ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

গ্রেপ্তার আতঙ্কে পলাতক ধর্মগুরু, কৃষক পরিবারে জন্ম নেওয়া ভোলে বাবার আদি-অন্ত


প্রকাশ: 03/07/2024


Thumbnail

গতকাল মঙ্গলবার (২ জুলাই) বিকেলে ভারতের হাথরস জেলার রতি ভানপুর গ্রামে ভোলে বাবা নামক এক কথিত ধর্মগুরুর অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গিয়ে প্রাণ হারান ১২ জন। কিন্তু এখন জনতার কাছে প্রশ্ন এসেছে এই ভোলে বাবা যিনি নারায়ণ সরকার হরি নামেও পরিচিত তিনি আসলে নিজেকে ধর্মগুরু হিসাবে ঘোষণা দিয়ে এতো বড় দূর্ঘটনার পর কেন পলাতক রয়েছেন। মুলত তাকে কেন্দ্র করেই পুণ্যার্থীরা জড়ো হয়েছিলেন এই ধর্মীয় আচার পালনে।

আজ বুধবার (৩ জুলাই) সকালে স্থানীয় কর্মকর্তারা জানান ঘটনার পর থেকেই তিনি পলাতক রয়েছেন। এদিকে এ ঘটনায় আহত অনেককে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

তবে এক আয়োজনে পদদলিত হয়ে এত মানুষ কীভাবে মারা গেলেন, সেই প্রশ্নের বিষয়ে উত্তর প্রদেশের মুখ্য সচিব মনোজ কুমার সিং বলেন, পদদলিত হয়ে মৃত্যুর ঘটনার পেছনে বড় একটি কারণ অধিক ভিড়। প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে অনেকেই ভোলে বাবার গাড়ির পেছনে দৌড়াচ্ছিলেন। ভোলে বাবা যে পথে যান, পূজা করার জন্য সেই পথের ধুলোমাটি সংগ্রহ করেন অনেকে। এসব কারণে একের পর এক মানুষ পড়ে গিয়ে পদদলিত হন।’

এ ঘটনায় একটি এফআইআর করা হয়েছে। তাতে উল্লেখ আছে, ধর্মীয় ওই আয়োজনে ৮০ হাজার মানুষ জড়ো হওয়ার অনুমতি থাকলেও জমায়েত হয়েছিল আড়াই লাখের বেশি মানুষের।

প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে মানুষ একপর্যায়ে সেখানকার মাঠে পূণ্যার্থীরা ঢোকার চেষ্টা করলে ওই সময় ভোলে বাবার ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মীরা বাধা দিলে এতে মানুষের চাপ আরও বেড়ে যায়। পরে ধাক্কাধাক্কিতে অনেকে মাটিতে পড়ে পদদলিত হয়ে মারা যান। আর এমনটাই এফআইআরে।

প্রত্যক্ষদর্শী শকুন্তলা দেবী বলেন, ধর্মীয় আয়োজন শেষ হওয়ার পরপর একসঙ্গে অনেক মানুষ বের হয়ে আসছিলেন। রাস্তায় বেরিয়েই প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্য পড়ে পদদলিত হয় মানুষ।

সুরেশ নামের আরও একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আমি এখানে এসেছিলাম। আমার ছোট ভাইয়ের স্ত্রীকে এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। আরও অনেকেই নিখোঁজ রয়েছেন। মাইকে ঘোষণা দিলেও কোনো লাভ হয়নি।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, ভোলে বাবা প্রায়ই তার ভক্তদের কাছে দাবি করে থাকেন তিনি গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করেছেন। তিনি ভক্তদের আরও বলে থাকেন, গোয়েন্দা কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করার সময়ই আধ্যাত্মিকতার দিকে ঝুঁকে পড়েন এবং ১৯৯০ সালে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। সাধারণ কৃষক পরিবার থেকে উঠে আসা সুরাজ একসময় উত্তরপ্রদেশ পুলিশের গোয়েন্দা শাখার হেড কনস্টেবল ছিলেন। পরে ১৯৯৯ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে ধর্মীয় বাণী প্রচারে মন দেন এবং নিজের নাম পরিবর্তন করে নারয়ণ সাকার হরি রাখেন।

পুলিশের চাকরি ছাড়ার পর সুরজ নিজের নামও বদলে ফেলেন। নতুন নাম নারায়ণ সাকার হরি। এই নামেই এখন তিনি পরিচিত। ভক্তরা তাকে এই নামে অথবা ভোলে বাবা বলে সম্বোধন করেন।

ভারতে ছড়িয়ে থাকা হাজার হাজার বাবাজির থেকে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আলাদা এই এই ব্য়ক্তি। তার সঙ্গে থাকেন স্ত্রী প্রেমবতী।

ভক্তদের অবশ্য বাবাজি বলেন, তিনি এখনো মাটির ঘরে থাকেন। পায়ে হেঁটে গোটা উত্তরপ্রদেশ ঘুরে প্রচার করেন তিনি।

গণমাধ্য়মের সামনে খুব বেশি আসতে দেখা যায় না এই বাবাজিকে। তবে ২০২২ সালে কোভিডের সময় বিতর্কে জড়িয়ে ছিলেন এই ব্য়ক্তি। উত্তরপ্রদেশের ফারুকাবাদে একটি সৎসঙ্গ সভা করতে চেয়েছিলেন তিনি। তখন কোভিডের ভরা সময়।

সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, ভোলে বাবা উত্তরপ্রদেশের ইতাহ বিভাগের বাহাদুর নগরী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং সেখানেই প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। তিনি দাবি করেন, কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে গোয়েন্দা বিভাগে কাজ শুরু করেন।

ভোলে বাবার অন্যতম একটি আলাদা দিক হলো তিনি ভারতের অন্যান্য ধর্মগুরুর মতো জাফরান রঙের পোশাক পরেন না। এর বদলে সাদা স্যুট এবং টাই পরেন। আর তার পছন্দের তালিকায় রয়েছে কুর্তা-পায়জামা।

ভক্তদের কাছে কথিত এই ধর্মগুরু বলে থাকেন, তারা তাকে যেসব অর্থ দেয় তার কিছুই নিজের জন্য রাখেন না। এসব জমাকৃত অর্থ ভক্তদের পেছনেই সব ব্যয় করে থাকেন।

তিনি জানিয়েছেন, কাজ করতে করতেই আধ্য়াত্মিক জীবনে ঢুকে পড়েন তিনি। এবং সে কারণেই পুলিশের চাকরি ছেড়ে দেন। বস্তুত, ভক্তদের তিনি বলেন, হরি অর্থাৎ, ঈশ্বরের সন্তান তিনি।

অন্যদিকে হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, যেখানে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল সেখানকার আবহাওয়া প্রচণ্ড গরম ও আদ্র ছিল। এরমধ্যে অস্থায়ী তাঁবু গেড়ে সেখানে অনুষ্ঠানটি করা হয়েছিল। ওই তাঁবুর ভেতর থাকা মানুষ একটা সময় দমবন্ধকর পরিস্থিতিতে পড়েন। এরপর অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর দ্রুত বের হয়ে গেলে অনেকে পদদলিত হয়ে নিহত হন।

এদিকে তার খোঁজে উত্তরপ্রদেশ পুলিশের একটি দল সিকান্দাররাউয়ের ঘটনাস্থলে গিয়েছে এবং অপর একটি দল গিয়েছে বাবা নারায়ণ হরির মূল আশ্রম ফুলর রাম কুটির চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ভবনে। তবে তিনি সেখানে ছিলেন না।

পুলিশ জানায়, ‘আমরা তার সার্বক্ষণিক গতিবিধি সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখছি। বর্তমানে তিনি তিনি মাইনপুরি গ্রামের একটি আশ্রমে অবস্থান করছেন। এই আশ্রমটির সিকান্দাররাউ থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।’

উল্লেখ্য গত মঙ্গলবার সিকান্দাররাউয়ের ফুলরাই গ্রামে বাবা নারায়ণ হরির ‘সৎসঙ্গ’ বা ধর্মীয় সভা ছিল। লক্ষাধিক ভক্ত তার বাণী শুনতে সেই সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন। সভা শেষে লোকজন বেরিয়ে যাওয়ার সময় পদদলিত হয়ে নিহত হন অন্তত ১১৬ জন।

এ ঘটনায় ইতোমধ্যে সভার আয়োজক সংস্থা মানব মঙ্গল সদ্ভাবনা অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করেছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। ঘটনার তদন্তে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটিও গঠন করা হয়েছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭