ইনসাইড বাংলাদেশ

পাহাড়ি ঢল-ভারী বর্ষণে দেশজুড়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি


প্রকাশ: 03/07/2024


Thumbnail

দেশজুড়ে কিছু অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও ভারী বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে বেশিরভাগ বন্যাকবলিত জেলাগুলোর অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র দেশের নদ-নদীর পরিস্থিতি ও পূর্বাভাস তুলে ধরে জানায়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এ সময়ে উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীসমূহের পানি সমতল সময় বিশেষে বৃদ্ধি পেয়ে কতিপয় পয়েন্টে স্বল্পমেয়াদে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি সমতল বৃদ্ধি পেয়ে কতিপয় পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মুহুরী, ফেনী, হালদা, সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীসমূহের পানি সমতল সময় বিশেষে বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হতে পারে।

বন্যা সতর্কীকরণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্র বলেছে,  দেশের ১১০টি পর্যবেক্ষণাধীন পানি সমতল স্টেশনের মধ্যে ৯০টি স্টেশনে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে, কমেছে ১৯টি ও অপরিবর্তিত রয়েছে ১টি স্টেশনে। বিপৎসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে ৯টি স্টেশনে। বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ৫টি নদীর পানি।

এদিকে, আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্য অনুযায়ী, দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ১৯৮, জাফলংয়ে ৩০৯, ছাতকে ২৩০ ও লালাখালে ২৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সুনামগঞ্জে ৩০০, মহেশখালিতে ১৯৪ ও লরেরগড়ে ২১১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। নেত্রকোনার জারিয়াজাঞ্জাইলে ১৭৫ ও দুর্গাপুরে ১৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। কুড়িগ্রামে ১১৯, পাটেশ্বরীতে ১৪২ ও চিলমারীতে ১৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। মৌলভীবাজারে ১৮৩, চট্টগ্রামের রামগড়ে ১৬৯ ও নারায়নহাটে ১২৯, জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জে ১৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কম-বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে।

সুনামগঞ্জ ও সিলেট
বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জ ও সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ভারি বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে আবারো প্লাবিত হয়েছে সুনামগঞ্জ। এদিকে সুরমাসহ সব নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে এখনও প্রবাহিত হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে আবারো তলিয়েছে জেলার তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, সদর, দোয়ারাবাজার ও ছাতকের বিভিন্ন এলাকা। জানা যায় এ অঞ্চলে ৭ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। এছাড়াও বন্যার পানিতে সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় জেলা সদরের সঙ্গে তাহিরপুর, মধ্যনগর ও ধর্মপাশা উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

অন্যদিকে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর অতিবৃষ্টিতে ডুবেছে জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ সিলেট নগরীর নদী তীরবর্তী বিভিন্ন ওয়ার্ড। নদ-নদীর পানি বইছে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, সিলেটবাসীর এই ভোগান্তি চলতি জুলাইজুড়ে থাকার শঙ্কা রয়েছে। জুলাই মাস পুরোটাজুড়েই বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে জুলাই মাসে।

অতিবৃষ্টিতে সিলেট নগরীর উপশহর, তালতলা, মেজরটিলা, বাগবাড়ি, পায়রাসহ বিভিন্ন এলাকার প্রধান সড়ক তলিয়ে হয়েছে। বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে পড়ায় আবারো ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ।

সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১১৮ সেন্টিমিটার এবং সুনামগঞ্জ পয়েন্টে ২৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। কুশিয়ারার অমলশীদে ৭১ সেন্টিমিটার, শেওলায় ২২ সেন্টিমিটার, শেরপুর-সিলেট পয়েন্টে ৭ সেন্টিমিটার ও মারকুলি পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া মনু নদীর মৌলভীবাজার পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার, সোমেশ্বরী নদীর কলমাকান্দা পয়েন্টে ৫৭ সেন্টিমিটার এবং ভুগাই নদীর নাকুগাঁও পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে।

ফেনী
ফেনীর মুহুরি নদীর বাধ ভেঙে বন্যা দেখা দিয়েছে। ফুলগাজীতে বন্যার পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে ডুবে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। আকস্মিক বন্যার কারণে স্থগিত করা হয় ফুলগাজী ও পরশুরামে মঙ্গলবারের এইচএসসি পরীক্ষা। তবে ফেনীর  ফুলগাজী ও পরশুরামে ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারতের থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মুহুরী নদীর বাঁধ ভেঙে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করছে। মঙ্গলবার (২ জুলাই) সকাল থেকে রাস্তাঘাট ও বাড়িঘর থেকে পানি নেমে যাওয়ায় ক্রমেই ভেসে উঠছে বন্যার ক্ষতচিহ্ন। মাঠ পর্যায়ে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করতে কাজ করছেন প্রশাসনের দায়িত্বশীলরা।

এর আগে গত রবি ও সোমবার পাহাড়ি ঢলের চাপে মুহুরী নদীর বাঁধের চারটি স্থানে ভেঙে ফুলগাজী ও পরশুরামের পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়। এ সময় ওই এলাকার ফসলি জমি, রাস্তাঘাট, মাছের খামার ও বাড়িঘর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদ শাহরিয়ার বলেন, মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাঁচটি স্থানে পানির গতি কমে গেলে বাঁধ সংস্কার কাজ করা হবে।

ফেনীর মুহরি নদীর পানি কমতে শুরু করলে ফুলগাজীতে উন্নতি হলেও পরশুরামে অবস্থা  অপরিবর্তিত রয়েছে। শালধরের ভাঙন দিয়ে এখনো পানি ঢুকছে। আঞ্চলিক মহাসড়কে পানি এখন নেই। যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

এদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমদ চৌধুরী নাসিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৮ সালের একটি বন্যায় পরশুরামে এসে ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং কাজও শুরু করেছিলেন। ২০০১ সালে বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে সেই কাজ বন্ধ করে দিলে এ অঞ্চল ক্ষতির মুখে পড়েছে।

এ অঞ্চলের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তের জন্য ১০ লাখ টাকা, ২শ’ টন চাল এবং ২শ’ প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।

চৌদ্দগ্রাম

টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে চৌদ্দগ্রাম পৌরসভাসহ উপজেলার তের ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের বীজতলা, ফসলি জমি ও বাড়িঘর প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় খাল ও ড্রেনের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় মানুষের ভোগান্তি চরমে

সরেজমিনে দেখা যায়, বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ফসলি জমি, পুকুর ও খাল ডুবে গেছে। উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, চৌদ্দগ্রাম নজমিয়া কামিল মাদ্রাসা, গুণবতী খাটরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দশবার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে হাঁটু পরিমাণ পানি জমেছে। এ ছাড়া পৌর এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রশিদ চেয়ারম্যান বাইপাস সড়ক, লক্ষ্মীপুর সড়ক, পশ্চিম ধনমুড়ি হায়দারপুল সড়কে পানি জমে থাকার কারণে কয়েকটি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। তলিয়ে গেছে বিভিন্ন এলাকার আমন ধানের আগাম বীজতলা।

কৃষকের ঘরে নষ্ট হচ্ছে ধানের বীজ। দিশাহারা কৃষক। পানি নিষ্কাশনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো পদক্ষেপ না থাকায় আগামী কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে বলে কৃষকরা জানান।

বাতিসা ইউনিয়নের পাটানন্দী গ্রামের মমতাজ উদ্দিন বলেন, গত কয়েকদিন ধরে ভারি বৃষ্টির কারণে বীজতলাসহ শাকসবজির ক্ষেত ডুবে গেছে। এতে কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

পৌর এলাকার ফালগুনকরা গ্রামের কৃষক আবদুল জব্বার চৌধুরী বলেন, টানা বৃষ্টিতে শাকসবজির ক্ষেত তলিয়ে গেছে। আমন মৌসুমে ৩০ কেজি ধান কিনে বীজতলা তৈরি করে বীজ ফলানোর কথা ছিল। কিন্তু হঠাৎ গত কয়েকদিনের বৃষ্টির কারণে বীজতলা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ৩০ কেজি ধানের বীজ নষ্ট হয়ে গেছে।

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, উপজেলা কমপ্লেক্সে পানি জমেছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগকে দ্রুত পানি নিষ্কাশন করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

খাগড়াছড়ি, সাজেক ও লংগদু
পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে খাগড়াছড়ি সদর ও দিঘীনালাসহ নিম্নাঞ্চল। চেঙ্গী ও মাইনী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। পানিবন্দি হাজারো পরিবার। দীঘিনালার মেরুং, কবাখালী ও শহরের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। জানা যায়, মেরুং ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের মানুষ এখনো পানিবন্দি। এছাড়া কবাখালি ইউনিয়নের ৫ গ্রামের পানি এখনো নামেনি। দীঘিনালা-লংগদু সড়কের হেডকোয়াটার এলাকায় সড়ক ডুবে যাওয়ার রাঙামাটির লংগদুর সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হওয়ার পাশপাশি তলিয়ে গেছে মেরুং বাজার। বৃষ্টি চলতে থাকায় পাহাড় ধস ও বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতির শঙ্কা রয়েছে এ অঞ্চলে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

এর আগে মাটিরাঙার সাপমারায় ভোরে পাহাড় ধসে পড়ে সড়কের ওপর। পরে চার ঘণ্টার চেষ্টায় স্বাভাবিক হয় সড়ক যোগাযোগ। শহরের শালবাগান, হরিনাথপাড়া, রসুলপুর ও মেহেদিবাগে পাহাড় ধসে কয়েকটি বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

মেরুং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদা বেগম লাকি জানান, বন্যা পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। এখনো মধ্য বোয়ালখালি গ্রাম থেকে সোবাহানপুর পর্যন্ত ২০টি গ্রাম পানি বন্দি। বন্যা দুর্গতদের আমরা সাহয়তা দিচ্ছি। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পানি বাড়ারসম্ভাবনা রয়েছে। মেরুংয়ের হেডকোয়াটার এলাকায় সড়কে পানি উঠে যাওয়ায় লংগদুর সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রামে সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বেড়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। ফলে কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনিত ঘটেছে। বুধবার (৩ জুলাই) স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড সকাল ৯টায় জানায়, ধরলা নদীর শিমুলবাড়ি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে, ব্রহ্মপুত্র নদের নুনখাওয়া পয়েন্টে ৪৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে এবং চিলমারী পয়েন্টে ৩৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার মাত্র ৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

শেরপুর
বৃষ্টি না থাকায় মহারশি, সোমেশ্বরী, ভোগাই ও চেল্লাখালী নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। এতে শেরপুরের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তবে উজানের পানি নেমে গিয়ে ভাটি এলাকার নিম্নাঞ্চলের অনেক স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন।

জানা যায়, আকস্মিক এই ঢলে অনেক রাস্তাঘাট ভেঙ্গে যাওয়ায় চলাচলে ব্যাপক ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। তবে বৃষ্টি না হলেও শেরপুরের আকাশ এখনও মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে। বৃষ্টি হলে বন্যা পরিস্থিতি আবারও অবনতি হতে পারে বলে এলাকাবাসী আশঙ্কা করছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নকিবুজ্জামান খান জানান, সবগুলো নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঝিনাইগাতীর মহারশি নদীর ভাঙা বাঁধ ও নালিতাবাড়ীর ভোগাই নদীর ভাঙা বাঁধের মেরামতের কাজ শুরু করা হয়েছে।

শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কৃষিবিদ হুমায়ুন কবির জানান, ঝিনাইগাতী উপজেলায় ২০ হেক্টর রোপা আমনের বীজ তলা, ১৫ হেক্টর আউশ এবং ৯৮ হেক্টর সবজি খেত আংশিক নিমজ্জিত হয়েছে। একই সঙ্গে ১০ হেক্টর রোপা আমন বীজতলা, ১৩৫ হেক্টর আউশ ও ১২৬ হেক্টর সবজি ক্ষেত সম্পূর্ণ নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়া নালিতাবাড়ী উপজেলায় ৫ হেক্টর রোপা আমন বীজলা আংশিকভাবে এবং ২০ হেক্টর রোপাআমন বীজতলা সম্পূর্ণভাবে পানিতে ঢুবে গেছে।

ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেল জানান, উজান থেকে পানি নেমে এখন নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পাহাড়ি ঢলে যে সব রাস্তাঘাট, বাধ ও কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, সেগুলো সংস্কারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এছাড়া শেরপুরের শহর রক্ষা বাধ ভেঙে শহরসহ শেরপুর জেলায় বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

নেত্রকোনা ও কলমাকান্দা  
নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায় অব্যাহত ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে শতাধিক গ্রামের মানুষ। মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় কলমাকান্দার উব্দাখালী নদীর পানি বেড়ে ডাকবাংলো পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৬ দশমিক ৫৫ মিটার।

রোববার রাত থেকে এ সব গ্রামে পানি ঢুকতে শুরু করে। ইতোমধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে বেশ কিছু সড়ক ও ঘরবাড়ি। পানি ঢুকছে প্রায় অর্ধশত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

এছাড়া ঢলের পানিতে কলমাকান্দার প্রধান উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃদ্ধি পেয়েছে গণেশ্বরী, মহাদেও, বাখলা, আত্রাখালী, ধলেশ্বরী, মঙ্গেলশ্বরী, বৈঠাখালী নদীর পানি।

মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা গেছে, কলমাকান্দা-বরুয়াকোনা, বাহাদুরকান্দা-বাসাউড়া, ঘোষপাড়া-হরিণধরা, কলমাকান্দা-সাঈদপাড়া, মন্তলা-ইসবপুর, গোবিন্দপুর-রানীগাঁও, উদয়পুর-বড়খাপন, বাহাদুরকান্দা-বাসাউড়াসহ আরও বেশ কিছু গ্রামীণ সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। সোমবার সকাল থেকে এ সব সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে করে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে ওই সড়কে চলাচলকারীরা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নেত্রকোনা সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার প্রধান উব্দাখালী নদীসহ সবকটি নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় কলমাকান্দার উব্দাখালী নদীর পানি বেড়ে ডাকবাংলো পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ওই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৬ দশমিক ৫৫ মিটার।

জানা গেছে, এই পাহাড়ি ঢলের পানিতে উপজেলার আটটি ইউনিয়নের প্লাবিত হয়েছে বিশরপাশা, নাগডড়া, হরিণধরা, বাসাউড়া, কেশবপুর, চিনাহালা, চান্দুয়াইল, ডোয়ারিয়াকোনা, পাচকাঠা, সন্ধ্যাহলা, গণিয়ারগাও, কয়ড়া, ধনুন্ধ, মঙ্গলশীদ, মাকৈলুন্দ, গোয়াতলা, মূল পোগলা, ভাটিভাড়া, বড়ইউন্দ, কেশবপুর, কান্দাপাড়া, চৌহাট্টা, রাজনগর, জয়নগর, গৌরীপুর, লক্ষ্মীপুর, বিষ্ণুপুর, বাঘেরপাড়া, বাউসাম, বেনুয়া, চানকোনা, জামসেন, বাহাম, সাকুয়া ইন্দ্রপুর, রামভদ্রপুর, কালাইকান্দি, মুন্সিপুর, মনিপুরপাড়া, বিশাউতিসহ শতাধিক গ্রাম।  

বন্যার পানি ঢুকেছে, বাহাদুরকান্দা, বাসাউড়া, মাইজপাড়া, গোবিন্দপুর, চামারচানী, বেতুয়া-লাইয়া, মধ্যচকপাড়া, চকপাড়া, বাউসারী, কেশবপুর, নানিয়া, গণকপুঞ্জি, বাউসাম, খারনৈ, রুদ্রনগর, উত্তররানীগাও, গোয়াতলা, শুনই, পোগলা, বাদে গোপলা, পনারপারুয়া, ধীতপুর, গঙ্গানগর, ভাটিপাড়া, রানীগাও, কান্দাপাড়া, হরিণধরা, রাজাপুর, হরিপুর, রামনাথপুর, কাকুরিয়া মাছিমসহ প্রায় অর্ধশত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাহানারা খাতুন বলেন, কলমাকান্দায় ৪২টি বিদ্যালয়ের মাঠে পানি ঢুকেছে। উপজেলায় ১৭২টি বিদ্যালয়ের মধ্যে ৫০টি বিদ্যালয়কে বন্যা আগাম দুর্যোগ মোকাবেলায় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।  

খারনৈ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ওবায়দুল হক বলেন, আমার ইউনিয়নের বাউসাম, লক্ষ্মীপুর, শ্রীপুর, খাগগড়া, বিশ্বনাথপুর, সেনপাড়া, রুদ্রনগরসহ কয়েকটি গ্রামের নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

বড়খাপন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান মো. হাদিচ্ছুজ্জামান বলেন, বড়খাপন ইউনিয়নটি নিচু এলাকা। ইউনিয়নে ২৮টি গ্রামের মধ্যে জয়নগর, দুর্লভপুর ও বাঘাসাত্রা ছাড়া সব গ্রামেই বন্যার পানি এসেছে। আর একটু পানি বাড়লে অনেকেই ঘর-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিতে হবে। বড়ইউন্দ বাজার, বড়খাপন ও যাত্রাবাড়ি বাজারে পানির কারণে মানুষ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারছেন না।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নেত্রকোনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী সারওয়ার জাহান জানান, প্রচুর বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে জেলার সব নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। এরই মধ্যে কলমাকান্দায় উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে কংস, সোমেশ্বরী, ধনুসহ অন্য বড় নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা নেই বলে জানান তিনি।

কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসাদুজ্জামান বলেন, ঢলের পানিতে উপজেলার কিছু নিম্নাঞ্চল আবারও নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। আমরা সকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামে খোঁজ-খবর নিচ্ছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরি মুঠোফোন নম্বর খোলা হয়েছে। জরুরি পরিস্থিতিতে উদ্ধার কাজের জন্য নৌকা, ৫০টি আশ্রয় কেন্দ্র ও শুকনা খাবারসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭