ইনসাইড পলিটিক্স

১০ ডিসেম্বর কি জলিলের ট্রাম্পকার্ড হতে যাচ্ছে?


প্রকাশ: 24/11/2022


Thumbnail

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আব্দুল জলিল। ২০০৪ সালে আকস্মিকভাবে তিনি ঘোষণা করলেন ৩০ এপ্রিলের মধ্যে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পতন ঘটবে। কিভাবে ঘটবে, কেন ঘটবে তার কোনো বিশদ ব্যাখ্যা তিনি দেননি। তিনি শুধু বলেছিলেন যে, তার কাছে ট্রাম্পকার্ড আছে। ৩০ এপ্রিল এই ট্রাম্পকার্ড দেখানো হবে। এর ফলে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পতন ঘটবে। সেই সময় বিএনপি-জামাত জোটের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিলো সংসদে। দেশের পুরো নিয়ন্ত্রণ, কর্তৃত্ব ছিল হাওয়া ভবন এবং বেগম খালেদা জিয়ার কাছে। তারপরও আব্দুল জলিল কেন এই ট্রাম্পকার্ড তত্ত্ব হাজির করেছিলেন, তা নিয়ে রাজনীতিতে এখনও নানা বিতর্ক রয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পকার্ড তত্ত্ব একটি কৌতুকে পরিণত হয়েছিল। ৩০ এপ্রিল বিএনপির পতন ঘটেনি। বরং বিএনপি নেতারা এ নিয়ে আওয়ামী লীগকে নানারকম বিদ্রূপাত্মক মন্তব্য করেছিল। এতো বছর পর আবার যেন আব্দুল জলিলের ট্রাম্পকার্ড তত্ত্ব ফিরে আসছে রাজনীতিতে। ১০ ডিসেম্বর নিয়ে রাজনীতিতে মাতামাতি করছে ১৬ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি। বিএনপি নেতারা বলছেন, ১০ ডিসেম্বরের পর সরকারের কর্তৃত্ব দেশে থাকবে না, খালেদা জিয়ার কথায় দেশ চলবে। এখন তারা বলছেন, ১০ ডিসেম্বরের পর দেশে এক দফার আন্দোলন শুরু হবে। আবার বিএনপির কোনো কোনো নেতা বলছেন, ১০ ডিসেম্বর সরকারের পতন ঘণ্টা বাজবে। এরপর সরকারের পতন হবে সময়ের ব্যাপার মাত্র। বিএনপি নেতারা কেন, কোন যুক্তিতে এই কথা বলছেন তার কোনো ব্যাখ্যা দিচ্ছেন না।

বিএনপি দীর্ঘ ১৬ বছর ক্ষমতার বাইরে। ক্ষমতার বাইরে থেকে বেশ কয়েকটি বড় ধরনের আন্দোলন করার চেষ্টা করেছিল। সেই চেষ্টাগুলোয় একে একে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। ২০১৩ সালে বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু সেই আন্দোলন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। তাদের জ্বালাও-পোড়াও, হঠকারিতা মানুষ প্রত্যাখ্যান করে। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় বিএনপির বাধা সত্বেও। ওই নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদ তার পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ করে। ওই সংসদের প্রথম বছর পূর্তি উপলক্ষে আবার বিএনপি সরকার পতনের ডাক দেয়। বেগম খালেদা জিয়া অবস্থান গ্রহণ করেন গুলশানে তার কার্যালয়ে। তিনি ঘোষণা দেন যে, সরকারের পতন ছাড়া তিনি ঘরে ফিরবেন না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সরকারের পতন ঘটেনি। বিএনপি যে অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য অবরোধের ডাক দিয়েছিল সেই অবরোধও তারা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহার করার সুযোগ পায়নি। বিএনপির সেটিই ছিল শেষ আন্দোলন। এরপর আন্দোলনের মাঠে বিএনপিকে আর পাওয়া যায়নি।

তবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিভিন্ন সময় আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। তখন তিনি বলেছিলেন যে, ঈদের পর আন্দোলন হবে। কখনও তিনি বলেছিলেন যে, শীঘ্রই সরকার পতনের আন্দোলন করবে। এরকম বারবার ঘোষণার পর ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি দলীয় সরকারের অধীনে অংশগ্রহণ করে এবং ওই নির্বাচনে শোচনীয় ভরাডুবি ঘটে বিএনপির। এখন বিএনপি নতুন করে আন্দোলনের চেষ্টা করছে এবং প্রথমবারের মতো বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে আশার আলো দেখা যাচ্ছে। তাঁরা যে বিভাগীয় সমাবেশগুলো করছে সেখানে লোকসমাবেশ তাদেরকে চমকিত করেছে, বিস্মিত করেছে এবং অতি উৎসাহিত করেছে বটে। আর এখান থেকেই বিএনপি এখন সরকার পতনের স্বপ্ন দেখছে। বিএনপি নেতারা বলছেন যে, ১০ ডিসেম্বরের পর সরকারের অস্তিত্ব থাকবে না। তবে ১০ ডিসেম্বরের আগে থেকেই বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন যে, সরকারের বিদায় ঘণ্টা বেজে যাচ্ছে, তারা পালানোর পথ পাবে না ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু একটি সরকারের পতনের জন্য যে ধরনের আন্দোলন দরকার সেই আন্দোলনের ধারে কাছেও বিএনপি নেই। কয়েকটি সমাবেশ করে সরকারের পতন যদি ঘটানো যেত তাহলে পৃথিবীতে কোনো দেশেই কোনো গণতান্ত্রিক সরকারের টিকতো না। তাই আগামী ১০ ডিসেম্বর দেশে কি হবে, তা নিয়ে রাজনীতিতে এখন কৌতুক শুরু হয়েছে। ১০ ডিসেম্বর কি আব্দুল জলিলের মত আরেকটি ট্রাম্পকার্ড দেখবে দেশের মানুষ? ১০ ডিসেম্বর কি রাজনীতিতে আরেকটি প্রহসন মঞ্চস্থ হতে যাচ্ছে? এটিই এখন দেখার বিষয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭