ইনসাইড আর্টিকেল

“আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ” দিবস আজ


প্রকাশ: 25/11/2022


Thumbnail

আমরা এমন একটি সমাজে বাস করি যেখানে ‘মেয়ে’, ‘নারী’, ‘মহিলা’ এই শব্দগুলো ব্যবহার করা হয় তাচ্ছিল্য করা অর্থে। ‘মেয়েমানুষ’ কথা কম বলেন, ‘মেয়েমানুষ’ চুপ থাকেন, ‘মেয়েমানুষ’ কিছু বোঝেনা, ‘মেয়েমানুষ’ নিজের সম্মানের কথা ভাবো, সহ্য করো, চুপ থাকো, ঘুরে ফিরে এই কথাগুলোই শুনতে হয় বারবার।

যেই সমাজে নারীকে বারবার চুপ থাকার কথা বলা হয় সেই সমাজে নারীরা তাঁদের নিজেদের অধিকারের বিষয়ে কিংবা নিজেদের সাথে ঘটে যাওয়া সহিংসতার বিষয়ে প্রতিবাদ করবে কতটুকু?

নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ নিয়ে আন্দোলন চলছে সেই আদিকাল থেকে। নারীর প্রতি সহিংসতা বলতে নারীর উপর মানসিক, শারিরীক, পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সবধরণের নির্যাতন ও নিপীড়নকে বোঝায়। 

আজ ২৫শে নভেম্বর সারাবিশ্বে পালিত হচ্ছে “আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ” দিবস। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ১৯৮১ সালে লাতিন আমেরিকায় নারীদের এক সম্মেলনে ২৫ নভেম্বরকে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালে ভিয়েনায় বিশ্ব মানবাধিকার সম্মেলন দিবসটিকে স্বীকৃতি দেয়। এবং জাতিসংঘ এই দিবসটি পালনের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয় ১৯৯৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর। এই দিবসটি পালনের মূল উদ্দ্যেশ্য হচ্ছে নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ করা।

এই দিবস পালনের পেছনে রয়েছে এক হৃদয়স্পর্শী ঘটনা। ১৯৬০ সালের ২৫ নভেম্বর লাতিন আমেরিকার দেশ ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রের স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন করার জন্য প্যাট্রিয়া, মারিয়া তেরেসা ও মিনার্ভা মিরাবেল নামের তিন বোনকে হত্যা করা হলে তাদের স্মরণে ১৯৮১ সাল থেকে এই দিনটি আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালিত হয়। কিন্তু বছরের পর বছর নারীর প্রতি নির্যাতন প্রতিরোধ নিয়ে আন্দোলন বা দিবস পালন করেও কি নির্যাতন কমছে এই বিষয়ে প্রশ্ন থেকে যায়!

প্রতিবারই নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ দিবসে নারির সম্মানার্থে আয়োজন করা হয় সভা, সেমিনার। টেলিভিশন, পত্রিকা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর সবজায়গায়ই দেখা যায় নারীদের নিপীড়নের চিত্র। এইসব সভা, সেমিনার কিংবা টেলিভিশন-পত্রিকার প্রতিবেদনগুলোর মূল উদ্দ্যেশ্য সমাজে নারীর অবস্থান বুঝানো, তাঁদের সাথে ঘটে যাওয়া নিপীড়ন সম্পর্কে সচেতনতা তৈরী অথচ দিন শেষে এইসব দেখে বা পড়ে মানুষ কতটুকুই বা সচেতন হয়? পত্রিকার পাতা কিংবা টেলিভিশনের পর্দায় হরহামেশাই দেখা যায় নারীর প্রতি সহিংসতার খবর।

চলতি বছর সিলেটের এমসি কলেজে গনণধর্ষনের স্বীকার নারী, খাগড়াছড়িতে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী মেয়ের গণধর্ষনের ঘটনা কিংবা নোয়াখালিতে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষনের পর কুপিয়ে হত্যা, এইসব ঘটনাই জানিয়ে দেয় বর্তমানে নারীর প্রতি সহিংসতার চিত্র কীরূপ। তবে প্রতিদিন এমন অসংখ্য ঘটনা ঘটে থাকে যা গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশ ও পায়না। সুতরাং প্রকৃতপক্ষে নারীর প্রতি সহিংসতার চিত্র আরো ভয়াবহ। এছাড়াও যৌতুকের জন্য গৃহবধুকে নির্যাতন, কন্যাসন্তান হওয়ার কারণে নির্যাতন প্রভৃতি সংবাদপত্রের কিংবা টেলিভিশনের নিত্যদিনের চিত্র। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) কর্তৃক পরিচালিত ২০১১ সালের জরিপ মতে, শতকরা ৮৭ ভাগ নারী স্বামীর মাধ্যমে কোনো না কোনো ধরনের নির্যাতনের শিকার হন। জাতিসংঘের বিশেষ রিপোর্টমতে, বাংলাদেশে ৬০ শতাংশ বিবাহিত নারী জীবনে কোনো না কোনো সময়ে স্বামী কিংবা তার পরিবার বা উভয়ের দ্বারা নির্যাতিত হন।

নির্যাতনের এইসব খবর শুধুমাত্র নারীর প্রতি সহিংসতার একটি দিক। এছাড়াও প্রতিদিন নারীকে নানান মানসিক ও সামাজিক নির্যাতনের মধ্য দিয়েও যেতে হয়। দায়মুক্তি, লৈঙ্গিক অসমতা এবং সামাজিক চাপের কারণে নারীর প্রতি সহিংসতা অনেকাংশেই অপ্রকাশিত রয়ে যায়। পরিবার কিংবা সমাজ, ঘরে কিংবা রাস্তায়, কোথাও নিরাপদ থাকতে পারছেন না নারীরা। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সমাজের প্রতিটি মানুষকে দাঁড়াতে হবে এবং প্রতিবাদ করতে হবে নিজ নিজ জায়গা থেকে। এছাড়াও সচেতন হতে হবে লিঙ্গ, সম্মান ও মানবাধিকারের বিষয়ে। নারীর ক্ষমতায়ন, নারীর শিক্ষার পাশাপাশি প্রতিটি পুরুষকেও সচেতন হতে হবে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধের বিষয়ে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭