ইনসাইডার এক্সক্লুসিভ

বেনজীরকেও হার মানালেন মতিউর


প্রকাশ: 20/06/2024


Thumbnail

#দেশে-বিদেশে অঢেল সম্পদ, নামিদামী ব্র্যান্ডের গাড়ি
#ময়মনসিংহের ভালুকায় বিশাল জুতার কারখানা
#গাজীপুরে পিকনিক ও শুটিং স্পট 
# নরসিংদী শ্বশুর বাড়িতে রাজকীয় বাড়ি, রায়পুরায় রিসোর্ট
#ঢাকার অভিজাত এলাকাগুলোতে রয়েছে অসংখ্য প্লট-ফ্ল্যাট 
#দুই স্ত্রী নামে বেনামে সম্পদ

৩৭ লাখ টাকার গরু ও ১৫ লাখ টাকায় ছাগল কেনার খবরে মুহূর্তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় ওঠে মুশফিকুর রহমান ইফাত নামের এক তরুণকে নিয়ে। এই ছেলেটির এতো টাকা আসছে কোথায় থেকে এমন আলোচনায় বেরিয়ে আসে তার বাবা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্মকর্তা ড. মো. মতিউর রহমানের নাম। মতিউর বলেছেন ছেলেটি তার নয়। তখনই কেঁচো খুঁড়তে সাপের মতো একে একে বেরিয়ে আসে মতিউর রহমানের অঢেল সম্পদের খবর। দেশে-বিদেশের সম্পদের হিসাবে যেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদকেও হার মানায়িছে। 

একটি দৈনিকসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে এর মধ্যেই উঠে এসেছে মতিউরের সম্পদের খবর। জানা যায়, নরসিংদী, ময়মনসিংহের ত্রিশাল ছাড়াও গাজীপুরের পূবাইলে রিসোর্ট, শুটিংস্পট, বাংলো বাড়ি, জমিসহ নামে-বেনামে রয়েছে অঢেল সম্পদ। বরিশালেও রয়েছে তার সম্পদ। জানা গেছে , প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজকে বিপুল অর্থ খরচ করে বানিয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান। দ্বিতীয় স্ত্রী ব্যাংক কর্মকর্তা। তাদের নামেও রয়েছে সম্পদের পাহাড়। এর মধ্য প্রকাশ হয়েছে, কোরবানির পশু কিনে ভাইরাল যুবকটি মতিউরের দ্বিতীয় স্ত্রীর আগের ঘরের সন্তান। ব্যাংকার এই মহিলাই মতিউরের অনেক টাকা পয়সার লেন দেন করেন। 

আরো জানা যায়, শুধু দেশে নয় বিদেশে বাড়ি রয়েছে তার। তার ছেলের রয়েছে বিশ্বের নামিদামী ব্র্যান্ডের গাড়ির কালেকশন। এসব বিষয়ে ইতিমধ্যেই খোঁজ খবর নিতে শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। 



এ বিষয়ে ড. মো. মতিউর রহমান বাংলা ইনসাইডারকে বলেন, ‘কোরবানি উপলক্ষে ১৫ লাখ টাকার খাসি কিংবা গরু কিনে ভাইরাল হওয়া যুবক মুশফিকুর রহমান ইফাত আমার ছেলে নয়। এই নামে আমার কোন ছেলে নেই। সে আমার কোন দূরসম্পর্কের আত্মীয়ও না কিংবা তাকে আমি চিনিও না।’

তবে তার প্রতিবেশীদের বরাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন পোস্টে উঠে এসেছে যে এই ইফাত তার দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলে। এই ছেলের খায়েশ মেটাতে দামী গাড়ি-বাড়ি থেকে বিপুল দামের গরু, ছাগল কিনে দিতেও পিছপা হন না তিনি।  

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আলোচিত এনবিআর কর্মকর্তা ড. মো. মতিউর রহমানের ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ি ইউনিয়নের ঝালপাজা মৌজায় একটি শিল্প গোষ্ঠীর সাথে গ্লোবাল সুজ লিমিটেড নামে রয়েছে বিশাল এক জুতার ফ্যাক্টরি। এখানে প্রায় ৩শ বিঘা জমির জুড়ে রয়েছে গ্লোবাল সুজ লিমিটেড কারখানা, বাগানবাড়ি, দেশি-বিদেশী ফলের বাগান ও ফসলি জমি। জুতার ফ্যাক্টরিতে প্রায় ৪শ’ কর্মকর্তা ও কর্মচারী কাজ করে। এ ফ্যাক্টরির উৎপাদিত জুতা রপ্তানি হয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। 

কারখানার দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা কর্মীরা জানান, মাঝে মাঝে ফ্যাক্টরি পরিদর্শনে আসেন এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমান। সকালে এসে বিকালে চলে যান।

ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ি ইউনিয়নের ঝালপাঝা চেঁচ্চারমোড় থেকে বাম দিকে কিছুটা গেলেই দেখা মেলে আলোচিত এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমানের বিশাল জুতার কারখানা। ভালুকা উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মোর্শেদ আলম ওই জুতার কারখানা ও জমি দেখাশোনা করেন। স্থানীয় বাজার দরে ওই ৩ শত বিঘা জমির দাম প্রায় ১’শ কোটি টাকা। শুধু ভালুকা নয় গাজীপুরের পূবাইলেও রয়েছে মতিউর রহমানের বিশাল সাম্রাজ্য। 

পূবাইলের খিলগাঁওয়ের টঙ্গী ঘোড়াশাল সড়কের দক্ষিণ পাশে বিশাল এলাকা জুড়ে গড়ে তুলেছেন আপন ভুবন পিকনিক অ্যান্ড শুটিং স্পট। পূবাইল ইউনিয়ন ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, পূবাইলের খিলগাঁও মৌজায় ড. মো. মতিউর রহমানের নামে ৩৬৫৬ নং জোতে ০.২৭০০ একর (২৭ শতাংশ) এবং একই মৌজায় ৪২৪৯নং জোতে ০.১৪৪০ একর (১৪ শতাংশ) ভূমির নামজারি রেকর্ড রয়েছে। এছাড়া মো: মতিউর রহমান, তার স্ত্রী লায়লা কানিজ ও মেয়ে ফারজানা রহমানের নামে খিলগাঁও মৌজায় ৩৫৫৭ নং জোতে ০.৪৮১৬ একর (৪৮ শতাংশ), একই মৌজায় ৩৬৫২ নং জোতে ড. মো: মতিউর রহমানের স্ত্রী লায়লা কানিজ ও পুত্র আহমেদ তৌফিকুর রহমান (অর্ণব) এর নামে ০.৪৫১৬২৫ একর (৪৫ শতাংশ) ভূমির নাম জারির তথ্য পাওয়া যায়। চারটি নামজারিতে মোট এক একর ৩৪ শতাংশ জমি। আপন ভুবন পিকনিক এন্ড শুটিং স্পটের ম্যানেজার রাজিব হাসান জানান, আপন ভুবন পিকনিক এন্ড শুটিং স্পটের মালিক মতিউর রহমান নন, অন্য একটি শিল্প গোষ্ঠী। তবে মতিউর রহমান ও তার পরিবারের লোকজন মাঝেমাঝেই এই রিসোর্টে বেড়াতে আসেন।

পিকনিক এন্ড শুটিং স্পটের তত্ত্বাবধায়ক মো. মাসুদ জানান, স্থানীয় সামাদ মোল্লা, রহিমা বেগম, ইলিয়াস মোল্লা গংদের কাছ থেকে জমি লিজ ও বাৎসরিক ভাড়ায় নিয়ে ২০১৮ সালের দিকে স্পটটি চালু করা হয়। রিসোর্টটি প্রায় ২৫ বিঘা জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। 

এখানেই শেষ নয়, মতিউর রহমানের আমলনামা। মতিউর রহমানের বাড়ি বরিশালের মুলাদী উপজেলায়। ওই এলাকায় বাড়ি ঘর ছাড়াও তার নামে প্রায় ১ হাজার ৫শ বিঘা জমি রয়েছে। নরসিংদীর মরজালে তার স্ত্রী উপজেলা চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ লাকীর নামে ১শ বিঘা জমির উপর রয়েছে ওয়ান্ডার পার্ক অ্যান্ড ইকো রিসোর্ট। তার মেয়ে ফারজানা ইসপিতার নামে মরজাল বাসষ্ট্যান্ড ও আশপাশ এলাকায় ১০ বিঘা জমি রয়েছে। এছাড়াও ছেলে আহম্মদ তৌফিক অনুদ ও মেয়ে ফারজানা ইসপিতার নামে কমপক্ষে ৫০ বিঘা জমি রয়েছে। নাটোরের সিংড়ায় ২০ বিঘা জমি রয়েছে। স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকীর নামে নরসিংদীর রায়পুরায় মরজালে ৪ বিঘা জমির উপর রয়েছে সুরম্ম অট্টালিকা। 

শুধু তাই নয়, রাজধানীর অভিজাত এলাকায় মতিউর, তার স্ত্রী-সন্তান, আত্মীয়দের নামে-বেনামে ৪০টি প্লট আছে। গুলশান-২ এ শাহবুদ্দিন পার্কের উল্টোদিকে একটি ভবনে চারটি ফ্ল্যাট আছে। গুলশানের একটি ভবনে রয়েছে আটটি ফ্ল্যাট। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দুবাই ও যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে বিপুল পরিমাণ সম্পদ। স্ত্রী লায়লা কানিজের জনপ্রতিনিধি হওয়ার শখ পূরণে প্রভাব খাটিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা চেয়ারম্যান বানিয়েছিলেন। স্ত্রীর নামেও রয়েছে হাজার কোটি টাকার সম্পদ। এবারেও প্রার্থী হিসেবে মাঠে নেমেছেন তিনি। অর্থ-বিত্তের পাশে মতিউর রহমানের রয়েছে ঋণ কেলেংকারির ঘটনাও। সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে থাকাকালীন চামড়া ঋণ কেলেংকারির ঘটনায় জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে। তার এসব দুর্নীতির তথ্যে পাঁচবার তদন্ত কমিটি গঠন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কিন্তু কর্মকর্তাদের হাতের মুঠোয় নিয়ে ক্লিন চিট নিয়েছেন তিনি। 

এসব বিষয়ে জানতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্মকর্তা ড. মতিউর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তার মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠালেও উত্তর দেননি।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭