কালার ইনসাইড

পর্দার আড়ালে নির্যাতনের স্বীকার বাংলাদেশের মডেল-অভিনেত্রীরা


প্রকাশ: 01/12/2022


Thumbnail

শোবিজের তারকাদের নিয়ে সধারণ মানুষের আগ্রহের কমতি নেই। বিশেষ করে নায়ক-নায়িকাদের নিয়ে যেনো তাদের জানার শেষ নেই। তাদের চলাফেরা, আচার-আচরণ সব কিছুই তাঁদের ভক্তরা অনুসরণ করেন। সিনেমা-নাটকে প্রেম-ভালোবাসা একটি সুন্দর সংসারের চিত্র দেখালেও বাস্তব জীবনে কতটা খুশি নায়িকারা? কিছুদিন পর পরই দেখা যায় শোবিজের অনেক নায়িকা কিংবা মডেল কিংবা গায়িকারা স্বামীর নির্যাতনের কথা সামনে নিয়ে আসেন।

ভালোবেসে বিয়ে করে অনেক নায়িকাই সংসার জীবনে সুখী হতে পারেনি। স্বীকার হতে হয়েছে স্বামীর নির্যাতনের। বিচ্ছেদের পর আবার নতুন সংসার গড়লে সেখানেও দেখা যায় একই দৃশ্য। সুখের আশায় ঘর বাঁধলেও যৌতুক কিংবা অন্য কোন কারণে সেই সুখ তার কপালে জোটে না। 

ঢাকাই চলচ্চিত্রের দর্শকপ্রিয় নায়িকা শাবনূর। সর্বদা হাস্যজল থাকা এই নায়িকা হয়েছে স্বামীর নির্যাতনের স্বীকার। যার কারণে ২০২০ সালে ইতি হয় তাঁর সংসারের।

২০১১ সালের ৬ ডিসেম্বর অনিক মাহমুদের সঙ্গে আংটি বদল করেন শাবনূর। এরপর ২০১২ সালের ২৮ ডিসেম্বর বিয়ে করেন তারা। ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর আইজান নিহান নামে এক পুত্রসন্তানের মা হন শাবনূর। কিন্তু স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখে থাকা হলো না তার। ২০২০ সালে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। সে সময় এই নায়িকার অ্যাডভোকেট কাওসার আহমেদ জানিয়ে ছিলেন, শাবনূরের স্বামী অনিক মাদকাসক্ত ছিলেন। রাত বিরাতে মাতাল হয়ে বাসায় ফিরতেন। প্রতিবাদ করলে শাবনূরকে নানারকম মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করতেন।

বর্তমানে শাবনূর তার ছেলেকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছেন।

নব্বইয়ের দশকের চাহিদাসম্পন্ন নায়িকা মুনমুন। ব্যক্তিগত জীবনে মীর মোশাররফ হোসেন রোবেনের সঙ্গে প্রেমে জড়ান এই নায়িকা। প্রেমের পর তা পরিণয়ে রূপ নেয়।২০১০ সালে তারা বিয়ে করেন। তাদের সংসারে রয়েছে দুই সন্তান। কিন্তু তাদের এই ভালোবাসার সংসার এক যুগ পার না হতেই ভেঙে যায়। তিনিও হয়েছেন স্বামীর নির্যাতনের স্বীকার। 

মুনমুন তখন গণমাধ্যমকে জানিয়ে ছিলেন, দেখুন আমরা কিন্তু ভালোবেসেই বিয়ে করেছিলাম। আমাদের সন্তানও রয়েছে। এই পর্যায় এসে কেউ কী চায় সংসার ভেঙে যাক। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। আমি অনেক সেক্রিফাইজ করেছি। আমাকে শারীরিক নির্যাতনও করতো। 

সময়টা ২০১৫ সাল, ফেসবুকে অভিনেত্রী ফারিয়া-অপুর পরিচয়। সেখান থেকে বন্ধুত্ব ও প্রেম। তিন বছর পর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তারা আংটিবদল করেন। ২০১৯  সালের ১ ফেব্রুয়ারি ধুমধাম করে বিয়ে হয় অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া ও বেসরকারি চাকরিজীবী হারুন অর রশীদ অপুর। পরিচয় ও প্রেমের হিসাবে তাদের সম্পর্কের বয়স পাঁচ বছর। কিন্তু বিয়ের এক বছর পার না হতেই না হতেই তাদের বিচ্ছেদ হয়। ২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর অপুর সাথে বিচ্ছেদ হয় ফারিয়ার। 

মডেল-অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধনের মাশরুর হোসেন সিদ্দিকীর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল ২০১০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর। স্বামী পেশায় ছিলেন ব্যবসায়ী। কিন্তু বিয়ের পাঁচ মাসের মাথায় তাঁদের বিচ্ছেদ ঘটে।এই অভিনেত্রী তখন নানা নির্যাতনের কথাও গণমাধ্যমকে বলে ছিলেন।



শবনম ফারিয়া স্বামীর কাছে নির্যাতিত হয়ে বিচ্ছেদের পথে হেঁটেছেন। শুধু নির্যাতনই নয়, নির্যাতন করে হাত ভেঙে দিয়েছিলেন তার স্বামী। সমাজের নিয়ম ও কী বলবে সমাজ, স্বজন এই ভেবে সহজে বিচ্ছেদের পথে হাঁটতে চাইছিলেন না। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়েছেন দেবীখ্যাত অভিনেত্রী। 

এদিকে নির্যাতনের স্বীকার হয়ে ডির্ভোস নিয়ে ছিলেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্রনায়িকা তমা মির্জা। অমানবিক নির্যাতনের স্বীকার হয়ে তিনি স্বামী হিশাম চিশতির বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং যৌতুকের জন্য মারপিটসহ হুমকি প্রদানের অপরাধে মামলাও করেছিলেন। 

মডেল ও অভিনেত্রী মডেল ও অভিনেত্রী সারিকা সাবরিন। চলতি বছর ২ ফেব্রুয়ারি দুই পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে রাহীকে বিয়ে করেন সারিকা। এটি তার দ্বিতীয় বিয়ে।
সম্প্রতি তার দ্বিতীয় স্বামী জি এস বদরুদ্দিন আহমেদ রাহীর বিরুদ্ধে মারধর ও যৌতুক দাবির অভিযোগ আনেন এই অভিনেত্রী। সারিকার এই মামলা আমলে নিয়েছেন আদালত।

সারিকা বলেন, আমি সংসার জীবন নিয়ে অতিষ্ঠ। সে (রাহী) আমাকে শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক- সব দিকেই টর্চার করেছে। একজন নারী কখন ঘরের বিষয়গুলো প্রকাশ্যে আনে- এটা সবাইকে বুঝতে হবে। বিষয়টি পারিবারিকভাবে বেশ কয়েকবার সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু লাভ হয়নি। দিনকে দিন আরও খারাপের দিকে গেছে। তাই বাধ্য হয়ে বিচার চেয়ে আদালতে গিয়েছি।

পর্দায় যেই মানুষগুলোকে দেখে সাধারণ মানুষ তাদের নিজের জীবনে সেই তারকার প্রভাব নিয়ে আসে। সেই তারকাদের পর্দার আড়ালে এমন নির্যাতন ও তা প্রকাশ্যে আসলে আমাদের সমাজের জন্য কতটুকু কল্যাণকর তা প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। 

সরকারি ও বেসরকারিভাবে নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণের পরও নির্যাতনের ঘটনা কোনোভাবেই কমছে না। মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর নারীর সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য নানা কর্মসূচি পালন করে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প তো রয়েছেই। তারপরও দেশে কমেনি নারী নির্যাতনের ঘটনা। 

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্যমতে, ২০২১ সালে ৩ হাজার ৭০৩ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিশ্বের যেসব দেশে স্বামী বা সঙ্গীর হাতে নারী নির্যাতনের হার বেশি, সেসব দেশের তালিকায় এসেছে বাংলাদেশের নাম। দেশের ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সি নারীদের ৫০ শতাংশই জীবনে কখনো না কখনো সঙ্গীর হাতে শারীরিক বা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

তাদের তথ্যমতে, বিশ্বে প্রতি তিন জন নারীর এক জন জীবদ্দশায় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বুর‍্যো কর্তৃক পরিচালিত ২০১১ সালের জরিপ মতে, শতকরা ৮৭ ভাগ নারী স্বামীর মাধ্যমে কোনো না কোনো ধরনের নির্যাতনের শিকার হন। জাতিসংঘের বিশেষ রিপোর্ট মতে, বাংলাদেশে ৬০ শতাংশ বিবাহিত নারী জীবনে কোনো না কোনো সময়ে স্বামী কিংবা তার পরিবার বা উভয়ের দ্বারা নির্যাতিত হন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭