ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র
হামলায় সিরিয়ার ৩ সেনা নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৩ জন। সিরিয়ায়
‘একাধিক’ ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় সিরীয় সৈন্যদের হতাহতের
এই ঘটনা ঘটে।
সিরিয়ার রাষ্ট্রীয়
গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে রোববার (১৪ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক
সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
সিরিয়ার রাষ্ট্রীয়
বার্তাসংস্থা সানা জানিয়েছে, স্থানীয় সময় রোববার রাত ৮টা ৫০ মিনিটে ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র
হামলার এই ঘটনা ঘটে। রাজধানী দামেস্কের নিকটবর্তী গ্রামাঞ্চলে এবং উপকূলীয় প্রদেশ
টারটাউসের বেশ ‘কিছু লক্ষ্যবস্তুর’ ওপর এই হামলা হয়।
অবশ্য মধ্যপ্রাচ্যের
এই দেশটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সামরিক সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে সানা জানিয়েছে,
সিরিয়ার বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী ‘আগ্রাসন’ মোকাবিলা করেছে এবং কিছু ক্ষেপণাস্ত্র
ভূপাতিত করেছে।’
বার্তাসংস্থাটি
আরও জানিয়েছে, ‘আগ্রাসনের ফলে তিন সৈন্যের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া আরও তিনজন আহত হয়েছেন।’
আলজাজিরা বলছে,
লেবাননের রাজধানী বৈরুতের দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে দামেস্কে হামলা চালানো হয়েছে। অন্যদিকে
টারটাউসে হামলা করা হয় ভূমধ্যসাগর থেকে। এছাড়া মৃত্যু ছাড়াও, হামলার কারণে কিছু ‘বস্তুগত
ক্ষতি হয়েছে’ বলে সামরিক সূত্রটি সানাকে জানিয়েছে।
অবশ্য সিরিয়ায়
এই হামলার বিষয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
মূলত ২০১১ সালে
সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েল এই দেশটির অভ্যন্তরে শত শত বিমান
হামলা চালিয়েছে। মূলত সরকারি অবস্থানের পাশাপাশি মিত্র ইরান-সমর্থিত বাহিনী এবং হিজবুল্লাহ
যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে।
ইসরায়েল অবশ্য
খুব কমই সিরিয়ায় এই ধরনের অভিযানের বিষয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করে থাকে।
যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক
পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস রোববারের এই হামলার বিষয়ে
জানিয়েছে, টারটাউস প্রদেশে একটি বিমান প্রতিরক্ষা ঘাঁটি লক্ষ্য করে ইসরায়েল হামলা চালিয়েছে।
ওই ঘাঁটিতে ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলো সক্রিয় রয়েছে।
মন্তব্য করুন
ইরানি ভূখণ্ডের ওপর আবারও কোনো হামলা হলে ইসরাইলি ভূখণ্ড নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রায়িসি।
মঙ্গলবার পাকিস্তান সফরের দ্বিতীয় দিনে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে এমন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।
রায়িসি বলেন, “যদি ইসরায়েল আবারও ইরানের ওপর হামলা করে তাহলে ইসরায়েল আর থাকবে না।”
ইরানি প্রেসিডেন্ট ইসরায়েলকে হুমকি দিয়ে বলেন, “যদি ইসরায়েল আরেকবার ভুল করে এবং পবিত্র ইরানের সার্বভৌমতাকে লঙ্ঘন করে তাহলে পরিস্থিতি ভিন্ন হবে।”
গত ১ এপ্রিল সিরিয়ার দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে হামলা চালায় ইসরায়েল। এর জেরে প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে ১৩ এপ্রিল রাতে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইরান।
ইরানের নজিরবিহীন হামলার পাল্টা জবাব দিতে ইরানি ভূখণ্ডে ছোট হামলা চালায় ইহুদিবাদী ইসরায়েল। দেশটির ইস্ফাহানে পরমাণু স্থাপনার রাডার ব্যবস্থাকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। তবে উত্তেজনা থামিয়ে দিতে ইরান বিষয়টি চেপে যায়। এছাড়া ইসরায়েলও আনুষ্ঠানিকভাবে হামলার দায় স্বীকার করেনি।
পরবর্তীতে ইসরায়েলের একটি সূত্র জানায়, তারা ইরানে আরও বড় হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নিতে পারে এমন ভয় থেকে সিদ্ধান্ত বদলায় ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।
ইসরায়েল নিশ্চিহ্ন হুঁশিয়ারি ইরান
মন্তব্য করুন
মধ্যপ্রাচ্যে শক্তিশালী দুই দেশ—ইরান ও ইসরায়েলকে নিয়ে মহাবিপত্তিতে আছে জর্ডান। দেশ দুটির মধ্যে শত্রুতা দিন দিন বাড়ছে। আর এই শত্রুতার জেরে আঞ্চলিক সংঘাত বাড়লে মারাত্মক আঘাত আসতে পারে জর্ডানের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজের ওপর।
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যদি চূড়ান্তরূপে যুদ্ধ বেধে যায়, তাহলে জর্ডান বড় সংকটে পড়তে পারে বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের টেম্পল ইউনির্ভাসিটির জর্ডান–বিশেষজ্ঞ সেন ইয়োম। তিনি বলেন, ‘জর্ডানকে খোলাখুলিভাবে এই ঝঞ্ঝাটের বাইরে থাকতে হবে। যুদ্ধে কোনো এক পক্ষের সঙ্গে হাত মেলাতে পারবে না তারা।’ খবর আল জাজিরার।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে জর্ডান আরেকটা পরিচিতি পেয়েছে। সেটি ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতাকারী হিসেবে। এ ছাড়া উপত্যকাটিতে পর্যাপ্ত ত্রাণসহায়তা প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়ার চেষ্টাও চালাচ্ছে তারা। তবে এসব কর্মকাণ্ড দেশটির রাজপথে নামা বিক্ষোভকারীদের অতটাও মন ভরাতে পারেনি।
গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এতে এখন পর্যন্ত ৩৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এরই প্রতিবাদে জর্ডানে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেছে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, এই দুই দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে আম্মানকে।
এরই মধ্যে সাম্প্রতিক আরেকটি ঘটনা জর্ডানের মানুষকে আরও বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে। ঘটনাটি ১৩ এপ্রিল রাতের। জর্ডানের আকাশে কয়েক ডজন ইরানি ড্রোন ধ্বংস করে দেশটির বিমানবাহিনী। সেদিন রাতে ইসরায়েল লক্ষ্য করে তিন শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছুড়েছিল তেহরান।
ইরানের ওই হামলা ছিল ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে ইসরায়েলের হামলা জবাব। ওই হামলায় ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের (আইআরজিসি) কয়েক কর্মকর্তা নিহত হন। তাদের মধ্যে ছিলেন শীর্ষস্থানীয় কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদিও।
ইরানের ড্রোন ধ্বংসের বিষয়ে জর্ডানের ভাষ্য, তারা নিজেদের সীমান্ত রক্ষায় ওই পদক্ষেপ নিয়েছিল। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি বলেছিলেন, ইরানের ছোড়া ড্রোন ও ক্ষেপাণাস্ত্রগুলো জর্ডানের ভূখণ্ডে পড়ার সম্ভাব্য বিপদ ছিল। জর্ডানের সশস্ত্র বাহিনী উপযুক্ত কৌশলে সেই বিপদ মোকাবিলা করেছে।
আয়মান সাফাদি আরও বলেন, জর্ডানের নিরাপত্তাকে বিপন্ন করার সুযোগ কাউকে দেওয়া হবে না। এটি জর্ডানের মূলনীতির বিষয়। ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। ভবিষ্যতেও একই কাজ করা হবে। হুমকিগুলো ইসরায়েল, ইরান বা অন্য কোনো জায়গা থেকে আসছে কি না, তা বিবেচনায় নেওয়া হবে না।
ফিলিস্তিনিদের প্রতি জর্ডানের বাসিন্দাদের গভীর সহানুভূতি রয়েছে। দেশটিতে আনুমানিক ২০ লাখ ফিলিস্তিনি শরণার্থী রয়েছেন। এ ছাড়া দেশটির জনসংখ্যার বড় একটি অংশ ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত। এমন পরিস্থিতিতে ১৩ এপ্রিল রাতে ইরানের ড্রোন ধ্বংসের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ আখ্যা দিয়েছেন।
জর্ডানের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির কারণে দেশটির রাজতন্ত্র চাপে রয়েছে। এমনকি ৭ অক্টোবরের আগেও দেশটির ভেতরে ও সীমান্তে বহু চ্যালেঞ্জ ছিল। জর্ডানের পদক্ষেপে প্রথম দিকে চটেছিল তেহরানও। রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত ইরানি বার্তা সংস্থা ফার্স নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের চালানো কোনো অভিযানে নাক গলালে জর্ডানকেও ভবিষ্যতে হামলার লক্ষ্যবস্তু করা হতে পারে বলে হুমকি দিয়েছে তেহরান।
তবে দ্রুতই নিজেদের মধ্যে এই দ্বন্দ্ব মিটিয়ে নেয় দুই দেশ। ইরানের সংবাদমাধ্যম মেহর নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ানকে ফোনে জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাফাদি বলেছেন, ইসরায়েলকে তাদের ‘আকাশসীমার অপব্যবহার করতে দেওয়া হবে না’।
টেম্পল ইউনির্ভাসিটির সেন ইয়োমের ভাষ্যমতে, ইসরায়েলকে সহযোগিতার অভিযোগ তুলে ১৪ এপ্রিল জর্ডানকে সম্ভাব্য হামলার লক্ষ্যবস্তু করার হুমকি দিয়েছিল রেভল্যুশনারি গার্ড কোর। তবে পরদিনই নরম সুরে কথা বলতে শোনা যায় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে। তিনি জর্ডানকে কূটনৈতিক অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ইরানের সঙ্গে জর্ডানের স্বাভাবিক সম্পর্ক রয়েছে।
ইরান ইসরায়েল সংঘাত বিপদে জর্ডান
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন