ইনসাইড আর্টিকেল

মুম্বাই জঙ্গি হামলার ১৪ বছর: জঙ্গিদের দৌরাত্ব বন্ধ হবে কবে?


প্রকাশ: 26/11/2022


Thumbnail

২০০৮ সালের এই দিনে (২৬ নভেম্বর) ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাইকে প্রায় চারদিন ধরে স্তব্ধ করে রেখেছিল জঙ্গিরা। পাকিস্তান থেকে জলপথে কোলাবার সমুদ্রতটে ডিঙি নৌকায় করে এসে কয়েকজন কুখ্যাত জঙ্গি ভারতের বৃহত্তম শহর মুম্বাইতে ১০টিরও বেশি ধারাবাহিক হামলা এবং বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটায়। ২৬ নভেম্বর থেকে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত এই হামলা চলে।

সন্ত্রাসীরা করাচী বন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে। তারা গভীর সাগর পর্যন্ত একই জাহাজে ছিল। এরপর তারা একটি ভারতীয় মাছ ধরার নৌকা ছিনতাই করে এবং মুম্বাই উপকূলে এসে এর নাবিককে হত্যা করে। আটটি হামলা ঘটে দক্ষিণ মুম্বাইয়ে। জায়গাগুলি হল ছত্রপতি শিবাজী টার্মিনাস, ওবেরয় ট্রাইডেন্ট, দি তাজ মহল প্যালেস এন্ড টাওয়ার, লিওপোল্ড ক্যাফে, কামা হাসপাতাল (মহিলা ও শিশুদের হাসপাতাল), নরিম্যান হাইস ইহুদি কমিউনিটি সেন্টার, মেট্রো অ্যাডল্যাবস, এবং টাইমস অফ ইন্ডিয়া ভবন ও সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের পিছনের একটি গলি। এছাড়া মুম্বাইয়ের বন্দর এলাকার মাজাগাঁও ও ভিলে পার্লের একটি ট্যাক্সির মধ্যেও বিস্ফোরণ ঘটে।

২৮ নভেম্বর সকালের মধ্যেই মুম্বাই পুলিশ ও অন্যান্য রক্ষীবাহিনী তাজ হোটেল ছাড়া অন্য সব আক্রান্ত স্থান সুরক্ষিত করে ফেলে। ২৯ নভেম্বর ভারতের জাতীয় রক্ষী বাহিনী (এনএসজি) তাজ হোটেলে আশ্রয়গ্রহণকারী অবশিষ্ট জঙ্গিদের হত্যা করে (এই অপারেশনটির নাম ছিল অপারেশন ব্ল্যাক টর্নেডো) শহরকে জঙ্গিমুক্ত করে।

জঙ্গি হামলার ঘটনায় ১৬৪ জন নিহত ও কমপক্ষে ৩০৮ জন আহত হন। এদের মধ্যে অন্তত ৩০ জনই বিদেশি নাগরিক ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফ্রান্সের একাধিক নাগরিক ছিলেন। জঙ্গি হামলায় যারা নিহত হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে ভারত ছাড়াও আরও অন্তত ১৬টি দেশের নাগরিকরা ছিলেন। গুরুতর জখম হয়েছিলেন আরও অন্তত সাতটি দেশের নাগরিকরা। এদের প্রায় সবাই ছিলেন তাজমহল প্যালেস হোটেল বা নরিম্যান পয়েন্টে ওবেরয় হোটেলের অতিথি কিংবা খেতে এসেছিলেন কোলাবার লিওপোল্ড ক্যাফে রেস্তোরাঁয়।

সারা বিশ্বে জঙ্গি হামলার এই ঘটনা তীব্রভাবে নিন্দিত হয়। ওই হামলায় জীবিত অবস্থায় আটককৃত একমাত্র জঙ্গি আজমল কাসাব স্বীকার করে যে, জঙ্গিরা ছিলো পাকিস্তানি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার সদস্য। এই হামলার জন্য যেই জঙ্গিরা তথ্যসংগ্রহ করতো, তারা পরে স্বীকার করেছে যে পাকিস্তানের গুপ্তচর সংস্থা ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) তাদের মদত যোগাত।

২৬/১১ হিসেবেও পরিচিত ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ১৪ বছর পূর্ণ হয়েছে। জঙ্গি দমনে সারা বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। তবুও প্রায়ই জঙ্গিদের দৌরাত্ব দেখা যায়, যেমনটি ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা  হামলার সময় দেখা গিয়েছিল। এরপর ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাজধানী ঢাকার হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জঙ্গিবাদ নির্মূলে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতি গ্রহণ করা হয়। এরপর জঙ্গিবিরোধী অভিযানের ধারাবাহিকতায় জঙ্গিদের দৌরাত্ব প্রায় শূন্যের কোঠায় পৌঁছায়। কিন্তু আফগানিস্তানের তালেবানদের উত্থানের পর জঙ্গিবাদ আবারও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার আশঙ্কা দেখা দেয়। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষিতে জঙ্গিরা আবারও তৎপর হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা, যার প্রতিফলন দেখা যায় ২১ নভেম্বর আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার মধ্য দিয়ে। মুম্বাই জঙ্গি হামলার ১৪ বছরের পূর্ণ হওয়ার দিয়ে তাই প্রশ্ন ওঠেছে, জঙ্গিদের দৌরাত্ব বন্ধ হবে কবে?



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭