এডিটর’স মাইন্ড

আওয়ামী লীগ ছেড়ে রাজনীতিতে উদ্বাস্তু তারা


প্রকাশ: 19/06/2024


Thumbnail

এক সময় তারা অত্যন্ত প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। মেধাবী নেতা ছিলেন। জাতীয় রাজনীতিতে তাদের ভূমিকা ছিল উজ্জ্বল। কিন্তু আওয়ামী লীগ ত্যাগ করার পর তারা রাজনীতিতে আস্তে আস্তে হারিয়ে যেতে থাকেন। এখন নিজেরাই রাজনীতিতে উদ্বাস্তুতে পরিণত হয়েছেন। আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে মূলধারার নেতৃত্বের বাইরে যে কেউ টিকতে পারে না- এই সত্যটি বারবার প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এ রকম অনেক ব্যক্তিত্ব রয়েছেন, যারা তাদের নিজেদের ভুলে আওয়ামী লীগ ত্যাগ করে নিজেরাই সর্বস্বান্ত হয়েছেন।

আওয়ামী লীগ আগামী ২৩ জুন তার ৭৫ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছে। আওয়ামী লীগের এই প্লাটিনাম জয়ন্তীর সময় এই সমস্ত উদ্বাস্তু নেতাদের নিয়ে এই প্রতিবেদন।

ড. কামাল হোসেন: আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে ড. কামাল হোসেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। জাতির পিতার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজন নেতা হিসেবে তরতর করে রাজনীতির সিঁড়িতে তার উত্তরণ ঘটেছিল। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তিনি ১৯৭১ এ পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন। ৭৫ পরবর্তী সময়ে তার ভূমিকা ছিল রহস্যময়। কিন্তু তারপরও শেখ হাসিনা তাকে কাছে টেনে নিয়েছিলেন। ১৯৯১ নির্বাচনের পর ড. কামাল হোসেন আওয়ামী লীগ ছেড়ে চলে যান। তিনি গণফোরাম নামের একটি রাজনৈতিক সংগঠনের জন্ম দেন। কিন্তু এই গণফোরাম পর্বতের মূষিক প্রসবের মতোই রাজনীতিতে কোন ভূমিকা রাখতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত রাজনীতিতে গণফোরাম একটি অস্তিত্বহীন, গুরুত্বহীন রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিগণিত হয়। এখন বয়সের ভারে নুয়ে থাকা ড. কামাল হোসেন নিজেকে রাজনীতিতে থেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। রাজনীতিতে প্রবল সম্ভাবনা এবং মেধা থাকা সত্ত্বেও তিনি বিভ্রান্তি এবং ভুল রাজনীতির চোরাগলিতে নিজেকে অস্তিত্বহীন হিসেবে পরিণত করেছেন।

মোস্তফা মোহসীন মন্টু: মোস্তফা মোহসীন মন্টু ৭৫ পরবর্তী আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন। বিশেষ করে ঢাকায় সংগঠন পুনর্গঠন এবং শক্তিশালী করার পিছনে মন্টুর ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশ লঙ্ঘন করে সন্ত্রাসী তৎপরতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে মিলে গণফোরাম গঠন করেছিলেন। গণফোরাম থেকে তিনি কিছুদিন আগে বহিষ্কৃত হয়ে নিজেই। একটি রাজনৈতিক দোকান খোলার চেষ্টা করছেন বটে, তবে সেই চেষ্টা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হচ্ছে। এই চেষ্টা খুব একটা সফল হয়নি। 

অধ্যাপক আবু সাইয়িদ: অধ্যাপক আবু সাইয়িদ একজন মেধাবী রাজনীতিবিদ ছিলেন। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গবেষণা এবং ৭৫ পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর ইমেজ পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে তিনি যথেষ্ট কাজ করেছিলেন। কিন্তু ২০০৭ সালে তিনি সংস্কারপন্থি হয়ে ওঠেন। এর আগেও তার বিভ্রান্তি হয়েছিল। তিনি আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে মিলে বাকশালে যোগ দিয়েছিলেন। তবে এক এগারোতে তার বিভ্রান্তির কারণে তিনি মনোনয়ন বঞ্চিত হন পাবনার আসন থেকে। পরবর্তীতে তিনি আওয়ামী লীগের আর থাকেননি। ২০১৮ নির্বাচনে তিনি জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে পরাজিত হন। গত নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র করে পরাজিত হন। রাজনীতিতে তিনি এখন উদ্বাস্তু। 

সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ: আওয়ামী লীগের ৭৫ পরবর্তী ছাত্র নেতাদের মধ্যে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় মনে করা হত সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদকে। তিনি শেখ হাসিনার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি যাদেরকে নিজ হাতে গড়ে তুলেছেন তাদের মধ্যে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ ছিল অন্যতম। কিন্তু তিনিও এক এগারোর সময় সংস্কারপন্থি হয়েছেন এবং সংস্কারপন্থি হওয়ার কারণেই তিনি পরবর্তীতে রাজনীতির মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান। ২০১৮ নির্বাচনে তিনি জাতীয় ঐক্য ফ্রন্ট থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেন। এবার তিনি আর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি। রাজনীতিতে তিনি এখন পথভ্রষ্ট এবং অস্তিত্বহীন। 

মাহমুদুর রহমান মান্না: মাহমুদুর রহমান মান্নাও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অতিথি পাখি হিসেবে ছিলেন। একদা বাম রাজনীতি করা মান্নাকে আওয়ামী লীগে নিয়ে আসা হয়েছিল। প্রত্যাশা থেকে তাকে সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মাহমুদুর রহমান মান্নাও এক এগারোর সময় সংস্কারপন্থি হয়ে যান। পরবর্তীতে তিনি নাগরিক ঐক্য নামের একটি মুদির দোকানের মত রাজনৈতিক দল খুলে কোন রকম অস্তিত্ব টিকানোর চেষ্টা করছেন বটে। তবে আদর্শ বিবর্তিত সুবিধা ভোগী এই রাজনৈতিক নেতা এখন মূল্যহীন। 

এভাবে আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে যারা ছিটকে পড়েছেন তারা নিজেরাই রাজনীতিতে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭