ইনসাইড বাংলাদেশ

সরকারি কর্তাদের লাগামহীন দুর্নীতি: অস্বস্তিতে সরকার


প্রকাশ: 21/06/2024


Thumbnail

একের পর এক সাবেক এবং বর্তমান সরকারি কর্মকর্তাদের লাগামহীন দুর্নীতির কাহিনী প্রকাশিত হচ্ছে। গণমাধ্যম অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে বিভিন্ন সময়ে সরকারি দায়িত্ব পালন করা ব্যক্তিদের এবং এখন দায়িত্ব পালন করছেন এরকম ব্যক্তিদের দুর্নীতির ফিরিস্তি প্রকাশ করেছে। আর এই সমস্ত ফিরিস্তি দেখে অনেকের গা শিউরে উঠছে। অনেকেই হতবাক।
 
আগে মনে করা হত যে, রাজনীতিবিদরা বোধহয় সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি করেন। কিন্তু সাধারণ মানুষের সেই ভুল ভেঙে গেছে। গত কয়েক মাসে একের পর এক ঘটনা জনগণকে হতবাক করেছে, বিস্মিত করেছে। আর এর ফলে সরকার একটি বড় ধরনের অস্বস্তির মধ্যে পড়েছে। সরকার এই সমস্ত দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তাদের দায় নেবে কেন—সেটা নিয়েও এখন প্রশ্ন উঠেছে। 

প্রথমে পুলিশের সাবেক প্রধান বেনজীর আহমেদকে নিয়ে উত্তাল হল। বেনজীর আহমেদের ব্যাপক দুর্নীতির ফিরিস্তি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হল। আদালতের নির্দেশে দুর্নীতি দমন কমিশন তার ব্যাপারে তদন্ত করতে গিয়ে যেন কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে এলো। তার অবৈধ সম্পদের হিসাব দেখে সবার গা শিউরে উঠল। এর পরপরই সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের দুর্নীতির গল্প প্রকাশিত হয়েছে। আরেক সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আছাদুজ্জামান মিয়ার সম্পদের বিবরণও এখন গণমাধ্যমের পাতায় পাতায়। 

গণমাধ্যমের চেয়েও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই সব দুর্নীতির তথ্যগুলো বেশি ছড়িয়ে পড়ছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ এবং হতাশা তৈরি হয়েছে। আছাদুজ্জামান মিয়াকে নিয়ে আলোচনার রেশ কাটতে না কাটতেই এনবিআরের সদস্য মতিউর রহমানের বিপুল সম্পদের ফিরিস্তি প্রকাশিত হয়েছে। একটি ছাগল কাণ্ডে ফেঁসে গেছেন মতিউর রহমান। তার কথিত ছেলে ইফাত সাদেক এগ্রো থেকে একটি ১৫ লাখ টাকার ছাগল কিনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেন এবং সেই সূত্র ধরে মতিউর রহমানের অবৈধ সম্পদের বিপুল উৎসের অনুসন্ধান করছে এখন সাধারণ মানুষ। যদিও মতিউর রহমান দাবি করেছেন যে, তিনি শেয়ার মার্কেটে লগ্নি করে বিপুল বিত্তের মালিক হচ্ছেন। কিন্তু খুব কম মানুষই তার এই কথা বিশ্বাস করে। আবার শেয়ার মার্কেটে যে বিনিয়োগের কথা বলা হচ্ছে সেটিও বৈধ এবং আইনি প্রক্রিয়ায় কি না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সব কিছু মিলিয়ে মতিউর রহমানের এই বিপুল সম্পদ যে বৈধ পন্থায় নয়—এটি মোটামুটি নিশ্চিত। তার দুই স্ত্রীর নামে তিনি যেভাবে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন, তাতে সাধারণ মানুষ হতবাক। 

প্রশ্ন উঠেছে যে সরকার তাহলে কী করছে? সরকার এই সমস্ত দুর্নীতি বা সরকারি কর্মকর্তাদের দায় নেবে নাকি দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে নির্মোহ এবং নিরপেক্ষ অবস্থান গ্রহণ করবে? সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে, সরকার কখনোই এই সমস্ত দুর্নীতিবাজদের দায় নেবে না। 

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের পরিষ্কার ভাবে বলেছেন, দুর্নীতিবাজদের কোন পরিচয় নেই। তিনি সরকারের লোক নন। তিনি বিরোধী পক্ষের লোক নন। তিনি একজন দুর্নীতিবাজ। তিনি এটিও বলেছেন যে, বেনজীর আহমেদের ব্যাপারে যেমন দুর্নীতি দমন কমিশন স্বাধীনভাবে তার ব্যবস্থা নিচ্ছে অন্যদের দুর্নীতির অভিযোগও দুদক খতিয়ে দেখবে এবং আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। 

তবে কেউ কেউ মনে করেন যে, এই সমস্ত দুর্নীতিবাজরা সরকারের ছত্রছায়া বেড়ে উঠেছে। এরা সরকারের কাছের লোক সেঁজে বেপরোয়া ভাবে দুর্নীতি করেছেন। ফলে সরকারের বদনাম হয়েছে। যদিও সরকারের প্রভাবশালী নেতারা এই ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তারা বলেছেন যে, আমলারা বেপরোয়া দুর্নীতিবাজ হয়ে উঠেছে—এটি ঢালাও ভাবে বলা ঠিক নয়। সরকার মনে করছেন যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আসছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচেছ। এখানে কেউই ছাড় পাচ্ছে না। এটিই সরকারের স্বচ্ছতার প্রমাণ।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭