প্রকাশ: 01/12/2022
বিপুল সম্ভাবনা
থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে প্রাণিসম্পদ একটি ঝুঁকিপূর্ণ খাত। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বা জলবায়ু
প্রভাবজনিত কারণে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দূর্যোগ কিংবা নিত্যনতুন অনিয়ন্ত্রিত রোগ-ব্যাধি
সংক্রমণ গুরুত্বপূর্ণ এই খাতটিকে বাণিজ্যিকীকরণে বাঁধাগ্রস্থ করছে। অথচ এর সঙ্গে সরাসরি
জড়িত রয়েছে ১ কোটি ৪ লক্ষ পরিবার। শুধু তাই নয়, নিরাপদ প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ,
কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র বিমোচন, মেধাবী জাতিগঠন ও গ্রামীন অর্থনীতিতে রয়েছে প্রাণিসম্পদের
বিশাল অবদান।
বীমা এমন একটা
ফিনেন্সিয়াল ইন্সট্রুমেন্ট যা দিয়ে সোসাইটির রিস্কটাকে বহন করা যায়। পৃথিবীর বিভিন্ন
দেশে বিশেষত উন্নত দেশগুলোতে বীমাখাত অত্যন্ত সম্প্রসারিত। বীমার অবদান জিডিপির জন্য
খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু আমাদের বীমার অবদান ১% এরও কম। তবে বাংলাদেশেও বীমার সম্প্রসারণ
এবং এতে অবদান বৃদ্ধির অনেক সম্ভাবনা ও সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে বীমা কোম্পানি এবং বীমা
গ্রহীতা দু-পক্ষেরই স্বার্থ রক্ষা করে নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। তবেই এটি স্থায়ীত্বশীল
এবং গ্রহণযোগ্য হবে।
প্রা্ণিসম্পদ
উন্নয়নে প্রাণিবীমা জরুরি। কারন প্রানিসম্পদ উন্নয়নে গবাদিপ্রানী পালন বাড়াতে আর্থিক
প্রতিষ্ঠান (ব্যাংক/এমএফআই) থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা জরুরি। প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে
আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ খামারীকে ঋণ দিবে। তবে সেই ঋণ ইন্সুরেন্স বেইজড হতে হবে। অর্থ্যাৎ
ব্যাংক যখনই কাউকে ঋণ দিবে, ঋণের টাকা ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তার জন্য অবশ্যই প্রাণির
বীমা করতে হবে। এক্ষেত্রে বীমা করাটা কিছুটা বাধ্যতামূলক হওয়া জরুরি।
প্রানিবীমা
সম্প্রসারণের জন্য প্রাণিসম্পদ বিভাগ, বীমা প্রতিষ্ঠান, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, আর্থিক
প্রতিষ্ঠান (ব্যাংক/এমএফআই), এনজিও সহ সকল স্টেকহোল্ডারদের সমন্বয়ে একটি গ্রহণযোগ্য
প্রাণিবীমা নীতিমালা/ কৌশলপত্র প্রনয়ণ করা প্রয়োজন। যেখানে প্রাণিসম্পদ বিভাগ প্রান্তিক
খামারিদের সুরক্ষা দেয়ার পাশাপাশি ইনফ্রাস্ট্রাকচারাল ফ্যাসিলিটি সমন্বিত আধুনিক প্রাণিসম্পদ
ডাটা ব্যাংক ব্যবস্থাপনা করবে যার মধ্যে ফার্ম রেজিষ্ট্রেশন, সার্ভিলেন্স সিস্টেম,
কম্পিউটর নেটওয়ার্ক ডাটাবেইজ, ডিজিস প্রেডিকশন সিস্টেম, আরলি ওয়ারনিং সিস্টেম, একক
বা সামষ্টিক মৃত্যুহার, ডিজিস ম্যাপিং, এনিমেল মর্টালিটি ম্যাপিং থাকবে। এই ডাটাবেইজ
থেকে বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো রিস্ক এসেসমেন্ট করে তাদের প্রিমিয়াম ক্যালকুলেশন করবে।
প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো
গবাদিপ্রাণী সনাক্তকরণ থেকে শুরু করে তাদের ট্রেসিং আউট করা, বীমা পদ্ধতি ডিজিটালাইজেশন
ও খামারি বান্ধব করা, টেকনোলজির মাধ্যমে প্রোডাক্ট সেল বাড়ানো, প্রোডাক্টের অপারেশন
কষ্ট কমানো, খামারিদের ভ্যালু এডেড সার্ভিস প্রদান করা প্রভৃতি কাজ করবে। বীমা কোম্পানীর
নিকট অনেক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাদের সার্ভে রিপোর্ট এবং বিভিন্ন রিপোর্ট পেতে সময়
লাগে, যার কারণে আস্থার একটি সংকট দেখা যায়। এক্ষেত্রেও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান সেবা
সহজীকরণ ও দ্রুততা নিশ্চিতকরণে মাধ্যমে আস্থা অর্জনে সহায়তা করতে পারে।
এনজিও গুলো
মানুষের কাছে বীমা সুবিধার প্রচারনা করাতে সাহায্য করবে যাতে তাদের প্রাণিসম্পদ মৃত্যু
ঋণ সুরক্ষা পায়। আর প্রিমিয়াম ইস্যুতে কৃষককে সহায়তায় রাষ্ট্র বা সরকার ১%, স্থানীয়
সরকার ১% ও কৃষক ১% দেওয়ার বিধান করা যেতে পারে। এইভাবে আমরা প্রাণিবীমার পুরো সিস্টেমটাকে
জনপ্রিয় করতে পারি। মাইক্রো ইন্সুরেন্স এর বিষয়ে বীমা আইন ও মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি
অথরিটি আইনের কিছু জটিলতা রয়েছে যা নিরসন করা আশু প্রয়োজন।
অন্যদিকে প্রাণী
যদি মারা না যায়, সে ক্ষেত্রে কৃষকের জন্য কিছু একটা বেনিফিট প্রদান, বাজারজাতকরণের
ক্ষেত্রে রিস্ক কাভারেজ বীমা চালু করা, সরকারের দিক থেকেও বীমা খাতে সাবসিডির বিধান
রাখা, প্রিমিয়াম হ্রাস করার মাধ্যমে বীমা কার্যক্রমটিকে আরও বেশী সম্প্রসারিত করা,
রিলিফ নির্ভরতা কাটিয়ে উঠতে দুর্যোগকে বীমায় কনভার্ট করা প্রভৃতি বিষয়ে নীতি নির্ধারনী
পর্যায়ের সহযোগিতা প্রয়োজন। এর জন্য একটা ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করে স্বল্প সময়ের মধ্যে
নীতিমালা প্রণয়নের একটা পরিকল্পনা হাতে নেয়া জরুরি। প্রাণিসম্পদ খাতে বীমার সুবিধা
দিলে জনগণ অধিক উৎপাদনশীল গাভী পালনে উৎসাহিত হবে, বিনিয়োগ সুরক্ষিত হবে, নতুন নতুন
উদ্যোক্তা তৈরি হবে, প্রান্তিক পর্যায়ে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং জলবায়ু
পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবেলায় আমাদের সক্ষমতা বাড়বে।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭