ইনসাইড গ্রাউন্ড

হতাশা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বিশ্বজয়ের গল্প রোহিত-কোহলিদের


প্রকাশ: 30/06/2024


Thumbnail

১৯৮৩ তে কপিল দেব। এরপর ২০০৭ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত মহেন্দ্র সিং ধোনির ট্রেবল। তারপর যেন সবকিছুই নিস্তব্ধ হয়ে ছিল একটা লম্বা সময় ধরে। অধিনায়কের পর অধিনায়ক বদল, ট্যাক্টিকস-কোচ-প্রতিপক্ষ সবখানেই পরিবর্তন। কিন্তু কোন কিছুতেই যেন কাজ হচ্ছিল না। বারবার সেমি অথবা ফাইনালে হার নিয়ে মাঠ ছাড়তে হচ্ছিল রোহিত-কোহলিদের। যার জন্য ‘নব্য চোকার’ তকমাটাও লাগার আভাস পাওয়া যাচ্ছিল ভারতের নামের পাশে। কিন্তু অবশেষে সকল অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে টানা ১১ বছর পর শিরোপা খরা কাটলো ভারতের। আসল ‘চোকার্স’ খ্যাত দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে নবম টি-২০ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন হলো রাহুল দ্রাবিড়ের শিষ্যরা।

শনিবার (২৯ জুন) বার্বাডোসের কেনসিংটন ওভালে প্রোটিয়াদের ৭ রানে হারায় রোহিত শর্মার দল। টস জিতে ভিরাট কোহলির অর্ধশতকে ১৭৬ রানের পুঁজি পায় টিম ইন্ডিয়া। জবাবে নির্দিষ্ট ওভার শেষে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৬৯ রান তুললে সক্ষম হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। এনিয়ে ১১ বছর পর আইসিসি ইভেন্টের চ্যাম্পিয়ন হল নীল শিবির।

শেষবার ২০১৩ সালে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিরোপা জিতেছিল তারা। ২০০৭ সালের পর দ্বিতীয়বার এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ডের পর তৃতীয় দল হিসেবে দুটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন হল তারা।

এদিন ভারত শিরোপা তো জিতলোই। সাথে জিতলো কোটি ভক্তের হৃদয়। কারণ এ জয় শুধু যে তাদের দলের তা নয়। এ জয় ১৪০ কোটি ভারতীয়সহ আরও বহু ভক্তেরও। কারণ এই জয়ের জন্য তাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে ১১টি বছর। 

গতরাতে ভারত বিশ্বকাপ জেতার পাশাপাশি সকলকে দিয়ে গেছে বাস্তব জীবনের কিছু শিক্ষা। যেখানে যেমন রয়েছে একজন হতাশাগ্রস্থ মানুষের অধ্যায়, ঠিক তেমনই রয়েছে ঘুরে দাঁড়িয়ে বিশ্ব জয়ের গল্পও।

বাস্তব জীবনের এই শিক্ষার লিডার হলেন রোহিত শর্মা। বিশ্বকাপের ঠিক আগেই আইপিএলে হারালেন মুম্বাইয়ের অধিনায়কত্ব। ব্যাটেও পাচ্ছিলেন না আশানুরূপ রান। এতে করেই অনেকে ভেবে নিয়েছিল অধিনায়ক হিসেবে তিনি শেষ। তবে কথায় আছে না, সোনাকে যতই ঘষা মাজা করো সেটা সোনাই থাকে। আর গতরাতের ফাইনালের মধ্য দিয়ে সেটিই প্রমাণ করলেন রোহিত। ক্রিকেটকে কেন ক্যাপ্টেন্স গেম বলা হয়, তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হয়ে রইলো রোহিতের এদিনের সব কার্যক্রম।

শুধু রোহিত নয়, এই গল্পের মহাকাব্যিক বিরাট কোহলি। যে কোহলিকে নিয়ে এই টুর্নামেন্ট শুরুর পূর্বে সমালোচনার শেষ ছিল না, ভারতের ক্রিকেটাঙ্গনে যেখানে ‘বিরাট হটাও’ রোল উঠেছিল; সেই কোহলিই যেন বিশ্বজয়ের নায়ক হয়ে রইলেন। এবারের আসরে ওপেনার হিসেবে পুরো টুর্নামেন্টেই ফ্লপ ছিলেন কোহলি। তবে নিজের সেরাটা যেন শেষের জন্যই জমিয়ে রেখেছিলেন তিনি। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দল যখন ধুঁকছিল, ঠিক তখনই নিজের সামর্থ্যের পরিচয়টা দিলেন ব্যাট হাতে। খেললেন চওড়া এক ইনিংস।

রিশাভ পান্ট? তার তো বেঁচেই থাকার কথা না। বেঁচে থাকা যদি অলৌকিক হয়, তার পায়ে হাটা আরো বড় অবিশ্বাস্য ব্যাপার। অথচ সেই মানুষটাই বিশ্বজয়ের আসরে দেখালেন পাগলাটে সব শটের বাহার। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রাখলেন প্রয়োজনীয় অবদান।

হার্দিক পান্ডিয়ার কথা আলাদাভাবে বলতেই হয়। স্ত্রীর কাছে প্রতারিত হলেন। আইপিএলে অধিনায়কত্ব পেলেন ঠিকই কিন্তু পারিবারিক অশান্তির ফলে দল ও ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স যারপরনাই বাজে। বিশ্বকাপের আগে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় থাকা মানুষই ফাইনালে ভারতকে ম্যাচে ফিরিয়েছেন। ফিরে আসার গল্পের অন্যতম বড় নায়ক তো তিনিই।

জাসপ্রিত বুমরাহ তো ম্যাজিশিয়ান। অবিশ্বাস্যভাবে প্রতিটি ম্যাচে পারফর্ম করে গেছেন। ভারতের চিট কোড হিসেবে দলের সবচেয়ে বড় ইমপ্যাক্ট খেলোয়াড় তিনি। যার জন্য পেয়েছেন টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কারও।

সূর্যকুমার যাদব তো ফাইনাল ওভারের প্রথম বলে ক্যাচ নেননি। নিয়েছেন ভারতের ১১ বছরের অপেক্ষার শিরোপা। ফিল্ডিং যে কীভাবে একটা ম্যাচকে বদলে দিতে পারে তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ তিনিই।

এভাবে প্রত্যেককে নিয়ে ছোটবড় গল্প লেখা যাবে। আক্সার প্যাটেল থেকে শুরু করে শিভম দুবে, রবীন্দ্র জাদেজা বা আর্শদীপ সিং... ভারতের প্রতিটি ক্রিকেটারই একেকটা চ্যাম্পিয়ন। শিরোপা জেতার যোগ্য দল তাদের চেয়ে আর কে আছে?

ক্রিকেটকে অনেকেই জীবনের সঙ্গে তুলনা করেন। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের শিক্ষা পাওয়া যায় একটা ক্রিকেট ম্যাচ থেকে। হারার আগে যারা হারতে জানে না, জয়টা হয় তাদেরই। যার উদাহরণ ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ফাইনাল ম্যাচ!



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭