ইনসাইড বাংলাদেশ

নববধূকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ মানবাধিকার কমিশনের


প্রকাশ: 03/07/2024


Thumbnail

নড়াইলে স্বামীর সঙ্গে ঘুরতে গিয়ে বখাটেদের হাতে শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণ চেষ্টার শিকার হয়েছেন এক নববধূ। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে গ্রাম্য সালিশে ঘটনার দুইদিন পর ১ লাখ ২৫ হাজার টাকায় ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়া চেষ্টা করা হয়। কিন্তু জরিমানার টাকার পরিমাণ বেশি হওয়ায় তা প্রত্যাখ্যান করেন অভিযুক্তের বড় ভাই। এরপর তা কমে দাঁড়ায় মাত্র ৩০ হাজার টাকায়।

এ ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। বুধবার (৩ জুন) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে সংস্থাটি।

জানা গেছে, গত ৩০ জুন, ২০২৪ তারিখে নড়াইলে  দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত “নববধূর ‘ইজ্জতের মূল্য’ সোয়া লাখ থেকে কমে ৩০ হাজার টাকা!”- এমন এক চাঞ্চল্যকর সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দৃষ্টিগোচর হওয়ায় কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ওই নববধূর পক্ষে অভিযোগ (সুয়োমটো) গ্রহণ করেছে। কমিশনের সদস্য মোঃ সেলিম রেজা স্বাক্ষরিত এক সুয়োমটোর আদেশবলে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নড়াইল পুলিশ সুপারকে অবহিত করা হয়। একইসঙ্গে এই আদেশের অনুলিপি জেলা প্রশাসক, জেলা মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধ ও সুরক্ষা কমিটি, নড়াইল বরাবর প্রেরণের পাশাপাশি পুলিশ মহাপরিদর্শক, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এবং সচিব, জননিরাপত্তা বিভাগ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবরও এর অনুলিপি পাঠানো হয়েছে।

সেই সংবাদ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, নড়াইলের কালিয়া উপজেলার চাঁচুড়ী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২২ জুন বেলা ১১টার দিকে উপজেলার চাঁচুড়ী বিল এলাকায় মৎস্য ঘেরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে স্বামীর সঙ্গে ঘুরতে বের হন এক নববধূ। এ সময় ওই মৎস্য ঘেরে উপজেলার চাঁচুড়ী গ্রামের চিহ্নিত বখাটে ও মাদকাসক্ত আহাদ মোল্যা ও একই গ্রামের রানা মুসাল্লী ওরফে ফেলা ভুক্তভোগী নারীর স্বামীর ওপর হামলা চালিয়ে তাকে ধরে দূরে নিয়ে আটকে রেখে মারধর করে ও হত্যার হুমকি দেয়। পরে আহাদ মোল্যা ওই নারীকেও চড়-থাপ্পড় মেরে শ্লীলতাহানি ও জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা চালায়। এসময় সঙ্গে থাকা স্বর্ণালংকার, আইফোন ও নগদ কিছু টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।

এ ঘটনায় ওইদিন রাতেই ভুক্তভোগী নারীর স্বামী বাদী হয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত আহাদ মোল্যা ও রানা মুসাল্লীকে অভিযুক্ত করে কালিয়া থানায় ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ দায়ের করলেও অজ্ঞাত কারণে ঘটনার প্রায় ৯দিন অতিবাহিত হওয়ার পরেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশের কোন ব্যবস্থা না নেওয়ার বিষয়টি ভুক্তভোগীর পরিবার জানায়।

উল্লেখ্য, অভিযুক্ত বখাটে আহাদ মোল্যা (৩৫) উপজেলার চাঁচুড়ী গ্রামের বাসিন্দা মোশারফ হোসেন মোল্যার ও রানা মুসাল্লী ওরফে ফেলা (৩০) একই গ্রামের মহিদুল মুসাল্লীর ছেলে।

পরে গ্রাম্য এক সালিশে বিষয়টি দফারফা করতে প্রথমে হামলার শিকার নববধূর (১৯) ইজ্জতের মূল্য ধার্য্য করা হয় এক লাখ ২৫ হাজার টাকা! পরে তা কমে দাঁড়ায় মাত্র ৩০ হাজার টাকায়। তারপরও অভিযুক্তের পরিবার প্রভাবশালী হওয়ায় দুই দফায় গ্রাম্য সালিশ বৈঠক হলেও জরিমানার কোন টাকা দেওয়া হয়নি নববধূর পরিবারকে।

জানা যায়, ঘটনার দুইদিন পর ২৪ জুন রাতে চাঁচুড়ী গ্রামের উত্তর পাড়ার বাসিন্দা ফসিয়ার রহমান শেখের বাড়িতে প্রথম দফার গ্রাম্য সালিশে এক লাখ ২৫ হাজার টাকায় ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়া চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এই গ্রাম্য সালিশে প্রতিপক্ষের সালিশদার চাঁচুড়ী পুরুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও অভিযুক্ত আহাদ মোল্যার বড় ভাই প্রভাবশালী মো. আশরাফুল ইসলাম জরিমানার টাকার পরিমাণ বেশি হওয়ায় তা প্রত্যাখ্যান করেন।

আর এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করায় বিষয়টি মীমাংসা করতে পুনরায় কৃষ্ণপুর-ডহর চাঁচুড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ডাকা সালিশে সাবেক চাঁচুড়ী ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা, চাঁচুড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি নাজির হোসেন মোল্যা, কালিয়া উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে কর্মরত ইউনিয়ন সমাজকর্মী ও স্থানীয় মাতব্বর হারুন অর রশীদসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে নববধূর ইজ্জতের মূল্য পুনর্নির্ধারণ করা হয় মাত্র ৩০ হাজার টাকা! কিন্তু ভুক্তভোগী নারীর পরিবার সালিশের এ রায় প্রত্যাখ্যান করায় ২য় দফায় সালিশি বৈঠক করেও বিষয়টি মীমাংসায় ব্যর্থ হন স্থানীয়রা।

এ প্রসঙ্গে কালিয়া থানার ওসি খন্দকার শামীম উদ্দিন বলেন, চাঁচুড়ী বিল এলাকায় মৎস্য ঘেরে মারধর করে শ্লীলতাহানির ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামী দুইজনকে আসামি করে থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও তারা আর কোনো যোগাযোগ করেনি।

পরে বিষয়টি ‘দৈনিক যুগান্তরে’ প্রকাশ হলে তা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নজরে আসে ও এর প্রেক্ষিতে এক সুয়োমটো আদেশ জারি করে কমিশন। তাতে বলা হয়, সংবাদ প্রতিবেদনে বর্ণিত শ্লীলতাহানি ও জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা সংক্রান্ত অভিযোগটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ৯(৪) ধারার অপরাধ এবং উক্ত অপরাধটি ধারা ১৯ অনুযায়ী আমলযোগ্য, জামিন অযোগ্য ও অ-আপসযোগ্য। ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামী দুইজনকে আসামি করে থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও পুলিশ কর্তৃপক্ষ কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি, যা মানবাধিকারের লঙ্ঘন। তাছাড়া অপরাধটি অ-আপসযোগ্য হওয়া সত্ত্বেও কালিয়া উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে কর্মরত ইউনিয়ন সমাজকর্মী জনাব হারুন অর রশীদসহ স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তি কর্তৃক দুই দফা গ্রাম্য সালিশে বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা বাংলাদেশের প্রচলিত আইন ও বিচার ব্যবস্থাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শনের সামিল। উক্ত অভিযোগের বিষয়গুলোর নিরপেক্ষ তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা সমীচীন মর্মে কমিশন মনে করে।

সুয়োমটোয় আরও উল্লেখ করা হয় যে, ভুক্তভোগী গৃহবধূর স্বামী কর্তৃক থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও পুলিশ কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করার অভিযোগটি তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে আগামী ১৩ আগস্ট ২০২৪ তারিখের মধ্যে কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে, এ মর্মে পুলিশ সুপার, নড়াইল ও জেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।

শ্লীলতাহানি ও জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টার মতো গুরুতর অ-আপসযোগ্য অপরাধের বিষয়টি একজন সরকারি কর্মচারী হয়েও কালিয়া উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে কর্মরত ইউনিয়ন সমাজকর্মী হারুন অর রশীদের উপস্থিতিতে সালিশে মীমাংসার চেষ্টা করা সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়টিকেও আমলে নিয়ে  তদন্তপূর্বক আগামী ১৩ আগস্ট ২০২৪ তারিখের মধ্যে কমিশনকে অবহিত করতে মহাপরিচালক, সমাজসেবা অধিদপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭