এডিটর’স মাইন্ড

পর্দার আড়ালে খেলছে কারা?


প্রকাশ: 29/11/2022


Thumbnail

দেশের অন্যতম শীর্ষ দৈনিক প্রথম আলো। প্রথম আলো রাস্তা বন্ধ করে জনসমাবেশ করার ঘোরতর বিপক্ষে। এ নিয়ে দিনের পর দিন তারা প্রতিবেদন তৈরি করেছে, কলাম লিখেছে। এ নিয়ে জনভোগান্তি হয়, রাস্তায় তীব্র যানজট হয় তা নিয়ে প্রথম আলোর যেন বিরামহীন প্রচারনা ছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই আজ ঘুরে গেল প্রথম আলো। ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির জনসভাস্থল নিয়ে বিএনপির চেয়েও বেশি দুঃখিত যেন প্রথম আলো। প্রথম আলো আজ এ নিয়ে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। প্রথম প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিএনপিকে আরও চাপে ফেলতে চায় আওয়ামী লীগ। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জমায়েত পূর্ণ করতে হলে বেশ বেগ পেতে হবে বিএনপিকে। আর না পারলে বিএনপির জনসমর্থন নেই এই প্রচার করতে পারবে আওয়ামী লীগ। এই প্রতিবেদনে এটাও বলা হয়েছে যে, বিএনপিকে চাপে ফেলার জন্যই নাকি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপির জনসভা অনুমতি দিয়েছে পল্টনে নয়। 

এ সংক্রান্ত দ্বিতীয় প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। যার শিরোনাম হলো ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি, ফাঁদ মনে করছে বিএনপি’। এই প্রতিবেদনে শুরুতে বলা হয়েছে রাজধানীর নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে চায় বিএনপি। তবে হঠাৎ এই সমাবেশের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নাম প্রস্তাব করে সেখানে ছাত্রলীগের পূর্বনির্ধারিত সম্মেলন বিএনপির জন্য দুদিন এগিয়ে আনা এবং মঞ্চ গুটিয়ে নেওয়ার আশ্বাস কৌতূহল সৃষ্টি করেছে দলের। এটা কি সরকারের উদারতা নাকি নতুন কোন ফাঁদ তা নিয়ে নানামুখী ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ চলছে নেতাকর্মীদের মধ্যে। এসবের মধ্যে ঢাকায় সমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। অর্থাৎ এই প্রতিবেদন দুটি পুরোটা পড়লে সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে, প্রথম আলো গ্রুপ চাইছে রাস্তা বন্ধ করে ঢাকা শহরের অন্যতম ব্যস্ত সড়ক নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশ হোক। বিএনপির সমাবেশ যদি করা হয় তাহলে রাস্তা বন্ধ করা জায়েজ আর অন্য কোনো রাজনৈতিক দল রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশ করলে সেটা মহা অন্যায়? 

বিএনপির প্রতি এই সহানুভূতির কারণ কি? প্রথম আলো গ্রুপ সুশীল সমাজ নিয়ন্ত্রিত একটি পত্রিকা। আওয়ামী লীগ-বিএনপির গোলযোগ হোক, রাস্তায় সহিংসতা হোক, রক্তাক্ত হোক তাহলেই সুশীল সমাজের ক্ষমতা গ্রহণের পথ তৈরি হয়ে যায়। এটিই এখন রাজনীতির মূল পরিকল্পনা। পর্দার আড়ালে এই খেলাটি চলছে। বিএনপিকে সুশীলদের কেউ কেউ উৎসাহিত করছে, উদ্বেলিত করছে, যেমন প্রথম আলো। এরকম অনেক সুশীলই বিএনপিকে কোন অবস্থাতেই নয়াপল্টন না ছাড়ার জন্য রীতিমতো তোষামোদি করছে। এর কারণ বিএনপি জানে যে, আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে যতক্ষণ পর্যন্ত সহিংসতা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত সুশীলরা গ্রিন রুম থেকে মূলমঞ্চে আসতে পারবেন না। আর সে কারণেই সুশীলরা যেন গ্রিন রুমে আসতে পারেন সেজন্য পর্দার আড়ালে খেলা শুরু হয়ে গেছে। পর্দার আড়ালে সুশীলরা খেলছেন এবং বিএনপিকে উত্তপ্ত  করার চেষ্টা করছেন। 

গত কিছুদিন ধরেই সুশীল সমাজ বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হবে, রিজার্ভের টানাপোড়েন, লোডশেডিং বাড়তেই থাকবে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে টাকা নেই ইত্যাদি প্রচারণা করে সরকারকে অর্থনৈতিক দিক থেকে প্রায় দেউলিয়া প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করছে। আবার মানবাধিকার নিয়েও সুশীলরা আন্তর্জাতিক মহলের পশ্চিমা দেশগুলোতে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলছে। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সরকারকে দুর্বল করে তোলা আর মাঠে বিএনপিকে নামিয়ে একটা সহিংসতা উত্তেজনা তৈরি করা। তাহলে আরেকটা ওয়ান-ইলেভেন তৈরি করা যাবে। 

ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানেন যে, এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে তার অর্থ পাচারের মামলার তদন্ত হবে এবং তিনি ফেঁসে যাবেন। ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এবং প্রথম আলো-ডেইলী স্টার গ্রুপ তারাও জানেন যে, এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে তাদের দাপটটা থাকবে না। এ কারণেই পর্দার আড়ালে তারা নেমেছেন। একদিকে যেমন পশ্চিমা দেশগুলোকে দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে চাপ সৃষ্টি করার কৌশল নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে বিএনপিকে রক্তাক্ত আন্দোলনের জন্য উস্কানি দেওয়া হচ্ছে। পর্দার আড়ালের এই খেলার পরিণতি শেষ পর্যন্ত কি হয় সেটাই দেখার বিষয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭