ইনসাইড বাংলাদেশ

অসাম্প্রদায়িক চেতনায় নজরুল


প্রকাশ: 25/05/2024


Thumbnail

‘মরিছে হিন্দু, মরিছে মুসলিম, এ উহার ঘায়ে আজ

বেঁচে আছে যারা মরিতেছে তারা, এ মরণে নাহি লাজ।’ 

কেউ তাকে বলে হিন্দুদের কবি, কেউ আবার বলে মুসলমানের কবি। কিন্তু বস্তুত তিনি ছিলেন সাম্যের কবি। অসাম্প্রদায়িক চেতনার মুক্ত প্রদীপ গড়েন তিনি। সাম্যবাদী চিন্তা ছিল তার মননে মস্তিষ্কে। তাই হয়তো তিনি বলে গেছেন, ‘হিন্দু না ওরা মুসলিম? ওই জিজ্ঞাসে কোন জন? কাণ্ডারি! বল, ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মার।' 

বিংশ শতাব্দীর অন্যতম জনপ্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। ১৮৯৯ সালের ২৫ মে তার জন্ম। তার জন্ম ভারতে হলেও তিনি বাংলাদেশের জাতীয় কবি। সাহিত্যে রয়েছে তার অনন্য অবদান। দিয়েছেন সাম্যবাদী, মরুভাস্কর, অগ্নিবীণার মত অসাধারণ সব উপহার। তার এই সব সৃষ্টির জন্য তাকে বিদ্রোহী কবি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তবে তার লেখার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের উপর অত্যাচার এবং সামাজিক অনাচার, কুসংস্কার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ।

সাহিত্যে অগ্নিবীণা হাতে প্রবেশ এবং ধুমকেতুর মতো প্রকাশ এই কবির। তবে তিনি সমাজের প্রতি যে অসম্প্রদায়িক বার্তা দিয়ে গেছেন সেটি করা তার পক্ষে মোটেই সহজ কাজ ছিল না। কেননা অসাম্প্রদায়িক চেতনার নজরুলের জন্মস্থানে ছিল সাম্প্রদায়িকতার জয়জয়কার। যার শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিল মাদ্রাসায় এবং যে জীবনের তাগিদে মসজিদের ইমামতির কাজও করেছেন সে ব্যক্তি আবার বলেন, মিথ্যা শুনিনি ভাই, এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোন মন্দির কাবা নাই।'

নজরুলের বেড়ে ওঠার সময়টি ছিল তার অসাম্প্রদায়িক চেতনার জন্য উত্তম সময়।দুই ভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে বেড়ে উঠেছিলেন নজরুল। ছোটবেলায় মাদ্রাসায় পড়ে, ইমামতি করে তিনি যেমন ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে জানতে পেরেছেন, ঠিক তেমনি লেটো গানের দলে যোগ দিয়ে রপ্ত করেছিলেন রামায়ণ, মহাভারত আর পুরান।  লেটো দলে থাকাকালীন নজরুলের দুই বন্ধু ছিল এদের মধ্যে স্বৈরজা নন্দন মুখোপাধ্যায় ছিলেন হিন্দু ব্রাহ্মণ আর শৈলেন্দ্র কুমার ঘোষ ছিলেন খ্রিষ্টান। তিন বন্ধুর একত্রে মেলামেশা এবং ঘনিষ্ঠতার কারণে কৈশোর থেকেই নজরুলের মনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা দাগ কাটে।  তাছাড়া কবির বেড়ে ওঠার সময় বিশ্ব রাজনীতিতে বেশ কিছু মৌলিক পরিবর্তন দেখা গিয়েছিল। সাম্রাজ্যবাদী ভাবধারাকে  পিছনে ফেলে সামনে এসেছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাজতন্ত্রের বিপ্লব। তাছাড়া সে সময় ভারতে কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা কিংবা বলা যায় ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন এই সব কিছুকেই নজরুল মনে প্রাণে ধারণ করেছিলেন। সেজন্য আমরা তাকে দেখি কখনো বিদ্রোহী, কখনো সংস্কারবাদী আবার আবার তাকে কখনো দেখা যায় হামনাদ গাইতে বা আবার কখনো কখনো শ্যামা সঙ্গীত সৃষ্টি করতে। 

কাজী নজরুল ইসলাম বারবার লক্ষ্য করেছেন সাম্প্রদায়িক কলসের বীভৎস রূপ। তাকে বলা হয় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। কবি মানে এটি গভীর ভাবে প্রভাব ফেলেছিল। তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে। আর তা আমরা তার বিভিন্ন লেখার মাধ্যমে খুঁজে পাই। দাঙ্গায় যে হিন্দু মুসলিম উভয় পক্ষেরই দায় রয়েছে তা তিনি পক্ষপাতহীন দৃষ্টিতে উপলব্ধি করেছেন। আর তাই সংকীর্ণ মানসিকতায় আচ্ছন্ন উগ্রপন্থীরা তার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বারবার। কিন্তু নজরুল দৃঢ়চেতা, তাকে থামানো যায়নি। শত জেল জুলুম অত্যাচার সহ্য করেও তিনি সারাজীবন গেয়ে গেছেন সাম্যের গান। মানুষকে শিখিয়েছেন মানুষ হতে। 

নজরুল মনে করতেন সাম্প্রদায়িকতা ভারতীয় উপমহাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার মূল সমস্যা। তিনি বিশ্বাস করতেন, সাম্প্রদায়িকতার বিষয়টি এদেশের স্বীকৃত  মধ্যবিত্তের বই রিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা। তিনি বাঙালি কে কেবল বাঙালি বলেই চিহ্নিত করতেন। মনুষ্যধর্ম ছিল তার কাছে মূল ধর্ম। তাই তিনি বলে গেছেন, 'গাহি সাম্যের গান, মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান।'



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭