আগামী ১০ ডিসেম্বরে ঢাকার বিভাগীয় সমাবেশ নিয়ে রাজনীতিতে উত্তেজনা ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। আজ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় বিএনপি নয়াপল্টনেই সমাবেশ করার ব্যাপারে তাদের অনড় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছে। উল্লেখ্য যে, আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশের জন্য অনুমতি চেয়ে ঢাকার পুলিশ কমিশনার বরাবর আবেদন করেছিলো বিএনপি। সেই আবেদনে নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করার কথা বলা হয়েছিলো। কিন্তু ঢাকা বিভাগীয় পুলিশ কমিশনার ২৬টি শর্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই মহাসমাবেশ করার অনুমতি দেয়। বিএনপি এই অনুমতি প্রত্যাখ্যান করেছে। বিএনপির মহাসচিবসহ একাধিক নেতা বলেছেন, সরকার অনুমতি দিক না দিক, তারা নয়াপল্টনেই মহাসমাবেশ করবে। অন্যদিকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, বিএনপি নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করতে চাইলে সেটিতে বাঁধা দেয়া হবে এবং কোনোভাবেই সরকার নতি স্বীকার করবেনা। সরকার এবং বিএনপির এই মুখোমুখি অবস্থান রাজনীতিতে এক নতুন উত্তেজনা তৈরি করেছে। বিশেষ করে আজকে স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্তের পর ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে আগামী ১০ ডিসেম্বরকে ঘিরে একটি সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
এদিকে বিএনপি নয়াপল্টন দখলের জন্য আজকের স্থায়ী কমিটির মিটিংয়ে কর্মকৌশল চূড়ান্ত করেছে। এই কর্মকৌশলে ৮ই ডিসেম্বর রাত থেকে নয়াপল্টন দখল করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও পাড়ায়-মহল্লায় ঝটিকা মিছিলের মাধ্যমে শক্তি প্রদর্শন এবং অস্থিরতা সৃষ্টিরও পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৮ ডিসেম্বর থেকেই বিএনপির নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনে অবস্থান গ্রহণ শুরু করবেন এবং এমন ভাবে অবস্থান গ্রহণ করবেন যেন পুলিশ তাদেরকে বাঁধা দিতে না পারে এবং পুলিশ যদি বাঁধা দেয় তাহলে যেন সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হয়। ঝটিকা মিছিলের মাধ্যমে নয়াপল্টনে প্রবেশ করা এবং ৮ তারিখ থেকে থেকে নয়াপল্টনে অবস্থান নেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে আজকের স্থায়ী কমিটির মিটিংয়ে। বিএনপি অন্যান্য বিভাগীয় শহরগুলোতে যেভাবে মহাসমাবেশ করেছিলো অর্থাৎ মহাসমাবেশের আগেরদিন থেকেই তারা মহাসমাবেশস্থলে জমায়েত হচ্ছিলো, ঠিক একই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে ঢাকা শহরেও। ফলে ৮ ডিসেম্বর থেকেই ঢাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এছাড়াও, বিএনপি সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিটি পাড়া-মহল্লা থেকে ঝটিকা মিছিল আকারে মহাসমাবেশস্থলে আসা হবে এবং প্রত্যেক নেতাকর্মী যেন লাঠি বহন করে, সেইরকম নির্দেশনাও ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে দেওয়া হবে। এইসব নিয়ে আজ থেকেই বিএনপি ওয়ার্ড পর্যায়ে কর্মীসভা শুরু করছে এবং এই কর্মীদেরকে ঢাকায় জমায়েত করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। কর্মীদেরকে নয়াপল্টনে আগেরদিন অর্থাৎ ৮ ডিসেম্বর রাত থেকেই আসার জন্য নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও ঢাকার বাইরে থেকে যারা আসবেন তাদেরকে আগামী ৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ঢাকায় অবস্থান গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বিএনপি নয়াপল্টনে মহাসমাবেশকে একটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। তারা মনে করছে যে, এই চ্যালেঞ্জে তাদেরকে জয়ী হতে হবে। আর এক্ষেত্রে রাজনীতিতে যে উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, সেটি বিএনপির জন্য লাভজনক বলেই তারা বিবেচনা করছে। যদিও বিএনপির নেতাদের মধ্যে কেউ কেউ বলছেন যে, শেষ পর্যন্ত যদি ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ সফল না হয়, পুলিশের ব্যারিকেডের মুখে যদি বিএনপি শেষ পর্যন্ত সমাবেশ করতে না পারে সেটি হবে বিএনপির এক ধরণের নৈতিক পরাজয়। কিন্তু বিএনপির অধিকাংশ নেতারাই মনে করছেন যে, তারা মারমুখী থাকবেন, প্রয়োজনে পুলিশের সঙ্গে লড়াই করবেন কিন্তু সমাবেশ করবেন। এর ফলে ১০ ডিসেম্বরে একটি রক্তাক্ত অধ্যায়ের পরিকল্পনা নিয়েই বিএনপি এগুচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, সরকার কীভাবে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করে, শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করে।