ইনসাইড বাংলাদেশ

সরকার কি পঁচা শামুকে পা কাটছে?


প্রকাশ: 03/07/2024


Thumbnail

একদিকে সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে শিক্ষকদের আন্দোলন অন্যদিকে কোটা বিরোধী আন্দোলন। সবকিছু মিলিয়ে বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আন্দোলন জমে উঠেছে। এনিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। কোন রাজনৈতিক দলের আন্দোলন নয় বরং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে সরকার যদি এখনই গুরুত্ব না দেয় তাহলে এসব আন্দোলনগুলো পরবর্তীতে সরকারের জন্য বড় ধরনের মাথা ব্যাথার কারণ হবে। সরকার কি এ আন্দোলনগুলোকে গুরুত্বহীন মনে করছে? সরকার কি পঁচা শামুকে পা কাটছে? এই প্রশ্ন এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ বড়ভাবেই উঠেছে। 

একথা ঠিক গত ১৫ বছরে সরকার বিরোধী রাজনৈতিক আন্দোলনকে সামাল দিয়েছে বেশ দক্ষতার সঙ্গে। কিন্তু এটা অস্বীকার উপায় নেই বিভিন্ন সময় সরকারকে পিছু হটে দাবি মোকাবেলা করতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। আর এবার শিক্ষার্থীদের সাথে যুক্ত হয়েছে শিক্ষকরা। আর শিক্ষক এবং ছাত্রদের এই আন্দোলন যে কিরকম ভয়াবহ হতে পারে তা এ সরকারের অজানা থাকার কথা না। কারণ বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের আন্দোলন যেকোন সরকারের জন্য বড় ধরনের মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। 

এই সরকারের ১৫ বছরের বেশি সময়ের মেয়াদে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করেছিলো। গোটা দেশ অচল হয়ে গিয়েছিলো। কোটা বিরোধী আন্দোলনের সময়ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই আন্দোলনের দাবি মেনে নিয়েছিলেন এবং সমস্ত কোটা বাতিল করেছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য কোটা পুনরায় চালু হয়। সেই কোটা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। 

সেই আন্দোলন যৌক্তিক-অযৌক্তিক সেটি ভিন্ন বিষয়। কিন্তু শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন যে সারাদেশে ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ছে তা সহজেই অনুমান করা যায়। পাশাপাশি শিক্ষকদের সাথে অযাচিতভাবে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছে সরকার। এবং সেক্ষেত্রে কিছু কিছু মন্ত্রীর বক্তব্য এতই দায়িত্ব জ্ঞানহীন যে তা শিক্ষকদের ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। 

এ দু’টি আন্দোলনের মধ্যে কোন যোগসূত্র নেই। কিন্তু দু’টি আন্দোলন যদি একসাথে দানা বেধে ওঠে তাহলে সরকারের জন্য সেটি চাপ সৃষ্টি করতে পারে। আর একারণে এখনই সতর্কতার সাথে পরিস্থিতির মোকাবেলা করা দরকার বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেকোন সংগ্রামের আঁতুড়ঘর। এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকে সবসময় সমীহের চোখে দেখতে হবে। অতীতে, এমনকি সেনা সমর্থিত ড. ফখরুদ্দিনের সরকারকেও এই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কাছে ন্যাক্কারজনকভাবে পরাজিত হতে হয়েছিল এবং নতি স্বীকার করতে হয়েছিল। সেসময় শিক্ষকদের গ্রেপ্তার এবং হয়রানি, শিক্ষার্থীদের দমানোর চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছিল। আওয়ামী লীগ নিশ্চয় সেই পথে যাবে না। তবে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের এই বিষয়গুলো নিয়ে উভয় পক্ষের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা শুরু করতে হবে। যাদের উপর শিক্ষকদের আস্থা আছে, যাদের উপর শিক্ষার্থীরা আস্থা রাখেন তাদেরকেই দায়িত্ব দিতে হবে সমঝোতা চেষ্টার জন্য। দায়িত্ব জ্ঞানহীন যে সমস্ত মন্ত্রী সরকারে আছেন তারা যদি শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক করেন তাহলে এর সমাধান হবে না। আর আমলাদের আমলাতান্ত্রিক পদ্ধতির বাইরে এসে সরকার প্রধানকে নির্মোহভাবে পরিস্থিতির বিশ্লেষণ করতে হবে এবং বাস্তবতা অনুধাবন করতে হবে বলেই সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। 

শিক্ষকরা এই পুরো পেনশন স্কিমের জন্য আমলাদের উপর দোষ চাপাচ্ছেন। কাজেই আমলাদেরকে দূরে সরিয়ে রেখে, আমলা নির্ভর মন্ত্রীদেরকে আলোচনার টেবিলে না এনে শিক্ষকদের যাদের প্রতি আস্থা রয়েছে তাদেরকে দায়িত্ব দেয়া উচিত আলোচনার জন্য। এই আন্দোলনকে অনেকেই রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করবে। অনেকে এর থেকে রাজনৈতিক ফয়দা লোটার চেষ্টা করবে। কাজেই এখনই এই বিষয়ে সরকারকে গুরুত্ব দিতে হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭