ইনসাইড পলিটিক্স

আওয়ামী লীগে ৫ মাসে ২৮ খুন


প্রকাশ: 29/06/2024


Thumbnail

গত বুধ ও বৃহস্পতিবার দুই দিনে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জে তিনজন আওয়ামী লীগ নেতা খুন হয়েছে। তারা হলেন রাজশাহীর বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে খুন হন জেলা পরিষদের সদস্য এবং নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় দিনে-দুপুরে কুপিয়ে হত্যা করা হয় কাশিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক সুরজ মিয়াকে। 

তিনটি খুনের ঘটনাই ঘটেছে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে। এর মধ্যে বাঘায় খুনের ঘটনার পেছনে স্থানীয় দলিল লেখক সমিতি সরকারি ফির বাইরে বাড়তি যে চাঁদা আদায় করে, সেই চাঁদার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ইট–বালু ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে খুনের ঘটনা ঘটে। এ দুটি খুনের ঘটনায় আক্রমণকারী ও নিহত দুই পক্ষই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে খুনের ঘটনার কারণ আধিপত্য বিস্তার। এর পেছনে রাজনৈতিক যুক্ততার বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়। 

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় দিনে-দুপুরে কুপিয়ে হত্যা করা হয় কাশিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক সুরজ মিয়াকে। 
অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জর্জরিত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে খুনোখুনি থামছেই না। তৃণমূলের নেতা থেকে সংসদ সদস্য কেউ বাদ যাচ্ছেন না। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে সরকারদলীয় সংসদ সদস্যসহ ২৮ নেতা খুন হয়েছেন। প্রায় সব ঘটনাতেই আক্রমণকারী ও ভুক্তভোগী দুই পক্ষই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকেরা বলছেন, অভ্যন্তরীণ বিভেদ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে রাজনৈতিকভাবে এর সমাধানের কোনো পথ তাঁরা খুঁজে পাচ্ছেন না। হত্যাকাণ্ডের পর আইনি প্রক্রিয়ায় ঘাতকের বিচার করাই এখন লক্ষ্য। তবে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা প্রভাবশালী কোনো না কোনো পক্ষের ছত্রচ্ছায়ায় থাকেন। তাই সঠিক ও যথাসময়ে বিচার সম্পন্ন করাও কঠিন। 

গত জাতীয় সংসদ ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিরোধী দল অংশ নেয়নি। প্রতিটি ভোটেই আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ ছিল আওয়ামী লীগ। ফলে দলীয় কোন্দল আরও বেড়েছে। এর সঙ্গে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার এবং দখল, চাঁদাবাজি, চোরাকারবারির নিয়ন্ত্রণসহ নানা কারণে আগে থেকেই কোন্দল ছিল। 

চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে সরকারদলীয় সংসদ সদস্যসহ ২৮ নেতা খুন হয়েছেন। প্রায় সব ঘটনাতেই আক্রমণকারী ও ভুক্তভোগী দুই পক্ষই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাবে, ২০১৮ সাল থেকে গত মে পর্যন্ত ছয় বছরে ২০২ জন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থক অভ্যন্তরীণ সংঘাতে মারা গেছেন।

অভ্যন্তরীণ সংঘাত ও প্রাণহানির ঘটনাগুলোকে বিচ্ছিন্ন বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।

তিনি বলেন, বিভেদ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে এমন নয়। দল বড়, বিপুল নেতা-কর্মী-সমর্থক রয়েছেন। এর মধ্যে কিছু আগাছা ঢুকে পড়েছে। তবে কেউ বিশৃঙ্খলা করলে সাংগঠনিকভাবে দল ও আইনিভাবে রাষ্ট্র ব্যবস্থা নিচ্ছে। 

আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, গত ১৫ বছরে সরকার বিপুল উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। সরকারি কেনাকাটায় কমিশন আদায় এবং হাট-ঘাট, পরিবহন খাতেও বিপুল চাঁদাবাজি করে অর্থ বানানোয় অনেকে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে যেকোনো মূল্যে আধিপত্য ধরে রাখতে মরিয়া আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এ জন্যই সংঘাত ও প্রাণহানি ঠেকানো যাচ্ছে না।

 (তথ্যসূত্র: প্রথমআলো, ২৯ জুন ২০২৪)


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭