্ট্রপতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নতুন রাষ্ট্রপতি যেমন আসন্ন রাজনৈতিক সংকট মোকাবেলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন, নির্বাচনকালীন সময়ে সাংবিধানিকভাবেই রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা এবং কর্তৃত্ব অনেক বেড়ে যাবে। জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে কে নতুন রাষ্ট্রপতি হবেন, সেটি আওয়ামী লীগের জন্য একটি বড় ধরনের পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় কিভাবে উত্তীর্ণ হয় সেটি এখন একটি বড় প্রশ্ন। নতুন রাষ্ট্রপতি ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে আগামী এপ্রিলে। সংবিধান অনুযায়ী একজন রাষ্ট্রপতি অনধিক দুইবারের বেশি সর্বোচ্চ এই সাংবিধানিক পদে থাকতে পারে না। তাই আবদুল হামিদ আর রাষ্ট্রপতি থাকছেন না। নতুন রাষ্ট্রপতি কে হবেন, এ নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে নানামুখী আলাপ-আলোচনা চলছে। কিন্তু রাজনৈতিক পরিস্থিতি যতই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে ততই রাষ্ট্রপতি পদ নিয়ে আওয়ামী লীগের চিন্তা, পরিকল্পনা এবং ভাবনাগুলোকে পরিবর্তন করতে হচ্ছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। নতুন রাষ্ট্রপতি যিনি হবেন তাকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সরাসরি মোকাবেলা করতে হবে। যদিও রাষ্ট্রপতি পদটি একটি আলংকারিক পদ। কিন্তু নির্বাচনকালীন সময়ে রাষ্ট্রপতির পদ আর আলংকারিক থাকে না, বরং সংবিধানের সর্বোচ্চ পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর হয়ে ওঠে। নতুন রাষ্ট্রপতিকে যে বিষয়গুলোর দিকে নজর রাখতে হবে তার মধ্যে রয়েছে-

১. জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ভাবে ইতোমধ্যেই গুরুত্ব পেয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, সংবিধানের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নতুন রাষ্ট্রপতি যিনি হবেন তাকে রাজনৈতিক সমঝোতার ক্ষেত্রে একটা দৃশ্যমান উদ্যোগ নিতে হবে। পশ্চিমা দেশগুলো বারবার করে বলছে যে, আগামী নির্বাচন হতে হবে অংশগ্রহণমূলক এবং অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ এবং সব দল যেন অংশগ্রহণ করে তা নিশ্চিত করতে হবে। এরকম পরিস্থিতিতে এমন একজন রাষ্ট্রপতি দরকার যিনি জাতীয়ভাবে একজন অভিভাবক সমতুল্য এবং তার ইমেজ সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য। এরকম একজন ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগকে চূড়ান্ত করতে হবে যিনি সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হিসেবে আস্থার জায়গায় থাকেন।

২. সুষ্ঠু নির্বাচন: নির্বাচন সুষ্ঠু করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। বিশেষ করে এবারের নির্বাচন নিয়ে নানারকম টানাপোড়েন হবে বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। অনেকের মতেই এবারের নির্বাচন ২০১৪ বা ২০১৮ সালের মত করা যাবে না। সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি হিসেবে যিনি হবেন তার একটা বড় ভূমিকা থাকবে।

৩. আন্তর্জাতিক মহলের গ্রহণযোগ্যতা: রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের অভিভাবক. কাজেই নির্বাচনের সময় আন্তর্জাতিক মহল তাদের বিভিন্ন প্রশ্ন, বিভিন্ন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা জানাতে চাইবেন রাষ্ট্রপতির কাছে। সেজন্য এমন একজন ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নিতে হবে যিনি আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্য এবং শ্রদ্ধার পাত্র। এটি যদি নিশ্চিত করা না যায় তাহলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নানারকম সঙ্কট এবং বিপর্যয় তৈরি হতে পারে।

৪. আস্থাভাজন ব্যক্তি: রাষ্ট্রপতি নিয়ে আওয়ামী লীগের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ বিচারপতি শাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি করেছিল এবং সেই অভিজ্ঞতা আওয়ামী লীগের জন্য খুব সুখের নয়। কাজেই সংকটকালীন সময়ে যিনি একদিকে নিরপেক্ষ থাকতে পারেন, অন্যদিকে দৃঢ় অবস্থান নিতে পারেন, পক্ষপাতের উর্ধ্বে থেকে সংকট মোকাবেলা করার ক্ষমতা সম্পন্ন একজন ব্যক্তি হওয়া দরকার। আর একারণেই রাষ্ট্রপতি পদে রাজনৈতিকভাবে অভিজ্ঞ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য এবং একজন সকলের কাছে আস্থাভাজন ব্যক্তিরই হওয়া উচিত। তেমন ব্যক্তি খুঁজে বের করাটা আওয়ামী লীগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭