ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

গণআন্দোলনের অংশ হিসেবে দেশে ফিরেছেন যারা


প্রকাশ: 17/05/2024


Thumbnail

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্বৈরশাসনের জন্য অনেক গণতন্ত্রকামী নেতাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে দীর্ঘ সময় তারা নির্বাসিত জীবনযাপন করেছে। সেইসব নেতাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার জনগণ বা দেশের স্বার্থে স্বদেশে প্রত্যাবর্তনও করেছে। তাদের মধ্যে বহুল আলোচিত- ইরানে ইসলামী বিপ্লবের সূচনাকারী আয়াতুল্লাহ খোমেনি, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ, পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর কন্যা বেনজির ভুট্টো। মিয়ানমারের সাবেক নেত্রী অং সান সুচি এবং থাই প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা।

আয়াতুল্লাহ খোমেনি 

১৯৭৮ সালে ইরানে যখন চরম অস্থিরতা এবং সহিংসতা শুরু হয়, আয়াতোল্লাহ খোমেনি তখন ইরাকে শিয়াদের পবিত্র নগরী নাজাফে কড়া পাহারায় নির্বাসিত জীবনে ছিলেন।

ইরাকে তখন সাদ্দাম হোসেনের শাসন। ইরানের শাহ আয়াতোল্লাহ খোমেনিকে ইরাক থেকে বহিষ্কারের জন্য সাদ্দাম হোসেনকে অনুরোধ করেন। বহিষ্কৃত আয়াতোল্লাহ ফ্রান্সে পাড়ি জমালেন এবং সেখান থেকে সহজে সারা পৃথিবীর উদ্দেশ্যে কথা বলার সুযোগ পেয়ে গেলেন। তার আপোষহীন এবং জোরালো সব বক্তব্যের কারণে দ্রুত তিনি সারা বিশ্বের নজর কাড়েন। শেষ পর্যন্ত ১৯৭৯ সালে জানুয়ারিতে যখন শাহ দেশ ছাড়তে বাধ্য হন, আয়াতোল্লাহ দেশে ফেরার সুযোগ পান এবং ফিরেই রাজতন্ত্র উপড়ে ফেলেন। রাজতন্ত্র ধ্বংস হয়ে ইরানে ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠিত হলো। মুসলিম বিশ্ব পক্ষে-বিপক্ষে বিভক্ত হয়ে পড়লো এবং পশ্চিমা উদারপন্থার প্রধান চ্যালেঞ্জার হয়ে পড়লো আয়াতোল্লাহ খোমেনির নতুন ইরান।

নওয়াজ শরিফ

পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিরোধ ছিল দেশটির মুসলিম লিগ-নওয়াজের (পিএমএলএন) প্রধান নওয়াজ শরীফের। তিনি প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুতও হয়েছিলেন। পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট ২০১৭ সালে নওয়াজকে সরকারি পদে অযোগ্য বলে ঘোষণা করেন। ২০১৮ সালে দুর্নীতি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন তিনি। দুর্নীতির অভিযোগে জেলেও ছিলেন নওয়াজ শরীফ। তবে স্বাস্থ্যগত বিবেচনায় ২০১৯ সালের নভেম্বরে তিনি জেল থেকে ছাড়া পান। চিকিৎসার কারণে তিনি লন্ডনে স্বেচ্ছা নির্বাসনে চলে যান। চার বছরের স্বেচ্ছানির্বাসনের অবসান ঘটিয়ে পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনের আগে গত বছর ২১ অক্টোবর দেশে ফিরেছেন। এর আগে সৌদি আরবে দশ বছর স্বেচ্ছা নির্বাসন থেকে ফিরে ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন নওয়াজ।

বেনজির ভুট্টো

বেনজির ভুট্টো। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। মুসলিম বিশ্বের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর কন্যা। বাবা জুলফিকার আলী ভুট্টো পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) প্রতিষ্ঠাতা, দাদা শাহ নাওয়াজ ভুট্টো ছিলেন বড় রাজনীতিবিদ। ১৯৮৮ সালে মাত্র ৩৫ বছর বয়সে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন বেনজীর ভুট্টো। কিন্তু ১৯৯০ সালে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদের মাত্র দুই বছরের মাথায় তাকে অব্যাহতি দেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি গুলাম ইসহাক খান।

পরের বছর আবারো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন বেনজীর ভুট্টো। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করলে বেনজিরকে ফের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত করেন পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ওয়াসিম সাজ্জাদ। তিনি ও তার স্বামী জারদারীকে গ্রেপ্তার করে কারাদন্ড দেয়া হয়। তিনি ফের নির্বাসনে লন্ডনে পাড়ি জমান। ৮ বছরের নির্বাসন কাটিয়ে তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ এর আমলে ২০০৭ সালের অক্টোবরে করাচি ফেরেন বেনজির ভুট্টো। বেনজির ভুট্টোর রাজনৈতিক জীবন ছিল উত্থান-পতনে ভরা। তাকে নির্বাসনে যেতে হয়েছিল দু'বার - যুক্তরাজ্যে এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে । দু'বারই তিনি নির্বাসন থেকে পাকিস্তানে ফিরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।

অং সান সু চি

২০২১ সালে রক্তপাতহীন এক সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন মিয়ানমারের তৎকালীন নেত্রী অং সান সু চি (৭৮)। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। রাষ্ট্রদ্রোহ, ঘুষ কেলেঙ্কারি, আইন লঙ্ঘনসহ বিভিন্ন অভিযোগে ২৭ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে তাঁর; যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি। এর আগে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার রক্ষায় ১৯৮৮ সালে সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে গণ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে সবার নজর কাড়েন সচিব। ওই বছরই রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি এনএলডি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি আন্দোলনের কারণে সামরিক জান্তার বিরাগভাজন হয়ে পরের বছরই নিজ বাড়িতে গৃহবন্দি হতে হয় তাকে। মানবাধিকারের বাতিঘর আর ক্ষমতাহীনদের জন্য নির্ভরতার অনন্য উদাহরণ। ১৯৯১ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী হন। সূচি বিশ্বে পরিচিতি পান গণতন্ত্রের রোল মডেল হিসেবে। ২০১০ সালে বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে আবারও সক্রিয় হন। রাজনীতিতে অধিকার আদায়ের লড়াইকে সামনে রেখে ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসে তার রাজনৈতিক দল এনএলডি স্টেট কাউন্সিলর বা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শুরু হয় তার নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়। 

থাই প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা

১৫ বছরের নির্বাসন কাটিয়ে দেশে ফিরেন থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা। গত বছর ১০ আগস্ট বিমানে করে তিনি দেশে আসেন। ৭৪ বছর বয়সী থাকসিন থাইল্যান্ডের দুইবারের প্রধানমন্ত্রী। তবে ২০০৬ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন। এরপর দুর্নীতির দায়ে সাজা এড়াতে ২০০৮ সালে থাইল্যান্ড থেকে পালিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই চলে যান তিনি। এরপর থেকে তিনি দুবাইয়ে বসবাস করছেন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭