ইনসাইড বাংলাদেশ

মডেল মসজিদ নির্মাণে স্বামীর বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ স্ত্রীর


প্রকাশ: 03/07/2024


Thumbnail

ইসলামিক জ্ঞান ও সংস্কৃতি প্রচারের উদ্দেশ্যে সরকার ২০১৭ সালে দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে মোট ৬৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়। এই প্রকল্পটি দুবার সময়সীমা বাড়ানোর পরও শেষ না হওয়ায়, আরও দু বছরের জন্য মেয়াদ বাড়ানো হয়। শুরুতে ৮৪২ কোটি টাকা বাজেট ছিল, তবে পরবর্তীতে এটি বেড়ে ৯ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকায় পৌঁছায়।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধীনে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় প্রকল্পটির নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পালন করে। কিন্তু বিভিন্ন সময়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠে এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে, যা এটিকে বিতর্কিত করে তোলে। নীলফামারী গণপূর্ত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামানের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ ও নানা দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। তার স্ত্রী রেজওয়ান আহমেদ খুশবু প্রমাণসহ গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন।

জানা যায়, দিনাজপুর গণপূর্ত বিভাগ থেকে ২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর আশরাফুজ্জামান নীলফামারীতে যোগদান করেন। তিনি তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলীর নির্দেশে নীলফামারী সদর ও জলঢাকা উপজেলায় নির্মিতব্য মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের তদারকির দায়িত্ব পান। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে নীলফামারী সদর উপজেলার মডেল মসজিদের নির্মাণকাজ শেষ হয়। সদর উপজেলার মডেল মসজিদের নির্মাণকাজের চুক্তিমূল্য ছিল ১৩ কোটি ৫ লাখ টাকা, যা ১৬ কোটি ৯২ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় শেষ হয়। জলঢাকা উপজেলার মডেল মসজিদের নির্মাণকাজ এখনও চলমান রয়েছে। এ দুই মসজিদ নির্মাণকাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৪৫ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে আশরাফুজ্জামানের বিরুদ্ধে।

খুশবু অভিযোগ করে বলেন, ‘২০২১ সালের জুলাই অথবা আগস্ট মাসে মোবাইল ফোনে আমার স্বামী মডেল মসজিদ নির্মাণকাজ হতে ঘুষ গ্রহণের বিষয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তির সঙ্গে আলাপচারিতার করতে শুনি। ফোনালাপ শেষে আমি তাকে বলি, মসজিদ আল্লাহর ঘর। এখান থেকে তুমি ঘুষ নেবে?’ এতে সে প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয় এবং আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। এ সময় গর্ভে সন্তান থাকায় প্রচণ্ড রকম অপমানিত বোধ করলেও কাউকে কিছু বলিনি। কিন্তু এরপর থেকেই সামান্য ব্যাপারেও কথাকাটাকাটি হতে শুরু হয়। এভাবে ধীরে ধীরে শুরু হয় শারীরিক নির্যাতন। খুশবু আরও বলেন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণকাজে স্বামীর ঘুষ নেওয়ার তথ্য পেয়ে বারবার অনুরোধ করেও তাকে দুর্নীতি থেকে সরাতে ব্যর্থ হয়েছি। এমনকি দুর্নীতিতে বাধা দেওয়ায় আমাকে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। বলে, তুই ও তোর পরিবার আমার কিছুই করতে পারবি না। আমার ক্ষমতা ও টাকার কাছে তোরা ভেসে যাবি। এভাবে বলতে বলতে অনেক মারধর করে। তার ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি মেনে নিলে চুপচাপ থাকলে সব স্বাভাবিক থাকত। নির্যাতন করত না। যখন সে সৎ ছিল তখন কোনো সমস্যা হয়নি।

তিনি আরও জানান, তার স্বামী তাকে বলে যে সে এরকম থাকতে চায় না, বড়লোক হতে হবে। যদি মডেল মসজিদ থেকে ঘুষ নিতে না দিস তাহলে বাবার বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে আয়। সংসারের সুখ-শান্তির কথা বিবেচনা করে নানা অজুহাতে তাকে ৭ লাখ টাকা এনে দেন। এছাড়া বিয়ের সময় তার বাবার কাছ থেকে সাড়ে ১২ লাখ টাকা যৌতুক নেওয়া হয়। বিয়ের পর বাড়ি সংস্কারের কথা বলে আরও আট লাখ টাকা নেওয়া হয়।

সন্তান জন্মের পর খুশবু একদিন মেসার্স আব্দুর রাফি ট্রেডার্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র দেখতে পান। তিনি জিজ্ঞেস করলে আশরাফুজ্জামান উত্তর দেন যে নানা কাজে টাকা-পয়সা লেনদেন করতে হয়, তাই এই প্রতিষ্ঠান। যদিও প্রতিষ্ঠানের লেনদেন হয়েছে মূলত অন্য উৎস থেকে।

তিনি আরও বলেন, নীলফামারী সদর উপজেলার রূপালী ব্যাংকে তার নামে একটি অ্যাকাউন্ট খোলা হয় এবং তার স্বামী জোরপূর্বক ব্ল্যাংক চেকে স্বাক্ষর নেন। খুশবু সচিবের কাছে অভিযোগ করেন, এবং সচিব সুষ্ঠু তদন্তের আশ্বাস দেন।

আশরাফুজ্জামানের বাবা আব্দুল মান্নান একজন পল্লী চিকিৎসক ছিলেন। পাঁচ বছরে তাদের বাড়ির চেহারা বদলেছে; দুই কক্ষের ঘর থেকে পাঁচ কক্ষের আলিশান বাড়ি হয়েছে। বাড়ির একপাশে মেসার্স আব্দুর রাফি ট্রেডার্সের নামে একটি গুদাম ঘর তৈরি করা হয়েছে। ২০২২ সালে ট্রেড লাইসেন্স নেওয়া হয় এবং ২০২৩ সালের মে মাসে প্রায় ১১০০ মণ ভুট্টা ক্রয় করে সেই গুদামে রাখা হয়। যদিও প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো ভুট্টা বিক্রি হয়নি। ব্যাংক স্টেটমেন্টে দেখা যায় জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত ৩৪ লাখ ৮৭ হাজার টাকা জমা হয়েছে এবং ৩৩ লাখ ৪৬ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ ১৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকা এফডিআর ক্লোজড বাবদ জমা হয়েছে।

মডেল মসজিদ প্রকল্পের পরিচালক নজিবুর রহমান জানান, ঘুষ ও দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নীলফামারী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তৌহিদুজ্জামান জানান, উপসহকারী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামানের সঙ্গে তার স্ত্রীর পারিবারিক কলহ ছিল এবং তাদের ডিভোর্স হয়ে যায়। এরপর মেয়েপক্ষ তার বিরুদ্ধে মামলা করে, যার কারণে আশরাফুজ্জামান জামিনে আছেন।

আশরাফুজ্জামান তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার সাবেক স্ত্রী তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছে এবং তাকে হয়রানি করার জন্য এই সমস্ত অভিযোগ উত্থাপন করেছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭