ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

মুখোমুখি বাইডেন-ট্রাম্প: নির্বাচনী ফলাফলে কতটা প্রভাব ফেলে টেলিভিশন বিতর্ক?


প্রকাশ: 27/06/2024


Thumbnail

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রথমবারের মতো বিতর্কে অংশ নিতে যাচ্ছেন জো বাইডেন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ার আটলান্টায় এই দুই নেতার মধ্যে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। এই বিতর্কের আয়োজক সিএনএন ও এবিসি। 

জানা গেছে, বর্তমান ও সাবেক এই প্রেসিডেন্টদের মধ্যে ৯০ মিনিটের টেলিভিশন বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। যা যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে শুরু হবে (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সকাল ৭টা)।

এদিন বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মানুষের নজর থাকবে এই বিতর্কে। ২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে ট্রাম্পের প্রথম বিতর্ক দেখেছিলেন প্রায় সাড়ে ৮ কোটি মানুষ।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে প্রার্থীদের মুখোমুখি বিতর্ক দর্শকদের জন্য বেশ আগ্রহোদ্দীপক বিষয়। গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ, গুরুগম্ভীর কথা, হাসিঠাট্টা, তির্যক মন্তব্য, পাল্টাপাল্টি আক্রমণ, গোলমাল, বিশৃঙ্খলা, এমনকি কেলেঙ্কারির নজিরও আছে এসব বিতর্কে। বিগত ৬০ বছরের বেশি সময়ের এমন বিতর্কের কিছু স্মরণীয় ঘটনা দেখে নেওয়া যাক।

কেনেডি-নিক্সন

১৯৬০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর। বিতর্কে মুখোমুখি হয়েছিলেন জন এফ কেনেডি ও রিচার্ড নিক্সন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এই বিতর্ক টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়। ভোটারদের মধ্যে রাজনীতিবিদদের ভাবমূর্তি গড়তে এই বিতর্ক যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, তা তখন প্রতিষ্ঠিত হয়।

দেশটির দুবারের ভাইস প্রেসিডেন্ট নিক্সন নির্বাচনে জয়ী হবেন বলে বিতর্কের আগে ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু বিতর্ক তাঁর জন্য ভালো ফল বয়ে আনেনি।

টেলিভিশনের পর্দায় আসার আগে নিক্সন মেকআপ নিতে অস্বীকৃতি জানান। ৬ কোটি ৬০ লাখ দর্শকের সামনে তাঁকে বেশ ফ্যাকাশে ও ঘর্মাক্ত দেখায়।

নিক্সনের বিপরীতে টেলিভিশনের পর্দায় ম্যাসাচুসেটসের তরুণ সিনেটর কেনেডিকে বেশ ঝাঁ–চকচকে ও ফুরফুরে দেখা যায়। নিক্সন বারবার উপস্থাপকের দিকে তাকাচ্ছিলেন। তাঁকে উদ্দেশ করে কথা বলছিলেন। কিন্তু কেনেডির দৃষ্টি ছিল সরাসরি ক্যামেরার দিকে। ক্যামেরায় ভোটারদের দিকে তাকিয়ে তিনি নিজের মনোভাব জানিয়ে দিয়েছিলেন।

বিতর্কের প্রভাব পড়েছিল ব্যালট বাক্সে। রিপাবলিকান নিক্সনকে হারিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন ডেমোক্র্যাট দলের কেনেডি।

ফোর্ড-কার্টার

রিপাবলিকান দলের জেরাল্ড ফোর্ড ও ডেমোক্র্যাট দলের জিমি কার্টার প্রথমবারের মতো বিতর্কে অংশ নিয়েছিলেন ১৯৭৬ সালের ৬ অক্টোবর। এই বিতর্কে ২৭ মিনিট অডিও ছিল না।

দ্বিতীয় বিতর্ক তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফোর্ডের পক্ষে যায়নি। তিনি একটি বড় ভুল করে বসেন, যার মাশুল তাঁকে দিতে হয় নির্বাচনে। বিতর্কে ফোর্ড বলেছিলেন, পূর্ব ইউরোপে সোভিয়েত ইউনিয়নের কোনো আধিপত্য নেই আর ফোর্ড প্রশাসনের অধীন তা কখনোই হবে না।

তখন স্নায়ুযুদ্ধ চরমে। আর পূর্ব ব্লকে সোভিয়েত সেনা মোতায়েন ছিল। দিন কয়েক পরে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেন ফোর্ড। তবে তত দিনে যা ঘটার ঘটে গেছে। ভোটারদের মন জয় করে ফেলেছেন কার্টার। নির্বাচনে জিতে প্রেসিডেন্ট হন কার্টার।

রিগ্যান-মন্ডেল

১৯৮৪ সালের ২১ অক্টোবর বিতর্কে মুখোমুখি হন রিপাবলিকান রোনাল্ড রিগ্যান ও ডেমোক্র্যাট ওয়াল্টার মন্ডেল। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রিগ্যানের বয়স তখন ৭৩ বছর আর মন্ডেলের ৫৬। বয়স নিয়ে মজার উত্তর দিয়ে বিতর্কের মোড় নিজের দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন রিগ্যান।

বয়সের কথা উল্লেখ করে রিগ্যানের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য তিনি পুরোপুরি উপযুক্ত কি না? জবাবে মজার ছলে রিগ্যান বলেছিলেন, তিনি তাঁর প্রতিপক্ষের তারুণ্য ও অনভিজ্ঞতাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করবেন না। এমন উত্তর ভোটারদের মধ্যে দারুণ সাড়া ফেলেছিল। নির্বাচনে জিতে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন রিগ্যান।

বুশ-ক্লিনটন-পেরোট

১৯৯২ সালের ১৫ অক্টোবর। দ্বিতীয় বিতর্কে মুখোমুখি হন জর্জ বুশ, বিল ক্লিনটন ও রস পেরোট। বুশ রিপাবলিকান প্রার্থী, ক্লিনটন ডেমোক্র্যাট, আর পেরোট নির্দলীয়।

ক্লিনটন যখন একজন দর্শকের সঙ্গে কথা বলছিলেন, তখন বুশ তাঁর ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছিলেন। এই ঘটনা ক্যামেরায় ধরা পড়ে। ভোটারেরা বুশের এমন আচরণ ভালো চোখে দেখেননি। নির্বাচনে জয় পান ক্লিনটন। বছরখানেক বাদে বুশ বলেছিলেন, তিনি এমন বিতর্ক ঘৃণা করেন।

ওবামা-রমনি

বারাক ওবামা ও মিট রমনি বিতর্কে অংশ নিয়েছিলেন ২০১২ সালের ২২ অক্টোবর। এতে রিপাবলিকান রমনি বলেছিলেন, ১৯১৬ সালে মার্কিন নৌবাহিনীর যত জাহাজ ছিল, এখন তার চেয়ে কম আছে।

রমনির এই বক্তব্য লুফে নেন ওবামা। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে ঘোড়া ও বেয়নেটও কম আছে। কেননা, আমাদের সামরিক বাহিনীর ধরনই বদলে গেছে। আমাদের আছে বিমানবাহী রণতরি। এতে উড়োজাহাজ অবতরণ করে। আছে জলের তলে চলাচলকারী পারমাণবিক সাবমেরিন।’

ওবামার এ বক্তব্য অনলাইনে ভাইরাল হয়ে যায় আর নির্বাচনে জিতে প্রেসিডেন্ট হন ওবামা।

ট্রাম্প-হিলারি

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও হিলারি ক্লিনটন দ্বিতীয় বিতর্কে মুখোমুখি হন ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর।

হিলারির স্বামী সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। বিতর্কে তাঁর যৌন কেলেঙ্কারি, হিলারির নিজের ই-মেইল কেলেঙ্কারিসহ নানা বিষয় সামনে এনে তাঁর বিরুদ্ধে একের পর এক আক্রমণ শানেন ট্রাম্প।

জবাব দিতে গিয়ে হিলারি বলেন, এটা খুবই ভালো দিক যে ট্রাম্পের মতো মেজাজের কেউ যুক্তরাষ্ট্রের আইন বিভাগের দায়িত্বে নেই।

ট্রাম্পও চটজলদি জবাব দেন, ‘তাহলে আপনি কারাগারে থাকতেন।’

২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্প জয়ী হন।

বাইডেন-ট্রাম্প

জো বাইডেন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়েন। সে বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর তাঁরা প্রথম বিতর্কে অংশ নেন। বিতর্কে তাঁরা একে অপরকে নিয়ে অপমানসূচক কথা বলেন। এমনকি চিৎকার করেও কথা বলেন।

বিতর্কে বাইডেন যখন কথা বলছিলেন তখন বারবার তাঁকে থামানোর চেষ্টা করতে দেখা যায় ট্রাম্পকে। একপর্যায়ে বিরক্ত হয়ে বাইডেন মেজাজ হারান। তিনি বলেন, ‘আপনি কি চুপ করবেন?’

ট্রাম্পকে ‘ভাঁড়’ ও ‘পুতিনের কুকুরছানা’ বলেও কটূক্তি করেন বাইডেন।

নির্বাচনের ফলাফল যা-ই হোক না কেন, মেনে নেবেন কি—এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যান ট্রাম্প।

বাইডেন-ট্রাম্পের এ বিতর্ক সঞ্চালনায় ছিলেন ফক্স নিউজের সাংবাদিক ক্রিস ওয়ালেস। পরে তিনি বিতর্কে দুই নেতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার ঘটনাকে ‘হতাশাজনক’ বলে বর্ণনা করেন।

নির্বাচনে ট্রাম্পকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট হন বাইডেন। তবে এই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ আনেন ট্রাম্প। তিনি তাঁর পরাজয় এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেননি।


আগামী ৫ নভেম্বর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। বিশ্বজুড়ে নানা সংকটের মধ্যেই এবার নির্বাচন হতে যাচ্ছে দেশটিতে।

এরই মধ্যে মার্কিন রাজনীতি নিয়ে মানুষ বিভক্ত হয়ে পড়েছে। অনেক মার্কিন ভোটারেরই আশঙ্কা নির্বাচনের পরে সংঘাত ছড়িয়ে পড়াতে পারে।

এদিকে নোবেলজয়ী ১৬ অর্থনীতিবিদ এক বিবৃতিতে বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প আবার প্রেসিডেন্ট হলে যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

তারা বলেন, আমরা মনে করি ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের জন্য এলে বিশ্ব অর্থনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের ওপর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ও যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে অস্থিতিশীলতা তৈরি হবে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭