পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনে অবস্থিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ থেকে অবসর নিলেন বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। উপাচার্য হিসেবে বুধবারই তার মেয়াদ শেষ হওয়ায় তিনি অবসরে যান।
নতুন ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব নিয়েছেন বর্তমান কলাভবনের অধ্যক্ষ সঞ্জয় কুমার মল্লিক। সঞ্জয় কুমার মল্লিক বিশ্বভারতীর কর্মসমিতির অন্যতম সদস্যও। বিশ্বভারতী আইন অনুযায়ী সিনিয়র মোস্ট অধ্যাপক হিসেবে উপাচার্যের ভার নিলেন সঞ্চয় মল্লিক৷। নতুন উপাচার্যকে স্বাগত জানানো হয় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তরফে।
এর আগে এদিন নিজের বাসভবন 'পূর্বিতা' থেকে দুপুরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গিয়ে সরকারি নথিতে স্বাক্ষর করেন বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। বিতর্কিত এ অধ্যপককে দেখে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ দেখাতে পারে, এই আশঙ্কায় বিশাল পুলিশ বাহিনী ও বিশ্বভারতীর নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা ছিল।
উল্লেখ্য, উপাচার্য হিসেবে দীর্ঘ ৫ বছর নানা বিতর্কে জড়িয়ে ছিলেন বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। যার মধ্যে অন্যতম শান্তিনিকেতনে নোবেল জয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের জমি বিতর্ক। এই ইস্যুতে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে। আদালতে পর্যন্ত যেতে হয়েছে অমর্ত্য সেনকে। বিষয়টি এখন আদালতের বিচারাধীন।
বিশ্বভারতী উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী শান্তিনিকেতন অমর্ত্য সেন
মন্তব্য করুন
ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে বিতর্কে হারার পর থেকেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য চাপ বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ওপর। তবে বাইডেন জানিয়েছেন, এসব চাপকে তিনি গ্রাহ্য করছেন না এবং একমাত্র সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আদেশ দিলেই তিনি প্রার্থিতা প্রত্যাহার করবেন।
শুক্রবার (৫ জুলাই) মার্কিন সংবাদমাধ্যম এবিটি নিউজকে একটি ‘আনস্ক্রিপটেড’ সাক্ষাৎকার দেন বাইডেন। সেখানে তাকে প্রশ্ন করা হয়-ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্কের পর থেকে তার রাজনৈতিক দল ডেমোক্রেটিক পার্টির বেশ কয়েক জন সদস্য মনেপ্রাণে চাইছেন যে বাইডেন যেন আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড় থেকে নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। এ প্রসঙ্গে তার সিদ্ধান্ত বা প্রতিক্রিয়া কী?
উত্তরে বাইডেন বলেন, “যদি সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমার সামনে এসে আমাকে (প্রার্থিতা প্রত্যাহারের) আদেশ দেন, তাহলে আমি তা করতে পারি।”
শুক্রবার (৫ জুলাই) নিজের শহর উইসকনসিনে ডেমোক্রেটিক পার্টির ভোটারদের একটি মিছিল-সমাবেশে যোগ দেন বাইডেন। সে সময়ই কর্মসূচির অবসরে এবিসিকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি।
সাক্ষাৎকারটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের জন্য বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল। কারণ, সম্পূর্ণ আলোচনা হয়েছে আনস্ক্রিপটেড প্রশ্নভিত্তিক। শুক্রবার এবিসি রেডিওকে যে সাক্ষাৎকার বাইডেনের দিয়েছেন, সেটির কোনো প্রশ্ন আগে থেকে বাইডেনকে সরবরাহ করা হয়নি।
ট্রাম্পের সঙ্গে বিতর্ক বিপর্যয়ের পর থেকে যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন বাইডেন, তাতে এবিসির এই সাক্ষাৎকারটিকে ৮১ বছর বয়সী এই রাজনীতিকের জন্য ‘বড় পরীক্ষা’ বলে উল্লেখ করেছেন অনেকেই।
এর আগে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের আয়োজনে গত ২৮ জুন প্রথমবারের মতো নির্বাচনী বিতর্ক হয় ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং জো বাইডেনের মধ্যে। বিতর্কে দেশের অর্থনীতি সামলানো, পররাষ্ট্রনীতির রেকর্ড ও ব্যাপক সংখ্যক অভিবাসী আগমণ ইস্যুতে বাইডেনের তীব্র সমালোচনা করেন ট্রাম্প; কিন্তু স্পষ্ট ও আত্মবিশ্বাসপূর্ণ যুক্তি দিয়ে সেসব সমালোচনা খণ্ডন করতে অনেকাংশে ব্যর্থ হন বাইডেন। তাকে বেশ ক্লান্তও দেখা যাচ্ছিল সে সময়।
বিতর্কের পর তাৎক্ষণিক এক জরিপে জানা গেছে, বিতর্ক অনুষ্ঠানটি দেখেছেন-এমন দর্শকদের মধ্যে ৬৭ শতাংশেই যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দেখতে চান।
একমাত্র ঈশ্বর আদেশ প্রার্থীতা প্রত্যাহার বাইডেন
মন্তব্য করুন
পার্লামেন্ট নির্বাচনে লেবার পার্টির নিরঙ্কুশ জয়ের পর যুক্তরাজ্যের নতুন অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন র্যাচেল রিভস। দেশটির নতুন মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে শুক্রবার তাঁর নাম ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার।
এর মধ্য দিয়ে ইতিহাস গড়েছেন র্যাচেল। যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে প্রথম নারী অর্থমন্ত্রী হয়েছেন তিনি।
নতুন সরকারে অ্যাঞ্জেলা রায়নারকে উপপ্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। পররাষ্ট্রমন্ত্রী পদে নিয়োগ পেয়েছেন কৃষ্ণাঙ্গ ডেভিড ল্যামি।
যুক্তরাজ্যের নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়েছেন ইভেত্তে কুপার। জন হ্যালি প্রতিরক্ষামন্ত্রী, ব্রিজেত ফিলিপসন শিক্ষামন্ত্রী, এড মিলিব্যান্ড জ্বালানিমন্ত্রী, শাবানা মাহমুদ বিচারমন্ত্রী, জোনাথন রেনল্ড বাণিজ্যমন্ত্রী, লিজ কেন্ডাল শ্রম ও কারামন্ত্রী, স্টিভ রিড পরিবেশমন্ত্রী, পিটার কাইলি বিজ্ঞান, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি–বিষয়কমন্ত্রী, লিসা নন্দী সংস্কৃতি–বিষয়ক মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন।
যুক্তরাজ্যে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত পার্লামেন্ট নির্বাচনে ৪১২টি আসনে জয় পেয়েছে লেবার পার্টি। কনজারভেটিভ পার্টি পেয়েছে ১২১টি আসন। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য কোনো দলের প্রয়োজন হয় ৩২৬ আসন। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যুক্তরাজ্যে টানা ১৪ বছর পর ক্ষমতা থেকে সরে গেল কনজারভেটিভ পার্টি।
এরপর শুক্রবার
(৫ জুলাই) রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে বাকিংহাম প্রাসাদে গিয়ে দেখা করেন কিয়ার স্টারমার। ব্রিটেনের রাষ্ট্রপ্রধান রাজা তৃতীয় চার্লস তাঁকে যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন।
প্রথম নারী অর্থমন্ত্রী যুক্তরাজ্য
মন্তব্য করুন
যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট নির্বাচনে বড় জয় পাওয়ার পর কেয়ার স্টারমার নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের কাজ শুরু করেছেন। শুক্রবার (৫ জুলাই) ডেভিড ল্যামিকে নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ৫১ বছর বয়সী এই কৃষ্ণাঙ্গ লেবার পার্টির নেতা যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বন্ধু হিসেবে পরিচিত। ডেভিড ল্যামির পূর্বপুরুষ গায়ানার ক্রীতদাস ছিলেন। তার পরিবার থেকেই তিনি যুক্তরাজ্যের নীতিনির্ধারক হয়ে উঠেছেন।
ডেভিড ল্যামি লেবার পার্টির আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত মুখপাত্র হিসেবে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ সময়ে তিনি ৪০ বারেরও বেশি বিদেশ সফর করেছেন।
ল্যামির জন্ম ১৯৭২ সালে লন্ডনে। তার মা-বাবা গায়ানা থেকে যুক্তরাজ্যে অভিবাসী হিসেবে এসেছিলেন। ল্যামি ১২ বছর বয়সে তার বাবাকে হারান, যিনি স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। ল্যামির বেড়ে ওঠা উত্তর লন্ডনের টটেনহামে, যেখানে তিনি ২০০০ সাল থেকে পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করছেন। ২৭ বছর বয়সে তিনি পার্লামেন্টের সবচেয়ে কম বয়সী সদস্য নির্বাচিত হন এবং প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ও গর্ডন ব্রাউনের মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালন করেন।
ডেভিড ল্যামি নব্বইয়ের দশকে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ল স্কুলে ভর্তি হন। সেখানে বারাক ওবামার সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়। তার স্ত্রী নিকোলা গ্রিন ২০০৮ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ওবামার প্রচার-প্রচারণা নিয়ে ছবি আঁকেন।
ডেভিড ল্যামি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সহযোগিতামূলক সম্পর্ক গভীর করার পক্ষে। তিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেনকে সমর্থন দিয়ে আসছেন এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে।
সূত্র: দ্য নিউইয়র্ক টাইমস
যুক্তরাজ্য পার্লামেন্ট স্টারমার পররাষ্ট্রমন্ত্রী
মন্তব্য করুন
যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে লেবার পার্টির পক্ষ থেকে পঞ্চম ব্যক্তি হিসেবে কিয়ার স্টারমার দলকে বিরোধী দলের আসন থেকে ক্ষমতায় নিলেন। ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে বড় ধরনের ধাক্কা খাওয়া লেবার পার্টি ২০২৪ সালে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করল। তবে ডাউনিং স্ট্রিটের পথে স্টারমারের যাত্রা যে সহজ ছিল না, তা হার্টলপুল উপনির্বাচনের ফলাফল মনে করিয়ে দেয়।
প্রকৃতপক্ষে দীর্ঘকাল তাঁর জীবন ও কাজ ছিল একেবারে ভিন্ন ধারায়। বাবা-মায়ের চার সন্তানের একজন কিয়ার স্টারমার। কেন্ট ও সারের সীমান্তবর্তী অক্সটেড শহরে বড় হয়েছেন তিনি। তাঁর বাবা ছিলেন যন্ত্রাংশ নির্মাতা, মা ছিলেন নার্স। ১৯৭০–এর দশকে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কালে বেড়ে ওঠার সময়কার চ্যালেঞ্জগুলো নিজেই বলেছেন কিয়ার স্টারমার। এক নির্বাচনী প্রচারে তিনি বলেছিলেন, ‘আপনি যদি শ্রমজীবী হন, আপনি ঋণকে ভয় পাবেন। আমার মা–বাবাও ঋণ ভয় পেতেন।’
কিয়ার স্টারমার তাঁর ছোটবেলা থেকে অনেক কিছুর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি ফুটবল খেলতে পছন্দ করতেন। তিনি মাঝমাঠে ‘সেন্টার লেফট’ হিসেবে খেলতেন। এ ছাড়া তিনি মেধাবী সংগীতশিল্পী ছিলেন। ভায়োলিন বাজানোও শিখেছিলেন।
কিয়ার স্টারমারের মধ্যে বিদ্রোহের প্রবণতা আগে থেকেই ছিল। তিনি ও তাঁর বন্ধুরা একবার নগদ অর্থ সংগ্রহের জন্য ফ্রান্সের সমুদ্রসৈকতে অবৈধভাবে আইসক্রিম বিক্রি করতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিলেন।
কিন্তু এ সময় তাঁর জীবনে রাজনীতি কই? কিন্তু সব সময় এর একটি সূত্র তাঁর সঙ্গেই ছিল। আর সেটি হলো তাঁর নাম। লেবার পার্টির প্রথম নেতা কিয়ার হার্ডির নাম অনুসারে তাঁর নাম রাখা হয়েছিল। কিয়ার স্টারমার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার আগে বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
এটা শুরু হয়েছিল স্টারমারের স্কুলজীবন থেকে। তখন তিনি লেবার পার্টির তরুণদের শাখা ‘ইয়াং সোশ্যালিস্ট’–এ যোগ দেন। পরিবারের প্রথম সদস্য হিসেবে স্কুলজীবন পার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার সৌভাগ্য হয় তাঁর। তিনি প্রথমে লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন। পরে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।
লিডসে পড়ার সময় তিনি আশির দশকের ‘ইন্ডি মিউজিক’–এ প্রভাবিত হন। তাঁর জীবনী লেখক টম বাল্ডউইন লিখেছেন, স্কুলজীবন থেকে তাঁর প্রিয় পানীয় ছিল বিয়ার ও সাইডারের মিশ্রণ বা স্নেকবাইট। এ ছাড়া তিনি তরকারি ও চিপস পছন্দ করতেন।
স্নাতক শেষ করার পর কিয়ার স্টারমার উত্তর লন্ডনের একটি পতিতালয়ের ওপরে বাসা নিয়ে থাকতেন। আরও গুরুত্বপূর্ণ, তিনি একজন কাজের প্রতি নিষ্ঠাবান (ওয়ার্কহোলিক) হিসেবে খ্যাতি অর্জন করছিলেন, যা তাঁকে সফল ও একজন খ্যাতিমান মানবাধিকারবিষয়ক আইনজীবী হয়ে উঠতে সাহায্য করে। এ সময় রাজনীতি তাঁর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল না। পরবর্তী দুই দশক তিনি আইন পেশায় সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দেন। ২০০৮ সালে তিনি পাবলিক প্রসিকিউশনের পরিচালক হন। পদটি ছিল ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের প্রধান কৌঁসুলির। জীবনের এ পর্বকে জনগণের সেবায় নিজের নিবেদনের দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরেন কিয়ার স্টারমার। এ সময় সন্ত্রাসী গ্যাংগুলোকে শাস্তির আওতায় আনতে তাঁর ভূমিকার কথা তিনি প্রায়ই বলে থাকেন।
২০১০ থেকে ২০১৫ সালের জোট সরকারের সময় ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিসের বাজেট এক–চতুর্থাংশ কমানো হয়। এতে কিয়ার স্টারমার তাঁর বিভাগের খরচ কমাতে বাধ্য হন। ২০০৯ সালের কেলেঙ্কারির জেরে এমপিদের পার্লামেন্টারি ব্যয় নিয়ে তাঁদের বিচারের মুখোমুখি করাসহ নানা গুরুত্ব সিদ্ধান্ত তাঁর তত্ত্বাবধানে হয়ে থাকে।
আইনি কার্যক্রমে ভূমিকার পুরস্কার হিসেবে ২০১৪ সালে নাইটহুড উপাধি পান কিয়ার স্টারমার। কিন্তু তাঁর নেতৃত্ব কতটা সফল? তাঁর মেয়াদের শেষের দিকে বিবিসিকে দেওয়া একটি সাক্ষাত্কারে স্টারমার স্বীকার করেছিলেন, অসহায় ভুক্তভোগীরা এখনো বিচারব্যবস্থার অবজ্ঞার শিকার হয়ে থাকেন।
কিয়ার স্টারমারের বয়স ৫২ বছর হওয়ার পর তাঁর পেশাগত জীবনে পরিবর্তন আসে। তিনি উত্তর লন্ডনে লেবার পার্টির একটি নিরাপদ আসনে মনোনয়ন পান। সেখানে সহজে জয় পান। তিনি ও সদ্য বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী কনজারভেটিভ পার্টির ঋষি সুনাক একই দিনে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। কিন্তু সময়টা লেবার পার্টির জন্য সুখকর ছিল না। কারণ, তখন কনজারভেটিভরা মাত্রই নির্বাচনে জিতেছিল এবং জেরেমি করবিন লেবার পার্টির নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর দলের ভেতরে দ্বন্দ্বের উপক্রম শুরু হয়।
একজন ‘ব্যাকবেঞ্চার’ থেকে লেবার পার্টির নেতৃত্বে এবং এখন ডাউনিং স্ট্রিটে কিয়ার স্টারমারের যাত্রা সম্পর্কে অনেক কিছু বলা ও লেখা হয়েছে। তবে কিছু বিষয় রয়েছে উল্লেখ করার মতো।
জেরেমি করবিন লেবার পার্টির নেতা হওয়ার পর কিয়ার স্টারমারকে ছায়া অভিবাসন মন্ত্রী বানান। কিন্তু তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। ব্রেক্সিট গণভোটের পর করবিনকে লেবার পার্টির নেতৃত্ব থেকে সরাতে দলের সামনের সারির একদল নেতা পদত্যাগ করেন। সেই দলে স্টারমারও ছিলেন। এ সময় তাঁর ছায়া মন্ত্রী হিসেবে এক বছরও হয়নি। কিন্তু তাঁদের ওই চেষ্টা তখন সফল হয়নি। করবিন তখন তাঁর বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া নেতাদের সঙ্গে আপসরফা করেন এবং কিয়ার স্টারমার ছায়া ব্রেক্সিট মন্ত্রী পদে ফেরেন।
এরপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দলে কিয়ার স্টারমারের দায়িত্ব বদলেছে। ২০১৯ সালে বিবিসির ব্রেকফাস্ট অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, জেরেমি করবিন দুর্দান্ত একজন প্রধানমন্ত্রী হবেন। তিনি এ সময় করবিনকে শতভাগ সমর্থন দিয়ে তাঁর সঙ্গে কাজ করার ও সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার কথা বলেন। অন্যরা যখন করবিনের সঙ্গে কাজ করতে অনীহা জানান, তখন তিনি করবিনের সঙ্গে থাকেন। কিন্তু ২০১৯ সালের নির্বাচন লেবার পার্টির জন্য বিপর্যয়কর হয়। এরপর করবিন দলের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ালে তাঁর জায়গায় আসেন স্টারমার।
কিয়ার স্টারমার যখন লেবার পার্টির নেতা হন, তখন অনেকেই ভেবেছিলেন কনজারভেটিভ নেতা বরিস জনসন আরও বেশ কিছুদিন ক্ষমতায় থাকবেন। অনেকে স্টারমারকে লেবার পার্টিকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করতে পারেন, এমন নেতা হিসেবে দেখেছিলেন। তখন গুটিকয়েক মানুষই মনে করেছিলেন যে তিনি আবার লেবার পার্টিকে ক্ষমতায় নিতে পারেন।
কিন্তু সেই পরিবর্তন কবে আসবে? জনমত জরিপগুলোয় এর ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ২০২০ ও ২০২১ সালের জনমত জরিপে জনসনের কনজারভেটিভদের পেছনে ছিল লেবার পার্টি। ওই সময় হার্টলপুল উপনির্বাচন হয়েছিল। কিন্তু ওই সময়ের পর করোনা মহামারিতে বরিস জনসনের ডাউনিং স্ট্রিটে অনুষ্ঠান আয়োজনের কেলেঙ্কারির খবর বাইরে আসতেই সব বদলে যায়।
ওই সময় জরিপে দেখা যায়, ২০২১ সালের নভেম্বরের নির্বাচনে কনজারভেটিভদের চেয়ে স্পষ্ট এগিয়ে লেবার। এরপর লিজ ট্রাসের বাজেট ঘোষণার পর থেকে ক্রমেই লেবার পার্টির জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে।
কিয়ার স্টারমারের বয়স এখন ৬১ বছর। তিনি ২০০৭ সালে ভিক্টোরিয়াকে বিয়ে করেন। এই দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
(তথ্যসূত্র: বিবিসি)
সাধারণ পরিবার স্টারমার হাল ধরলেন যুক্তরাজ্যের
মন্তব্য করুন
অর্থনৈতিক সমস্যার পর যুক্তরাজ্যের নির্বাচনকে ঘিরে অন্যতম প্রধান আলোচনার বিষয় হলো অভিবাসন ইস্যু। এবারের নির্বাচন অভিবাসীদের জন্য কতটা কঠোর হতে পারে তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে নানা রকম আলোচনা।
ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছে কিয়ার স্টারমার। এবারের নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অজর্নের পাশাপাশি নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে বিরোধী দল লেবার পার্টি। আর এই নির্বাচনী ফলাফলে যুক্তরাজ্যে টানা ১৪ বছর পর ক্ষমতা হাতছাড়া হলো কনজারভেটিভ পার্টির।
যুক্তরাজ্যের জাতীয় পরিসংখ্যান কার্যালয়ের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল মাইগ্রেশন দপ্তরের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২২ সাল জুড়ে অর্থাৎ, কনজারভেটিভ পার্টি ক্ষমতায় থাকা কালে রেকর্ড সংখ্যক আন্তর্জাতিক অভিবাসী যুক্তরাজ্যে ঢুকেছে। যাদের অনেকেই গিয়েছে তাদের ক্যারিয়ার ও শিক্ষার জন্য। এছাড়াও, একটি বড় অংশ অবৈধভাবে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্যই অবস্থান করছেন যুক্তরাজ্যে।
ঋষি সুনাক ক্ষমতায় থাকাকালে যুক্তরাজ্যে এত অভিবাসী ঢুকে পরে যে, অভিবাসীর সংখ্যা কমাতে আশ্রয়প্রার্থীদের রুয়ান্ডায় পাঠাতে চেয়েছিল তার সরকার। এমনকি, বিতর্কিত রুয়ান্ডা বিল পাস করে এর পেছনে ২৪ কোটি পাউন্ড ইতোমধ্যে খরচও করে ফেলেছিলেন তারা।
এমন অবস্থায় আগাম নির্বাচনের ডাক দেন ঋষি সুনাক। আর সেই নির্বাচনে নির্বাচিত হলেন লেবার পার্টি। যারা বরাবরই অভিবাসন নীতিতে কঠোর।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের লেবার পার্টির সদস্যরা অভিবাসন নীতিতে এখনও পর্যন্ত তাদের বক্তব্যে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, কোন দণ্ডিত ব্যক্তি যেন যুক্তরাজ্যের ভূখণ্ডে থাকতে পারবে না। যে সমস্ত দেশ থেকে তারা অপরাধ করে এসেছেন সেই সমস্ত দেশের সঙ্গে চুক্তি করে দ্রুত তাদেরকে দেশে ফেরত পাঠানোর নীতিতে বিশ্বাসী লেবার পার্টি।
এমন পরিস্থিতে বাংলাদেশের যারা যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন তারা কি করবেন? আর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সাথে অবৈধ ভাবে জড়িত থাকা কিছু মানুষের জন্য সাধারণ বাংলাদেশি অভিবাসীদের ওপর কোন প্রভাব পরবে কিনা সেটিই এখন চিন্তার বিষয়।
বাংলাদেশি অভিবাসী যুক্তরাজ্য প্রধানমন্ত্রী লেবার পার্টি
মন্তব্য করুন
যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে লেবার পার্টির পক্ষ থেকে পঞ্চম ব্যক্তি হিসেবে কিয়ার স্টারমার দলকে বিরোধী দলের আসন থেকে ক্ষমতায় নিলেন। ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে বড় ধরনের ধাক্কা খাওয়া লেবার পার্টি ২০২৪ সালে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করল। তবে ডাউনিং স্ট্রিটের পথে স্টারমারের যাত্রা যে সহজ ছিল না, তা হার্টলপুল উপনির্বাচনের ফলাফল মনে করিয়ে দেয়।
অর্থনৈতিক সমস্যার পর যুক্তরাজ্যের নির্বাচনকে ঘিরে অন্যতম প্রধান আলোচনার বিষয় হলো অভিবাসন ইস্যু। এবারের নির্বাচন অভিবাসীদের জন্য কতটা কঠোর হতে পারে তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে নানা রকম আলোচনা। ইতিমধ্যে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছে কিয়ার স্টারমার। এবারের নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অজর্নের পাশাপাশি নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে বিরোধী দল লেবার পার্টি। আর এই নির্বাচনী ফলাফলে যুক্তরাজ্যে টানা ১৪ বছর পর ক্ষমতা হাতছাড়া হলো কনজারভেটিভ পার্টির।