এডিটর’স মাইন্ড

আবার চুক্তির হিড়িক: প্রশাসনে অস্বস্তি


প্রকাশ: 26/06/2024


Thumbnail

টানা চতুর্থ মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর আওয়ামী লীগ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সংস্কৃতি থেকে সরে এসেছিল। বেশ কয়েক জনকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। অবসরের পর তাদের স্থলে নতুন সচিব নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সরকার আবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সংস্কৃতিতে ফিরে গেছে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। চলতি মাসে অন্তত দুটি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। আরেকটি প্রজ্ঞাপন খুব শিগগিরই জারি হবে বলে জানা গেছে।

ইতোমধ্যে গত ৯ জুন পরিকল্পনা বিভাগের সচিব সত্যজিত কর্মকারকে এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এর রেশ কাটতে না কাটতেই সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরীকে এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ১ জুলাই থেকে তার এই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ কার্যকর হবে বলে দায়িত্বশীল সুযোগ নিশ্চিত করেছে। 

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়াকে এক বছরের জন্য আবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এটি হবে তার জন্য দ্বিতীয় মেয়াদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে এমনিতেই নেতিবাচক একটি মনোভাব রয়েছে। বিনা কারণে বারবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার ফলে একদিকে যেমন প্রশাসনের জট তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে মেধাবী এবং তরুণরা পদোন্নতি বঞ্চিত হচ্ছেন বলেও মনে করেন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা।

প্রশাসন ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন যে, একজন সচিবের যখন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয় তখন সেই ধারাবাহিকতায় অন্তত ৭ থেকে ১০ জনের পদোন্নতি ব্যাহত হয়। এইভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রশাসনের তরুণ ক্যাডাররা। 

উল্লেখ্য যে, ১৫ তম ব্যাচের একজন দু জনকে ইতোমধ্যে সচিব করা হয়েছে। ১৫ ব্যাচের একজন কর্মকর্তা অবসরে যাওয়ার পর তিনি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে এখন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। অন্যদিকে ১৫ তম ব্যাচের একজন এবার সচিব হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। সামনের দিনগুলোতে আরও কয়েকজনের সচিব হওয়ার কথা। কিন্তু এইভাবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জট আবার নতুন করে তৈরি হওয়ায় তাদের পদোন্নতি ব্যাহত হচ্ছে। এটি তাদের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি তৈরি করেছে। 

প্রশাসন ক্যাডারের একাধিক কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা গেছে যে, তারা মোটা দাগে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিরুদ্ধে। আবার যখন একজন সরকারি কর্মকর্তা তার চাকরির শেষ প্রান্তে উপনীত হচ্ছেন তখন তিনি চুক্তির জন্য মরিয়া হচ্ছেন। 

অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিবের বিষয়টি আলাদা। এটি প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়াধীন বিষয়। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। কারণ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কাজের ধরন একটি বিশেষায়িত এবং এই কাজের অভিজ্ঞতা দরকার। বাইরে থেকে হুট করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব হলে তিনি যথাযথ ভাবে দায়িত্ব পালন করতে নাও পারেন। এ রকম বিবেচনা থেকেই হয়তো তোফাজ্জল হোসেন মিয়াকে আবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এক বছর এই ‍চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ শেষ হলে মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন, যিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি স্বাভাবিকভাবে মুখ্য সচিব হবেন। ফলে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের কাজের গতিতে কোন সমস্যা হবে না। কারণ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন দীর্ঘদিন প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয়ের সঙ্গে যুক্ত। এ রকম বিবেচনা থেকে হয়তো তোফাজ্জল হোসেন মিয়াকে অবসর দিয়ে বাইরে থেকে নতুন কাউকে মুখ্য সচিব করার ঝুকি নিতে চায়নি সরকার। কিন্তু অন্যান্য সচিবদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিয়ে নানা রকম প্রশ্ন তুলেছে। এই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ফলে প্রশাসনে তৈরি হয়েছে এক ধরনের অস্থিরতা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭