ইনসাইড বাংলাদেশ

এনজিওর নামে প্রতারণা: ফেনীতে তিন কোটি টাকা নিয়ে উধাও


প্রকাশ: 03/07/2024


Thumbnail

ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় হঠাৎ করে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে একটি অফিস খোলেন কিছু ব্যক্তি। ‘ওপিডি সাপোর্ট প্রোগ্রাম’ নামের একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) পরিচয়ে আকর্ষণীয় অফার দিয়ে প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন প্রায় তিন কোটি টাকা। কয়েক মাসের মধ্যেই কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে উধাও হয়ে যান এই আমানত সংগ্রহকারীরা।

ক্ষতিগ্রস্তদের বেশির ভাগই দিনমজুর, রিকশাচালক ও প্রবাসী। তাঁদের ভাষ্য অনুযায়ী, এনজিও পরিচয়ে ৮ জন তাঁদের কাছ থেকে এই আমানত সংগ্রহ করেন। আমানতের বিপরীতে সহজ কিস্তিতে ঋণ, সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ, মৃত্যুর পর ঋণ মওকুফ, সঞ্চয়ের দ্বিগুণ লাভ, ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার মতো নানা আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল।

স্থানীয় বাসিন্দা ও ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক মাস আগে সোনাগাজী পৌরসভার চর গণেশ এলাকার হাওয়াই রোডের একটি বাড়ির নিচতলায় দুটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির অফিস খোলা হয়। জসিম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি নিজেকে প্রতিষ্ঠানটির শাখা ব্যবস্থাপক হিসেবে পরিচয় দেন। এলাকাবাসীকে জানান, তাঁদের এনজিওর নিবন্ধন রয়েছে, এবং ঢাকার বনানীতে তাঁদের প্রধান কার্যালয়। এরপর, জসিম উদ্দিন ও তাঁর সহযোগীরা গ্রামের মানুষদের প্রলুব্ধ করে আমানত সংগ্রহ শুরু করেন।

প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহকদের আমানতের বিপরীতে ঋণ বিতরণ শুরু হওয়ার কথা ছিল গত সোমবার। তার আগেই ২৯ জুন রাতে অফিসে তালা লাগিয়ে জসিম উদ্দিন ও তাঁর ৭ সহযোগী পালিয়ে যান। তাঁদের মুঠোফোনও বন্ধ রয়েছে।

গত মঙ্গলবার বিকেলে চর গণেশ এলাকায় প্রতিষ্ঠানটির অফিসে গিয়ে দেখা যায়, মূল ফটকে ‘ওপিডি সাপোর্ট সেন্টার’ স্টিকার লাগানো। দরজায় দুটি তালা লাগানো রয়েছে। আশপাশের বাসিন্দারা জানান, এর মধ্যে একটি তালা প্রতিষ্ঠানটির কথিত কর্মকর্তারা লাগিয়ে পালিয়ে গেছেন। অপর তালাটি ক্ষতিগ্রস্তরা এসে লাগিয়েছেন।

চর চান্দিয়া গ্রামের আয়েশা আক্তার, আসমা আক্তার, সুমি আক্তার, মো. শাকিল, নুর আলমসহ ক্ষতিগ্রস্ত বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতারকেরা তাঁদের কাছে ন্যূনতম ১৬ হাজার টাকা থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন।

গৃহবধূ সুমি আক্তার বলেন, বাড়ির অন্য নারীদের দেখে লাভের আশায় তিনি স্বামীর অজান্তে ৪০ হাজার টাকা জমা দিয়েছেন। ওই কর্মকর্তারা উধাও হওয়ার পর তিনি স্বামীকে বিষয়টি জানান। এখন পারিবারিক কলহে তাঁর সংসার ভাঙার উপক্রম হয়েছে।

চর চান্দিয়া এলাকার বাসিন্দা টিপু সুলতান বলেন, তিনিও ৫০ হাজার টাকা জমা দিয়েছেন। তাঁর মতো আরও পাঁচ শতাধিক গ্রাহকের তিন কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্রটি।

সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুদীপ রায় বলেন, বিষয়টি শোনার পর পুলিশ গিয়ে তালাবদ্ধ কার্যালয় দেখতে পেয়েছে। যেসব ব্যক্তি টাকা সংগ্রহ করেছেন, তাঁদের মুঠোফোনও বন্ধ। ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকেরা লিখিত অভিযোগ দিলে বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল হাসান বলেন, লোভে পড়ে কিছু মানুষ অনিবন্ধিত এনজিওতে টাকা দিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এ ধরনের লেনদেনের ক্ষেত্রে মানুষকে আরও সচেতন ও সতর্ক হতে হবে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭