ইনসাইড পলিটিক্স

রংপুরে কি আওয়ামী লীগ জাপার মান ভাঙ্গাবে?


প্রকাশ: 24/11/2022


Thumbnail

আগামী ২৭ ডিসেম্বর রংপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই নির্বাচন উপলক্ষে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ সাবেক এমপি এডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়াকে মনোনয়ন দিয়েছে। ডালিয়ার এই মনোনয়ন লাভ রংপুরে আওয়ামী লীগের মধ্যে শুধু নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেও বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। আওয়ামী লীগের রংপুরের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ এই মনোনয়নে শুধু বিস্ময় নয়, তারা হতবাক হয়েছেন। তবে প্রকাশ্যে তারা এ নিয়ে কেউ কিছু বলছেন না। এই নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে থাকছেন মোস্তাফিজুর রহমান। জিএম কাদের তাকে সমর্থন দিয়েছেন। ইতোমধ্যেই রওশন এরশাদের পক্ষেও একজন মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। তবে জাতীয় পার্টির নেতারা বলছেন শেষ পর্যন্ত মুস্তাফিজুর রহমানই জাতীয় পার্টির প্রার্থী হবে। আর এই নির্বাচনের যেন জাতীয় পার্টির নিরাপদ এবং বিজয় নিশ্চিত হয় সেজন্যই আওয়ামী লীগ ডালিয়াকে প্রার্থী দিয়েছে বলে রংপুরের কোন কোন রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন। কারণ ডালিয়া রংপুর কেন্দ্রিক আওয়ামী লীগে কখনোই জনপ্রিয় নয় এবং রংপুরে তার পরিচিতির ব্যাপ্তী খুবই কম। তিনি এক সময় সংরক্ষিত নারী কোটা থেকে এমপি হয়েছিলেন বটে। কিন্তু নির্বাচনের রাজনীতিতে তিনি কখনোই গুরুত্বপূর্ণ ছিলেন না। আর ডালিয়ার মতো অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রার্থীকে দেওয়ার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানকে এক ধরনের ওয়াকওভার দিল বলে বিভিন্ন মহল মনে করছেন।

উল্লেখ্য যে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির গত কিছুদিন ধরেই টানাপোড়েন চলছে। এই টানাপোড়নের অংশ হিসেবেই জাতীয় পার্টির জাতীয় সংসদে সরকারের কঠোর সমালোচনা করছে এবং সংসদের বাইরে জিএম কাদের সরকারকে কঠোর ভাষায় আক্রমণ করেছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মুখ বন্ধ করা আপাতত সম্ভব হয়েছে। তিনি এখন রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে কথা বার্তা বলতে পারছেন না। কিন্তু তা স্বস্তেও জাতীয় পার্টির মধ্যে একটি সরকার বিরোধী অবস্থানে রয়েছে। এমনকি এরকম শঙ্কা দেখা দিয়েছে, আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি অংশগ্রহণ করবে কি করবে না। কেউ কেউ মনে করছে জাতীয় পার্টির সাথে বিএনপির গোপন যোগাযোগ করেছে। এবং বিএনপির সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করলে জাতীয় পার্টিও একযোগে সংসদ থেকে পদত্যাগ করতে পারে এমন কথা শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জাতীয় প্রার্থীর ভাগ্য কোর্টে ঝুলে আছে। 

জাতীয় পার্টিকে বশে আনার জন্য সরকার রওশন এরশাদকে মাঠে নামিছে। রওশন এরশাদ আগামী রোববার দেশে ফিরছেন। কিন্তু জাতীয় পার্টির বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে দলের ভেতর রওশন এরশাদের ভিত্তি তেমন মজবুত নয় এবং তিনি এখন দলের ভেতরে তেমন কোন প্রভাব বিস্তার করতে পারছেন না। তাছাড়া রওশন এরশাদের বিরোধী দলীয় নেতার পদটিও টলটলায়মান। ইতোমধ্যে ২৩ জন জাতীয় পার্টির এমপি স্বাক্ষরিত চিঠি দিয়ে স্পিকারকে জিএম কাদেরকে সংসদে বিরোধী দলের নেতা হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার দাবি করেছেন। এবং এই দাবিতে জাতীয় পার্টি একদিন সংসদও বয়কট করে। পরে স্পিকারের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে তারা সংসদে ফিরে আসে। স্পিকার তাদেরকে মানবিক কারণে ধৈর্য ধরার অনুরোধ করেন। কারণ রওশন এরশাদ যে ব্যাংককে চিকিৎসা করেছেন সেই চিকিৎসা সমস্ত ব্যয় ভার সরকার বহন করছে। তিনি যদি বিরোধী দলের নেতা না থাকেন তাহলে সেই চিকিৎসার ব্যয়ভার সরকারের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। এই প্রেক্ষিতে রওশন এরশাদের জন্য ছাড় দিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। এখন রওশন এরশাদ দেশে ফিরলে তাকে বিরোধী দলের নেতার পদ ছাড়তে হবে বলেই মনে করছেন বিভিন্ন মহল। সবকিছু মিলিয়ে জাতীয় পার্টিতে যে টানাপোড়েন চলছে এই টানাপোড়েন মীমাংসা করার জন্যই রংপুরে মাঠ আওয়ামী লীগ ছেড়ে দিল কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭